ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৭২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৭২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৭১তম কিস্তি
__________________________________

পাখিরা গায়, প্রোলরাও গায়, কিন্তু পার্টির নেই কোনো গান গাওয়া। সারা বিশ্ব জুড়ে, এই লন্ডনে, নিউইয়র্কে, আফ্রিকায়-ব্রাজিলে, যুদ্ধক্ষেত্রের ওপারের সেই রহস্যঘেরা নিষিদ্ধ ভূমিতে, প্যারিস ও বার্লিনের রাস্তায়, রাশিয়ার বিস্তীর্ণভূমির গ্রামে গ্রামে, চীন ও জাপানের বাজারে বাজারে—সর্বত্রই একই অজেয় পেটানো শরীর দাঁড়িয়ে আছে, সন্তান জন্ম দিতে দিতে আর কাজ করতে করতে যা আরও দৈত্যাকায় রূপ নিয়েছে কিন্তু এখনও গেয়ে চলেছে গান। ওই শক্ত-সামর্থ নিতম্বের দোলা থেকেই সচেতনতার এক দৌড় একদিন শুরু হবে। তখন তোমরা হবে মৃত, ওদেরটাই হবে ভবিষ্যত। তুমিও হতে পারবে সেই ভবিষ্যতের ভাগীদার যদি তুমি তোমার মনকে বাঁচিয়ে রাখতে পারো ঠিক যেভাবে তারা বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের শরীর আর সময় পার করে দিচ্ছে সেই মতবাদে অতি গোপনে দৃঢ় বিশ্বাস রেখে যে, দুই আর দুই মিলে চার হয়।



‘বাড়িটি ঘিরে ফেলা হয়েছে’—বলল উইনস্টন।
‘বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়েছে’—বলল লৌহ কঠিন কণ্ঠটিও।

জুলিয়ার দাঁত ঠকঠকানি তার কানে আসছে। ‘আমার মনে হয়, আমরা দুজন দুজনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিতে পারি’—বলল সে।

‘তোমরা বিদায় চেয়ে নিতে পারো’—বলল কণ্ঠটি। আর এরপর সম্পূর্ণ এক ভিন্ন কণ্ঠ ভেসে এলো, চিকন জোরালো সে কণ্ঠ, উইনস্টনের মনে হলো আগেও শুনেছে, কানে যেন লেগেই আছে।



‘আমরা মৃত’—বলল সে।
‘আমরা মৃত’—পাশে দাঁড়িয়ে তাই দায়িত্বের অংশ হিসেবে একই উচ্চারণ জুলিয়ার।

‘হ্যাঁ তোমরা মৃত’—ঠিক তখনই পেছন থেকে ভেসে এলো এক লৌহ কঠিন কণ্ঠ।

ছিটকে আলাদা হলো দুজন। উইনস্টনের অন্ত্র অবধি বরফ হিম হয়ে গেছে। জুলিয়ার চোখের কনীনিকা স্রেফ সাদাই দেখতে পেল সে। তার মুখমণ্ডল দুধহলুদ রঙ নিয়েছে। দুই গালে মাখানো রুজের প্রলেপ আরও কড়া হয়ে উঠেছে যেন ত্বকের নিচের সজীবতা থেকে তা পুরোই বিচ্ছিন্ন।

‘তোমরা মৃত’—লৌহকণ্ঠে ফের উচ্চারণ।
‘ছবিটির পিছন থেকে আসছে শব্দ’—শ্বাস ফেলে বলল জুলিয়া।
‘ছবির পেছন থেকেই’—বলল কণ্ঠটিও। ‘ঠিক যেভাবে রয়েছে সেভাবেই থাকো, আদেশ দেওয়ার আগে আর কোনো নড়াচড়া নয়। ’

