ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

৭৫-এর ঘটনা গণতন্ত্রের মূলে কুঠারাঘাত | হাসান আজিজুল হক

শ্রদ্ধাঞ্জলি / জাতীয় শোক দিবস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৫
৭৫-এর ঘটনা গণতন্ত্রের মূলে কুঠারাঘাত  |  হাসান আজিজুল হক

১৯৭১-এর ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হলো। হাজার হাজার বছরের এত বড় অর্জন, আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই বাঙালির জন্য চিরকালের গৌরব হয়ে থাকবে।

সেই বাংলাদেশের জন্য যে দীর্ঘ সংগ্রাম, তাতে যিনি প্রধান নায়ক ছিলেন, সবাইকে ছাপিয়ে যার মাথা সারা পৃথিবীর লক্ষ্যগত হয়েছিল, সেই নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আমরা যারা অনেকটা পথ অতিক্রান্ত করে বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছি, তারাই হয়ত মর্মে মর্মে জানব, ’৪৮, ’৫২, ’৬২, ’৬৯ ইত্যাদি গণ-আন্দোলনের ভূমিকা কতটা ছিল বাংলাদেশ অর্জনের ক্ষেত্রে। যেখানে অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানেই শেষ পর্যন্ত পুরো জাতির নেতা হিসেবে জনগণের কাছে গৃহীত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে বাংলাদেশ অর্জিত হলো, তার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ তাজউদ্দীন আহমদ।



বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বাত্মক নেতৃত্বে দেশের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন। তখনই তিনি সপরিবারে নিহত হলেন। মনে হলো যেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গোড়া ছেটে ভূপাতিত করা হলো। সেনাবাহিনী ক্ষমতায় এলো এবং সেই স্বৈরশাসক দেড়-দশক ধরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশাকে ছিন্নভিন্ন করে দিল। আমার মতে, স্বৈরশাসকের এই উত্থান এবং নির্মীয়মাণ গণতন্ত্রের মুখ থুবড়ে পড়া—এই দুটোরই সূত্রপাত হলো ১৫ আগস্টের ভয়াবহ ঘটনার পর।



বিজয় শেষে অল্পদিনের মধ্যেই বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে বিজয়ীর বেশে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এসে বাংলাদেশের হাল ধরেন। তখন বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত, সংস্কৃতির জগৎ ছিন্নভিন্ন, জনগণ নিঃস্ব; তাদের সামনে দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষ যেন অপেক্ষা করছিল। বিজয়ের আনন্দে বাংলাদেশের মানুষ সবকিছুকে অগ্রাহ্য করে দেশ পুনর্নির্মাণের কাজে আত্মনিয়োগ করে।

সংবিধান রচিত হয়; সংবিধান অনুযায়ী দেশের নাম হয় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। রাষ্ট্রীয় কয়েকটি মূল স্তম্ভ চিহ্নিত হয়। আমার মতে, আর কিছু হোক আর না হোক, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যেন দূঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মতো সময় বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় ছিলেন। দেশের চেহারা কী রূপ নিবে, তখনও জাতির পুরোপুরি জানা নেই। তখন মানুষ আশা-নিরাশায় দুলছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বাত্মক নেতৃত্বে দেশের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন। তখনই তিনি সপরিবারে নিহত হলেন। মনে হলো যেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গোড়া ছেটে ভূপাতিত করা হলো। সেনাবাহিনী ক্ষমতায় এলো এবং সেই স্বৈরশাসক দেড়-দশক ধরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশাকে ছিন্নভিন্ন করে দিল। আমার মতে, স্বৈরশাসকের এই উত্থান এবং নির্মীয়মাণ গণতন্ত্রের মুখ থুবড়ে পড়া—এই দুটোরই সূত্রপাত হলো ১৫ আগস্টের ভয়াবহ ঘটনার পর।

পারিবারিক ক্ষতির কথা আমি তুলছি না—সেটা অপূরণীয়। স্বৈরশাসন যারা প্রতিষ্ঠা করবেন, তারা মনুষ্যত্বকে সম্পূর্ণরূপে বিদায় করে দিয়ে, শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু তো নয়, পরিবারের নারী-শিশু-আত্মীয়-স্বজন কেউ বাদ পড়ল না। এমন নৃশংসতা বাংলাদেশে ঘটতে পারে, তা আমাদের কল্পনারও অতীত। এখন জানি, দেশের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে অবশ্যই বিদেশি মদদ যুক্ত হয়েছিল। ’৭৫-এর ঘটনা এজন্যই যেমন দুঃখজনক, শোকাবহ, ঠিক তেমনি একটি রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের মূলে কুঠারাঘাতও বটে।

লেখক : কথাসাহিত্যিক



বাংলাদেশ সময় : ১৯৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।