১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৯তম কিস্তি
__________________________________
এই অর্থহীন সঙ্গীত বুঝি তার জনপ্রিয়তা ধরেই রেখেছে। এখনো আপনি এখানে সেখানে শুনতে পাবেন। ঘৃণাগীতকেও ছাপিয়ে গেছে এই গান। গানের শব্দেই ঘুম ভাঙল জুলিয়ারও। লম্বা হাই তুলে মনের সুখে হাত পা ছুঁড়ে বিছানা ছাড়ল সে।
‘খিদে লেগেছে’—বলল সে। ‘চলো আরেকটু কফি বানাই। এই যা! স্টোভতো নিভে গেছে আর পানিও পুরো ঠাণ্ডা। ’ স্টোভটি তুলে ঝাকি দিল। ‘আরে এর তেলও তো ফুরিয়ে গেছে দেখছি!’
জুলিয়া এসে পাশে দাঁড়াল, দুজনই অনেকটা মুগ্ধ হয়ে নিচের শক্ত-সামর্থ নারীটির দিকে তাকিয়ে। মহিলাটির চারিত্রিক ধরন ধারণ, মোটা বাহুদ্বয়ের ওঠানামা, মাদী ঘোড়ার মতো শক্ত-নধর নিতম্বদ্বয়ের বল্লরী দেখতে দেখতে প্রথমবারের মতো তার মনে হলো, বেশ তো সুন্দরী এই নারী! সন্তান জন্ম দিয়ে দিয়ে ফুলে যাওয়া বিশাল বপু কাজ আর শ্রমে শক্ত সুঠাম হয়ে বুড়ো শালগমে রূপ নেওয়া পঞ্চাশোর্ধ এক নারীকে সুন্দরী মনে করার মতো ঘটনাটিও তার জীবনে প্রথমই ঘটল
‘বুড়ো চ্যারিংটনের কাছ থেকে একটু ধার পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই, না কি?’
‘অদ্ভুত লাগছে, পুরো তেলভর্তি ছিল স্টোভটি! যাক কাপড় তো পরি’—বলেই চলল জুলিয়া। ‘মনে হচ্ছে একটু ঠাণ্ডা পড়েছে। ’
উইনস্টনও বিছানা ছাড়ল, আর কাপড় পরে নিল। নিচে শ্রান্তিহীন কণ্ঠ তখনও গেয়ে চলছে:
তারা বলেছিল সবই হবে ঠিক
বলেছিল, তুমিও ভুলে যাবে সব
কিন্তু যে হাসি আর কান্না কেঁদেছি এতটা বছর
আমার হৃদয় আজো বিদীর্ণ হয় তাতে...
জানালায় ঝুলিয়ে রাখা আলখেল্লার বেল্ট তুলে বাঁধল সে। বাড়িগুলোর ওপারে সূর্য হেলে পড়েছে, আঙ্গিনায় আর নেই ঝলকানো রোদ। পাথুরে মেঝেটা ভেজা, যেন কিছুক্ষণ আগেই ধুয়ে রাখা হয়েছে। তার মনে হলো, ধুয়ে দেওয়া হয়েছে যেন আকাশটাকেও। পরিচ্ছন্ন হালকা নীল আকাশটা চিমনিগুলোর মাঝ দিয়ে উঁকি মারছে। শ্রান্তিহীন অবিরাম যাওয়া আর আসার মাঝে নারীটি মুখে একবার ছিপি পরছে একবার খুলছে আর তাতে থেমে থেমে ভেসে আসছে গানের সুর, সাথে একের পর এক ডায়াপার ঝুলছে শুকোনোর রশিতে। উইনস্টনের মনে প্রশ্ন জাগে, ধোপার কাজেই কি জীবিকা এই নারীর? নাকি বিশ-ত্রিশটা নাতি-নাতনির কোনো সংসারের কৃতদাস সে? জুলিয়া এসে পাশে দাঁড়াল, দুজনই অনেকটা মুগ্ধ হয়ে নিচের শক্ত-সামর্থ নারীটির দিকে তাকিয়ে। মহিলাটির চারিত্রিক ধরন ধারণ, মোটা বাহুদ্বয়ের ওঠানামা, মাদী ঘোড়ার মতো শক্ত-নধর নিতম্বদ্বয়ের বল্লরী দেখতে দেখতে প্রথমবারের মতো তার মনে হলো, বেশ তো সুন্দরী এই নারী! সন্তান জন্ম দিয়ে দিয়ে ফুলে যাওয়া বিশাল বপু কাজ আর শ্রমে শক্ত সুঠাম হয়ে বুড়ো শালগমে রূপ নেওয়া পঞ্চাশোর্ধ এক নারীকে সুন্দরী মনে করার মতো ঘটনাটিও তার জীবনে প্রথমই ঘটল। কিন্তু ব্যাপারটা এমনই, অন্তত তার মন তাই-ই বলছে। আর কেনই নয়? গ্রানাইটের মতো পেটানো শরীর, আঁচড়কাটা লাল ত্বক মিলিয়ে যেন তরুণীর দেহ বল্লরীই তুলছে সে। গোলাপের গাছে তো গোলাপের ফলও ধরে। ফুলের চেয়ে ফলকে কেনই ছোট করে দেখা?
‘নারীটি সুন্দরী’—অস্ফুট শব্দে উচ্চারণ তার।
‘নিতম্বের ঘের এক মিটার হবে, আমার বিশ্বাস’—বলল জুলিয়া।
‘ওতেই সৌন্দর্যটা ফুটে উঠেছে’—বলল উইনস্টন।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৭১তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৭০) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।