১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৮তম কিস্তি
__________________________________
একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, যা এখন অবধি আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি। প্রশ্নটি হচ্ছে—এই যে মানুষের সাম্যকে ব্যহত করার অব্যাহত প্রচেষ্টা, তা কেন? প্রক্রিয়ার বলবিদ্যার বর্ণনাও যখন হয়ে যায় ঠিক ঠিক, তখন এই যেকোন এক বিশেষ মুহূর্তে ইতিহাসকে হিমাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যাপৃত প্রচেষ্টা, তাও কেন?
এখানেই আমরা পৌঁছে যাই গোপনীয়তার কেন্দ্রে। যেমনটা আমরা দেখছি, পার্টির, সর্বোপরি ইনার, পার্টির বোধাতীত শক্তি ভর করে আছে দ্বৈতচিন্তার প্রক্রিয়ায়। কিন্তু তারও গভীরে লুক্কায়িত রয়েছে আসল অভিসন্ধি, এক সহজাত প্রবর্তনা যা নিয়ে কখনোই প্রশ্ন তোলা হয় নি, যা প্রথমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে এরপর ফেলে দেয় দ্বৈতচিন্তার প্রক্রিয়ায়, চিন্তা পুলিশ, যুদ্ধ অবিরাম, আর টিকে থাকার অন্যসব প্রয়োজনীয় কলা-কৌশল নিয়ে আসতে থাকে। এই অভিসন্ধিতে বাস্তবেই রয়েছে...
...বুঝতে পারছে কিভাবে; কিন্তু এটা বুঝতে পারেনি, কেন। অধ্যায় তিনের মতো অধ্যায় একও তাকে সত্যিকার অর্থে এমন কিছুই বলতে পারেনি যা তার কাছে ছিল অজানা, এই অধ্যায়ও স্রেফ তার কিছু পূর্ব-অর্জিত জ্ঞানকে প্রক্রিয়াগত রূপ দিয়েছে। কিন্তু এটি পড়ে, অতীতের চেয়ে আরো ভালো করে বুঝতে পারল, তার মাথা খারাপ হয়ে যায়নি...
নৈঃশব্দ্যেই সতর্ক হয়ে উঠল উইনস্টন, ঠিক যেভাবে একটি শব্দ কাউকে সতর্ক করে দেয়। তার মনে হলো কিছু সময় ধরে জুলিয়া পুরোই শক্ত হয়ে আছে। তার পাশেই শুয়ে আছে সে, কোমরের উপর থেকে অনাবৃত শরীর, হাতের বালিশে ঠেসে রাখা গাল, একটি কালচে দাগ তার দুচোখ ঘিরে রেখেছে। বক্ষদেশ ওঠানামা করছে ধীর-শান্ত লয়ে।
‘জুলিয়া’
কোনো সাড়া নেই।
‘জুলিয়া, জেগে আছো?’
সাড়া নেই। ঘুমিয়ে পড়েছে। উইনস্টন বইটি বন্ধ করল, সাবধানে মেঝের ওপর রাখল, শুয়ে পড়ল আর চাদরটি দুজনেরই গায়ের ওপর টেনে দিল।
তার মনে হলো, এখনো মূল গোপনীয়তাটি জানতে পারেনি। বুঝতে পারছে কিভাবে; কিন্তু এটা বুঝতে পারেনি, কেন। অধ্যায় তিনের মতো অধ্যায় একও তাকে সত্যিকার অর্থে এমন কিছুই বলতে পারেনি যা তার কাছে ছিল অজানা, এই অধ্যায়ও স্রেফ তার কিছু পূর্ব-অর্জিত জ্ঞানকে প্রক্রিয়াগত রূপ দিয়েছে। কিন্তু এটি পড়ে, অতীতের চেয়ে আরো ভালো করে বুঝতে পারল, তার মাথা খারাপ হয়ে যায়নি। সংখ্যা লঘু হয়ে, এমনকি স্রেফ একজনের সংখ্যালঘু হওয়ার পরেও সে পাগল হয়ে যায়নি। এখানে সত্য আছে, আছে অসত্যও, আর আপনি যদি গোটা বিশ্বের বিপরীতে দাঁড়িয়েও সত্যকে ধারণ করতে চান, আপনি পাগল হয়ে যাবেন না। অস্তগামী সূর্যের একটি হলুদ রশ্মি জানালার পথ ধরে সোজা বালিশের ওপর পড়েছে। চোখ বন্ধ করল সে। মুখমণ্ডলে আর গায়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকা মেয়েটির শরীরে ছড়িয়ে পড়া সূর্যালোক তাকে শক্তি দিল, ঘুম এনে দিল, আরো দিল এক দৃঢ়তার অনুভূতি। সে নিরাপদে আছে, সবকিছুই আছে ঠিকঠাক। বিড়বিড় শব্দে, ‘সুস্থ বিচারবুদ্ধিতা অংক কষে বলার নয়’ একথা বলতে বলতে, আর এই কথায় যে রয়েছে গভীর বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ সে কথা ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়ল।
অধ্যায় ১০ |
দীর্ঘ ঘুম হয়েছে, ঘুম ভেঙ্গে এমন একটা অনুভূতিই হচ্ছিল তার। কিন্তু নজর পড়তেই পুরোনো আমলের ঘড়িটি বলে দিল রাত মোটে সাড়ে আটটা। মটকা মেরে আরো কিছুক্ষণ পড়ে থাকল সে; তখনই নিচের আঙ্গিনা থেকে ভেসে আসলো দরাজ গলায় গাওয়া গানের কলি:
নিষ্ফল এক অলীক কল্পনা ছাড়া কিছু নয়,
ফুরিয়ে গেল যেভাবে এপ্রিল ফুরোয়
কিন্তু সেই চাহনি, সেই শব্দ আর স্বপ্ন
হরণ করে নিয়ে যায় আমার হৃদয়।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৭০তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৬৯) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।