ষষ্ঠ কিস্তি পড়তে ক্লিক করুন
৭.
আধখানা চাঁদ হারিয়ে গেল না সে ফ্ল্যাটে ঢোকার পরও।
ফ্ল্যাটের ঝুল বারান্দা থেকে সে আর বউ চাঁদ দেখল।
সেলার থেকে সে হুইস্কি নিয়েছে। রো। গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে বলল, ‘আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, বউ। ’
‘আবার!’
‘সত্যি সত্যি অনেক ভালোবাসি, বউ। ’
‘অ্যাই! অ্যাই! দেখা যায় কিন্তু!’
কোত্থেকে দেখা যায়?
দৃশ্যের ফ্ল্যাট থেকে।
দেখুক না তারা!
‘এই ফ্ল্যাটে একটা ক্লাউন থাকে, দেখেছো?’
‘দেখেছি। ফ্ল্যাটে এই একটাই পুরুষ মানুষ মনে হয়। মেয়েগুলোও কী রকম একটু। ’
‘কী রকম?’
‘বাজে মেয়ে। ’
‘বাজে মেয়ে! কে বলল তোমাকে?’
‘বোঝা যায়। কেন তোমার কি ভালো মেয়ে মনে হয় নাকি? তুমি কি ওদের কাণ্ডকীর্তি দেখেছো?’
‘কাণ্ডকীর্তি! কোত্থেকে দেখব?’
‘বিশ্বাস নাই, বাবা। আমি যখন বাসায় থাকি না লুকিয়ে-চুরিয়ে দেখো হয়ত। ’
‘এতদিনে আমার সম্পর্কে তাহলে এই ধারণা হয়েছে তোমার?’
‘এই দেখো। সিরিয়াস হয়ে গেলেন উনি! আরে আজব তো!’
‘আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, বউ। ’
‘তুমি একটা পাগল!’
‘কী বললে? কী বললে তুমি? কী বললে? আমি পাগল!’
‘কী হয়েছে? আজব তো! অ্যাই! এ রকম করছো কেন তুমি? কী হয়েছে?’
কী হয়েছে?
কানাকে কানা বলিও না।
খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না।
পাগলকে?
বলিও?
বললে পাগল কী করবে?
ক্রিয়েটিভ হয়ে উঠবে?
ক্রিয়েটিভ ঘটনা ঘটাবে?
স্বাভাবিক নয় কি?
পাগলামি।
ক্রিয়েটিভিটি।
ক্রিয়েটিভিটি কি পাগলামি না?
পাগলামি।
পাগলামি কি তবে ক্রিয়েটিভিটি না?
ক্রিয়েটিভ ব্যক্তিমাত্রই কিছু না কিছু মাত্রায় পাগল।
কার বাণী এটা?
যে মহাত্মার, তিনি কী ছিলেন?
পাগল!
আরও একটা পেগ নিল সে।
ক্রিয়েটিভিটি এবং পাগলামি এ নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায়ই একটা সংক্ষিপ্ত সেশন হয়েছে ছাদে। সে আর শাকিল ছিল সেশনে। নেট সেভি শাকিল ডটকম। দুনিয়ার খবর রাখে।
বলল, ‘তুই কি কিছু ভয় পাস?’
‘কিছু ভয়? হ্যাঁ, পাই। অনেক ভয়ও পাই। ’
‘কী ভয় পাস?’
‘কী ভয় পাই মানে? সাপ ভয় পাই, ব্যাঙ ভয় পাই, মাকড়সা ভয় পাই, তোকে ভয় পাই। ’
‘আরে এসব না। আমি আসলে তোকে বোঝাতে পারিনি। মানে কোনো কারণ ছাড়াই তোর কি হঠাৎ হঠাৎ ভয় ভয় লাগে?’
‘হঠাৎ হঠাৎ ভয় ভয়? হ্যাঁ, লাগে। ’
‘মাঝেমধ্যে তুই কি উল্টাপাল্টা দৃশ্য দেখিস?’
উল্টাপাল্টা কী দৃশ্য?
দৃশ্যের ফ্ল্যাটের দৃশ্য?
‘হ্যাঁ, দেখি। ’
‘মাঝেমধ্যে উল্টাপাল্টা শব্দ শুনিস?’
দৃশ্যের ফ্ল্যাটের তন্বী শ্যামা অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলে ফোনে। শোনা যায়।
‘হ্যাঁ, শুনি। ’
‘তাহলে তুই ক্রিয়েটিভ পারসন। ’
‘বুঝলাম না। ক্রিয়েটিভিটির সঙ্গে কী সম্পর্ক এসবের?’
‘আরে ব্যাটা! এসব হলো সিজোফ্রোনিয়ার লক্ষণ। আমেরিকানরা বলে স্কিৎসোফ্রেনিয়া। স্কিৎসোফ্রেনিয়া হলে কী হয়? কোনো কারণ ছাড়া ভয় পায় পেশেন্ট। উল্টাপাল্টা জিনিস দেখে। উল্টাপাল্টা জিনিস শোনে। ’
‘আমি পেশেন্ট?’