শুরু হয়ে যাচ্ছে, অবশেষে তা শুরু হয়ে যাচ্ছে! একজন আরেকজনের দিকে নির্লিপ্ত তাকিয়ে থাকা ছাড়া তারা আর কিছুই করতে পারল না। জীবন নিয়ে পালিয়ে যাওয়া, দেরি হওয়ার আগেই এই ঘর ছেড়ে বের হয়ে যাওয়া—এসবের কিছুই তাদের মনে এলো না। দেয়াল থেকে ভেসে আসা কণ্ঠটিকে অমান্য করা স্রেফ অচিন্তনীয়। মট করে একটি শব্দ হলো এরপর খান খান করে ভাঙল কাচ। ছবিটি মেঝেতে পড়তেই তার পেছনে ঢেকে থাকা টেলিস্ক্রিনটি চোখে পড়ল।

‘এখন ওরা আমাদের দেখতে পাচ্ছে’—বলল জুলিয়া।

‘এখন আমরা তোমাদের দেখতে পাচ্ছি’—বলল কণ্ঠটি। ‘কামরার ঠিক মাঝখানটায় এসে দাঁড়াও। পীঠে পীঠ দিয়ে। তবে কোনো ছোঁয়াছুঁয়ি নয়। ’

তারা কেউ কাউকে ছুঁয়ে নেই কিন্তু তার মনে হচ্ছিল অনুভব করতে পারছে জুলিয়া শরীর থরথর করে কাঁপছে। অথবা হতে পারে আসলে তার নিজের শরীরই কাঁপছে। দাঁতের ঠক ঠক শব্দই কেবল আটকে রাখতে পারছে সে, কিন্তু হাঁটু একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। নিচে থেকে আসছে বুটের ভারী শব্দ, ঘরের ভিতরে এবং বাইরেও। মনে হচ্ছে আঙিনা ভরে গেছে মানুষে। পাথরের ওপর দিয়ে কিছু একটা টেনে নিয়ে যাওয়ার শব্দ পেল। নারী কণ্ঠের সেই গান থেমে গেছে অবধারিতভাবে, আগেই। দীর্ঘ একটা ঝন ঝন শব্দ এলো, বোঝা গেল কাপড় কাচার বালতিটি ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে আঙিনার ওপারে। এরপর একটি রাগান্বিত চিৎকার বেজে উঠল ঠিকই, কিন্তু শেষ হলো ব্যাথাতুর গোঙানির মধ্যদিয়ে।

‘বাড়িটি ঘিরে ফেলা হয়েছে’—বলল উইনস্টন।
‘বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়েছে’—বলল লৌহ কঠিন কণ্ঠটিও।

জুলিয়ার দাঁত ঠকঠকানি তার কানে আসছে। ‘আমার মনে হয়, আমরা দুজন দুজনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিতে পারি’—বলল সে।

‘তোমরা বিদায় চেয়ে নিতে পারো’—বলল কণ্ঠটি। আর এরপর সম্পূর্ণ এক ভিন্ন কণ্ঠ ভেসে এলো, চিকন জোরালো সে কণ্ঠ, উইনস্টনের মনে হলো আগেও শুনেছে, কানে যেন লেগেই আছে।

‘আর এখন, যখন আমরা নিজেরাই বিষয়ে উপনীত, “হিয়ার কামস অ্যা ক্যান্ডল টু লাইট ইউ টু বেড, হিয়ার কামস অ্যা চপার টু চপ অফ ইওর হেড”!’

উইনস্টনের পেছনে বিছানার ওপর কিছু একটা এসে পড়ল। একটি মইয়ের মাথা জানালা ভেঙ্গে ঢোকানো হয়েছে, তাতে কাঠামোটি ভেঙ্গে পড়ল। কেউ একজন জানালা পথে উঠে আসছে। ওদিকে সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে ওঠা বুটের মচ মচ শব্দ। এক নিমেষে গোটা কক্ষ কালো উর্দি পরা কঠোরমুখো মানুষে ভরে গেল। তাদের পায়ে লোহার পাত লাগানো বুট, হাতে হাতে মোটা লাঠি।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৭৩তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।