আমাদের বসবাস পৃথিবী নামক একটি গ্রহে। পৃথিবী একটি গ্রহ এবং এটি সূর্যকে ঘিরে ঘোরে, সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়।
তোমরা নিশ্চয়ই জানো সূর্য এবং তার আটটি গ্রহ নিয়ে এই সৌরজগৎ। তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছ যে এই সৌরজগতে পৃথিবী ছাড়া আর কোথাও মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণী আছে কি-না? পৃথিবী ছাড়া অপর সাতটি গ্রহ হয় খুব ঠাণ্ডা, নয়ত খুবই গরম, কিংবা গ্যাসের প্রকাণ্ড গোলক। ফলে সেসব গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণী বিকশিত হতে পারেনি। বুদ্ধিমান প্রাণী অস্ত্রের ব্যবহার জানে, প্রকৃতিকে নিজেদের খেয়াল মতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সৃষ্টি করতে পারে, নিজেদের রোগ বালাই সারাতে পারে, সভ্যতার পতন ঘটাতে পারে, প্রকৃতিকে আরো ভালো করে বুঝতে পারে, সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করতে পারে। বুদ্ধিমত্তা থাকলে এরকম আরো অনেক কিছু করা যায়। এই মহাজগতে থাকাটা একটা দারুণ ব্যাপার!
মহাকাশ থেকে এই পৃথিবীকে নীল সাগর আর সাদা মেঘের আঁচড়ে অদ্ভুত সুন্দর দেখায়। এই ছবিটা আমরা দেখেছি মহাশূন্য থেকে তোলা ছবিতে। মহাশূন্যে মানুষ যে অসংখ্য নভোযান পাঠিয়েছে তারা পৃথিবীর অনেক ছবি তুলেছে। সেইসব ছবি গুগল সার্চ এঞ্জিনে খুঁজলে সহজেই তোমরা দেখতে পাবে। খেয়াল করবে, পৃথিবীকে নীল বলের মতো দেখায়। বিখ্যাত বিজ্ঞানী কার্ল সেগান তাই পৃথিবীকে আদর করে বলেছিলেন, “পেল ব্লু ডট” বা নিষ্প্রভ নীলাভ বিন্দু। একটা বিখ্যাত ছবি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি এভাবে পৃথিবীর পরিচয় লেখেন। ১৯৭৭ সালে ন্যাসা থেকে একটি নভোযান পাঠানো হয় সৌরজগৎকে ভালোভাবে নিরীক্ষা করতে। এই নভোযানটির নাম ভয়েজার-১। এই নভোযানটি যখন সৌরজগৎ ছাড়িয়ে আরো দূরে আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থানে ঢুকতে যাচ্ছিল, তখন এর ক্যামেরা দিয়ে শেষবারের মতো পৃথিবীর একটি ছবি তোলা হয়। সেদিন ছিল ভালোবাসা দিবস, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ সাল। এই সেই ছবি। তখন পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৬ বিলিয়ন কিলোমিটার। এই সংখ্যাটার মানে বোঝো—ছয় বিলিয়ন? ৬ সংখ্যাটির পরে ৯টি শূন্য। ততো কিলোমিটার। এর সাথে তেতুলিয়া থেকে টেকনাফের দূরত্ব (৯১৪ কিলোমিটার) তুলনা করে দেখ। প্রায় ৬০ লক্ষ গুন! এতো দূরে মানুষের পাঠানো কৃত্রিম মেশিন সেটাই প্রথম ছিল।
নীলচে আলোর ঐ ফুটকিতেই তোমার এবং আমার, সেই সাথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সোমালিয়ার জলদস্যু, বিল গেটস, প্রফেসর মুহম্মদ ইউনুস, স্টিফেন হকিং কিংবা জাফর ইকবাল স্যারের বসবাস। এখানেই লক্ষ বছর ধরে মানুষ বাস করছে। অন্য প্রাণীরাও বাস করছে। জন্মাচ্ছে, আবার মরে যাচ্ছে। তিমি মাছেরা সাঁতরে বেড়াচ্ছে, উটপাখি চরে বেড়াচ্ছে। এই ছোট্ট ফুটকিতে আরও ছোট জায়গা-জমি কিংবা মান-অভিমানের জন্য মানুষ যুদ্ধ করেছে। এখনো করছে। কি তুচ্ছই না মানুষ, আর তার অহংকার।