‘তুই পেশেন্ট না, ক্রিয়েটিভ পারসন। আরে ব্যাটা, দুনিয়ার সব ক্রিয়েটিভ মানুষেরই অল্পবিস্তর স্কিৎসোফ্রেনিয়া থাকে। ’
‘রবীন্দ্রনাথের ছিল?’
‘রবীন্দ্রনাথ? রবীন্দ্রনাথ মানুষ ছিলেন না। জীবনানন্দ দাশ মানুষ ছিলেন এবং আমি শিওর, স্কিৎসোফ্রেনিক ছিলেন। স্কিৎসোফ্রেনিক না হলে কেউ রাত্রি-র মতো কবিতা লেখে না। ’
‘তুই কি স্কিৎসোফ্রেনিক?’
‘আমি তোদের বলিনি ব্যাটা, পাগলাগারদে আমার জন্ম হয়েছে। আমার মা ছিল উন্মাদিনী। বাবা উন্মাদ। স্কিৎসোফ্রেনিক হওয়াটা তো আমার জন্মগত অধিকারের মধ্যে পড়ে, নাকি?’
স্কিৎসোফ্রেনিক অর্থে তবে শাকিল ক্রিয়েটিভ।
কিন্তু কতটা?
এ রকম কিছু ঘটাতে পারবে?
শাকিল বা ভাই?
মামুন, তরলদা বা ঠাকুর?
বগা ওয়াদুদ?
দূর সেই মফস্বলের মাতাল সহিদুল?
ক্লান্ত অমিয়াংশু?
হা! হা! হা!
এত ক্রিয়েটিভ না তারা। চিন্তাও করবে না। কী? তীব্র নস্টালজিয়া মাথায় নিয়েও এ রকম কিছু ঘটানো সম্ভব? নস্টালজিয়া কী? বাংলা একাডেমির ইংলিশ টু বাংলা অভিধানের ৫১৪ পৃষ্ঠায় আছে। নস্টালজিয়ার বাংলা অর্থ হলো গৃহকাতরতা, অতীত বিধুরতা। নস্টালজিক কে হয় না? ঠাকুর, ভাই, তরলদা, মামুন, শাকিল সবাই হয়। কিন্তু মাথায় নস্টালজিয়া নিয়ে...।
হা! হা! হা!
এতটা তাদের কম-ক্রিয়েটিভ মাথায় ঢুকবে না।
আই কিউ কত হবে একেকজনের?
হা! হা! হা!
রাত এখন...?
১টা ৫২।
পার্কিংয়ে গাড়িটা আছে এখনও।
আবু ইয়ামিনের নীল রঙের গাড়ি।
আবু ইয়ামিন এখনও তাহলে হাউজিং থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়নি।
আছে কোথায়?
অদৃশ্য হয়ে গেছে নাকি?
আবু ইয়ামিনের কথা ভাইরা জানেন না। নাকি জানেন? তাকে বলেন না?
নিজে থেকে সে তাদের কখনও বলেনি।
কাকে বলে?
আমার বউটা প্রেম করে।
বউয়ের প্রেমিক আবু ইয়ামিন।
আবু ইয়ামিন এখন আমাদের ফ্ল্যাটে।
তবু আমি ভালোবাসি আমার বউকে।
কাকে বলে?
কে তাকে বলে?
‘আপনি একটা বোকা! বোকা! বোকা!’
যে বলে, তাকে একটা কল দেবে এখন?
না, মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে।
পাশের ঘরে গিয়ে আরেকটা স্টিক?
না, মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে।
বউ আবার খাটে উঠে বসে আছে।
উল্টাপাল্টা দৃশ্য।
স্কিৎসোফ্রেনিক সে?
এবং ক্রিয়েটিভ।
বউ বলল, ‘কী হয়েছে?’
অবাস্তব। কী করে আর কথা বলবে বউ?
ঠাণ্ডা ঘর কী মুহূর্তে আরও ঠাণ্ডা হয়ে গেল?
ভয় পেল সে?
পেল।
কিন্তু সে ক্রিয়েটিভ।
অল্প হাসল।
‘তুমি কি বৃষ্টির জন্মভূমি, বউ?’
বউ বলল, ‘কী-ই-ই?’
‘তুমি কি... বৃষ্টির... জন্মভূমি?’
‘পরে বলব। এখন ঘুমাই। ঘুম পাচ্ছে। ’
ঘুমিয়ে পড়ল বউ।
হাই তুলল সে।
তারও ঘুম পাচ্ছে।
কিন্তু সে এখন ঘুমাবে না।
মাইলস টু ওয়াক বিফোর স্লিপ।
দ্য উডস আর লাভলি, ডার্ক অ্যান্ড ডিপ
বাট আই হ্যাভ প্রমিসেস টু কিপ
অ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ
অ্যান্ড মাইলস টু...
হা! হা! হা!
কাল একটা চমৎকার ঘুম দেওয়া যাবে।
ছাদে জমায়েত করে।
কুল একটা ঘুম।
৮ম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৫