১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৭০তম কিস্তি
__________________________________
জুলিয়ার কোমল কটিদেশ দুবাহুতে জড়াল সে। নিতম্ব থেকে হাঁটু অবধি তারও বেশ মাংসল। কোনো সন্তান জন্ম নেবে না তাদের এই সব মিলন থেকে। এই একটি কাজ তারা কখনোই করতে পারবে না। কেবল মুখের বুলি আওড়িয়ে, মন দেওয়া নেওয়া করে, গোপন ইচ্ছাটি বাঁচিয়ে রেখে সময় পার করে দেবে তারা। নিচে কর্মরত ওই নারীর কোনো মন নেই, তার কেবল আছে দুই শক্ত-সামর্থ্য বাহু, উষ্ণতায় ভরা হৃদয়, আর অতি উর্বরা এক গর্ভ। তার কৌতূহল হলো জানার, ক’টি সন্তানের জন্ম দিয়েছে এই নারী! খুব সহজেই বলে ফেলা যায় অন্তত পনেরটি।
আশা যদি কিছু থেকে থাকে তা ওই প্রোলদের মাঝেই প্রোথিত!
... আশা যদি কিছু থেকে থাকে তা ওই প্রোলদের মাঝেই প্রোথিত! এই বইটির শেষাবধি না পড়েই সে জেনে গেছে, এটাই হতে চলেছে গোল্ডস্টেইনের চূড়ান্ত বাণী। ভবিষ্যতের মালিক এই প্রোলরা। আর সে কতটাই বা নিশ্চিত করে বলতে পারে, যখন তাদের সময় আসবে তখন এই যে পার্টির বিশ্ব হিসেবে যে বিশ্ব তারা গড়েছে তাতে সে, উইনস্টন স্মিথ, নিজেই হয়ে উঠবে না এক ভিন গ্রহের মানুষ?...
তারও ছিল ক্ষণকালের ফুটন্ত সময়, হতে পারে বছর খানেক বন্য গোলাপের মতোই ফুটেছিল সে, এরপর হঠাৎ তার ফুলে পড়েছে পরাগ রেণু তাতে ফল এসেছে, এরপর ধীরে ধীরে দেহখানি হয়ে উঠেছে আরো শক্ত, লাল আর মোটা, এরপর তার জীবন জড়িয়ে গেছে ধোলাই, সারাই, সেলাই, রান্নাবান্না আর ঝাড়ামোছার কাজে, প্রথমে নিজের সন্তানদের জন্য পরে নাতি-নাতনীদের জন্য টানা ত্রিশটি বছর, অবিরাম। আর এত কিছুর পরেও সে এখনো গান করেই চলেছে। নারীটির জন্য রহস্যময় এক শ্রদ্ধাবোধ সে অনুভব করল, যা মিশে একাকার হয়ে গেল চিমনির পাত্রগুলোর পেছনে অসীম দূরত্বে ক্রমেই প্রলম্বিত হয়ে পড়া ফ্যাকাশে মেঘহীন আকাশের পথে। এবার তার ভাবনায় এলো—সবার জন্যই আকাশটি এক, ইউরেশিয়া কিংবা ইস্টেশিয়ার আকাশও ঠিক একই রকম যেমনটি এখানে এই ওশেনিয়ায়। আর এই আকাশের নিচের মানুষগুলোও একই রকম—সর্বত্র, সারা বিশ্বে, শত কোটি মানুষ ঠিক এমনই, এভাবেই তারা একে অন্যের অস্তিত্বের বিষয়েও অজ্ঞ, ঘৃণা আর মিথ্যার দেয়াল দিয়ে তারা বিচ্ছিন্ন, আর সর্বত্রই একই রকম—মানুষ কখনোই ভাবতে শেখেনি, কিন্তু তারা তাদের হৃদয়ে, পেটে আর পেশিতে পুঞ্জিভূত শক্তি ধারণ করে চলেছে যা একদিন গোটা বিশ্বটিকেই উল্টে দেবে। আশা যদি কিছু থেকে থাকে তা ওই প্রোলদের মাঝেই প্রোথিত!
এই বইটির শেষাবধি না পড়েই সে জেনে গেছে, এটাই হতে চলেছে গোল্ডস্টেইনের চূড়ান্ত বাণী। ভবিষ্যতের মালিক এই প্রোলরা। আর সে কতটাই বা নিশ্চিত করে বলতে পারে, যখন তাদের সময় আসবে তখন এই যে পার্টির বিশ্ব হিসেবে যে বিশ্ব তারা গড়েছে তাতে সে, উইনস্টন স্মিথ, নিজেই হয়ে উঠবে না এক ভিন গ্রহের মানুষ? হ্যাঁ, তাই হবে কারণ একদিন এই বিশ্ব যাবে সুস্থ মানসিকতার মানুষদের দখলে। যেখানে সাম্য সেখানেই সুস্থতা। খুব দ্রুত কিংবা আরও পরে একদিন সেটাই ঘটবে, শক্তি পরিবর্তিত হবে সচেতনতায়। প্রোলরা অবিনশ্বর, আঙ্গিনায় ওই বলশালী তনুখানি একবার যে দেখবে তার আর এ কথা অস্বীকার করার জো থাকবে না। একদিন অবশেষ তারা জেগে উঠবে। আর যতদিন না সেটা ঘটবে, হতে পারে হাজার হাজার বছর লেগে যাবে, তারা সকল জঞ্জালের বিরুদ্ধে পাখিদের মতো সারাবেলা জেগে থাকবে, শরীর থেকে শরীরে পার করে দেবে সেই সচেতনতার শক্তি যা পার্টি কখনোই করেনি আর যে শক্তিকে পার্টি মেরে ফেলতেও পারেনি।
‘তোমার মনে আছে’—বলল সে, ‘সেই যে প্রথম দিন জঙ্গলের কিনারে আমাদের জন্য পাখিটি গাইছিল?’
‘ওর সেই গান আমাদের জন্য ছিল না’—বলল জুলিয়া। নিজের মনে নিজেকে তৃপ্ত করতেই গাইছিল সে। কেবল তাই নয়, ওটা ছিল পাখিটির স্রেফ গেয়ে যাওয়া। ’
দ্বিতীয় খণ্ডের ৭২তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৭১) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।