কিন্তু পৃথিবীকে নীল দেখায় কেন বলতো? পানির জন্য। পৃথিবীতে সাগর মহাসাগরের ক্ষেত্রফল মোট ক্ষেত্রফলের প্রায় ৭০%। অর্থাৎ পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগের বেশির ভাগই পানি। আর কে না জানে সমুদ্রের রঙ নীল! কিন্তু নীল কেন? কেন আবার, আকাশের রং নীল, তোমরা বলবে! আকাশের রং নীল কেন? তার কারণ বাতাসে যে প্রচুর ধূলিকণা থাকে তাতে সূর্যের আলো এসে পড়লে সেটা ছড়িয়ে পড়ে। একে বলে র্যালে বিক্ষেপণ। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী লর্ড র্যালে (প্রকৃত নাম জন উইলিয়াম স্ট্রাট, ১৮৪২-১৯১৯) বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন যে, আপতিত আলোর ঢেউয়ে যাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য (পরপর দুটো ঢেউয়ের চূড়ার দূরত্ব) ছোট, তারা ছড়াবে বেশি। যেহেতু সূর্যের আলোর মধ্যে নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট, তাই তারা বেশি ছড়ায়। এজন্য আকাশটা নীল দেখায়। কিন্তু সেটাই সব নয়। পানির মধ্যে এমন সব কণা বা জৈব অণু থাকে যাদের মিলিত ফলে সমুদ্রকে নীল দেখায়। ছাদ ঢাকা ইনডোর সুইমিং পুলের তলায় সাদা টালি দেওয়া থাকলেও পানির রং নীল দেখায়। আর পৃথিবীকে নীল দেখায় তার কারণ পৃথিবীতে মহাসমুদ্রের ভাগ বেশি থাকে।
পৃথিবীতে এতো পানিই বা এলো কী করে? কেন বৃষ্টি হয়ে, তুমি বলবে। বৃষ্টির পানি এলো কিভাবে? মহাসমুদ্রগুলি থেকে। তাদের পানি? বৃষ্টি থেকে। হ্যা ঠিক আছে, তোমরা পানিচক্রের কথা বলছ। কিন্তু চক্রের মধ্যে এতো পরিমাণ পানি এলো কেমন করে? বিজ্ঞানীরা বলেন উল্কা আর গ্রহাণু থেকে। অনেককাল আগে পৃথিবীতে বহু সংখ্যক উল্কা ও গ্রহাণু পড়েছিল। তারাই পানি নিয়ে আসে। আর পৃথিবীতে আগে থেকেই পানি তো ছিলই।
এই নীল পৃথিবীতেই আমরা বাস করি। সমস্ত সৌরজগতে আমরা অনেক জায়গাতেই যেতে পারি, কিন্তু বাস করতে পারব না। একমাত্র পৃথিবীর আবহাওয়াই আমাদের জন্য আদর্শ। এখানে পানিকে তরল আকারেও পাওয়া যায়, বরফ আকারেও পাওয়া যায়, মেঘের মধ্যে বাষ্প আকারেও পাওয়া যায়। এখানে দিনেরাতে গড় তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। যদিও একেক মহাদেশে, একেক ঋতুতে, একেক অক্ষাংশে, একেক উচ্চতায়, সমুদ্রের অবস্থান, বাতাসের গতিবেগ, জলবায়ুর রকমফেরের কারণে তাপমাত্রা একেক রকম হয়। কিন্তু সব মিলিয়ে গড় তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি। এই তাপমাত্রা আমরা সহ্য করতে পারি। গড় তাপমাত্রা অন্যরকম হলে আমাদেরকে কৃত্রিম ব্যবস্থার (যেমন এয়ারকুলার বা হিটার) সাহায্য নিতে হতো। যেমন গরমের দিনে আমরা ফ্যান চালাই। ফ্যান একটি মেশিন যা আমাদের কষ্ট লাঘব করে। এটা বুদ্ধিমত্তার ফলাফল।
যেহেতু পৃথিবী আমাদের একটাই তাই এর যত্ন নেওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব। তেমাকে যদি একটি সুন্দর গোলাপ ফুল দেওয়া হয়, তাহলে তুমি নিশ্চয়ই তার যত্ন নেবে! কারণ বুদ্ধিমানরা সুন্দর জিনিসের যত্ন নেয়। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা বুদ্ধিমান তারা নিশ্চয়ই পৃথিবীর যত্ন নেবে! কারণ একমাত্র বোকারাই গাছের যে ডালে বসে, সেই ডালটা কাটতে চাইবে। ...
ই-ম্যাগাজিন থেকে পুরো লেখা পড়তে ক্লিক করুন। অথবা বাজার থেকে ম্যাগাজিনের হার্ডকপি সংগ্রহ করুন
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৫