ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

একগুচ্ছ কবিতা | অরূপ রাহী

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৫
একগুচ্ছ কবিতা | অরূপ রাহী

বরষা

শিহরি শিহরি উঠি
আমি বনফুল ফুটি
এই ঘন ঘোর বরিষায়
কার কথা মনে পড়ে
এই বারিধারা ঝরে
কার কথা কে লিখিয়া যায়॥

কোন খুনি শহরের
বড় বড় দালানের
কার্নিশে জেগে ওঠা প্রাণ
কোন নারীপুরুষের
অনির্ণেয় কুরুশের
আঘাতের দান-প্রতিদান॥

আমি বনফুল গো
গান গাবে নজরুল
আমি তার শহরিয়া সই
পরজন্মের যত
জমে থাকা বেদনার
আগমনী এই গানে কই॥
 
অরূপ রাহী’র কথা
না কহিবে যথা তথা
না লইবে পরানবাখানি
নাগর-নাগর বলি
না আইবে অত অলি
কর্পোরেট কলিকালে ধনি॥

৫/৭/২০১৪


সাধুশাস্ত্র

সাধুরা বলেছে সাধু হও সাবধান
সাধু কিসে সাবধান হবে কি প্রমাণ?
বাসনা বস্ত রূপে শারীরিক বটে
মুকতি বিহনে সাধু কি রূপে সে ঘটে
বাসনা স্বরূপ চেনে, পায় তার উল
বাউল-ফকির সব এক ঠায় মূল।
বাসনার মুক্তির বাসনা যাপন
অরূপ রাহী’র সে যে বড়ই আপন।



সাধু সাবধান এবে সাধু সাবধান
শরীর হরেক হয় শরীর প্রমাণ
অধর ধরার খেলা অধরের অধর
দিয়ে ধরে অধরের অধর অধর।

বস্তভাবে বস্ত ধরে বস্ত চেনা দায়
অধর বস্ত যেই, চিন মহাশয়
সৎ-চিদ-আনন্দের বস্ত রূপ যা
অরূপ রূপের সেই বৃহৎ রাজা

পরম-প্রকৃতি যা স্বরূপতে দেহ
বৃহৎ শরীর তাহা বৃহতের গেহ
সমাজ-সংস্কারা নাম তার হয়
নর-বপু তার মাত্র অংশভাগ হয়
 
ব্রিহদ্দেহে স্বতরজতম সাম্য আশে
যেহ তার নিজ দেহ বারোমাস চাষে
কর্তারূপে তারে চেনা, পরমের ভাগ
ভক্তি তারে করে সাধু, অসাধু বিরাগ

পায় মুক্তির স্বাদ সহজ-সাধন
কঠিন চীবর দিয়া বাঁধে রে জীবন।

সেই সাধু চরণের আশায় জীবন
অরূপ রাহী’র ভক্তি পায় সেই জন।
 
২৫/১২/১৫


অবসান

ক্ষত-ত্রস্ত হাঁটাহাঁটি, দৌড়ঝাঁপ, সব,
কইরা নে, জীবনানুভব।
পাগলারে তর অহংকারের স্নায়ু, না থাকলে সব উড়ায়া নেয় বায়ু
জগৎজোড়া সংসারিত স্থিতি-বিলয় কবে,
বাসনারে মুক্তি দিয়া, লেনাদেনার দিন অবসান হবে?
 
২২/১২/২০১৪


কোম্পানি শাসনের অবসান প্রসঙ্গে

পৃথিবী এখনো ঘুর ঘুর করতেছে সূর্যের চারপাশে।
বেশিরভাগ উদ্ভিদ সালোক সংশ্লেষণ করতেছে বাঁচার উপায়ে।
শেয়ারবাজার কারসাজি।
ছয়টা কোম্পানির হাতে তামাম দুনিয়া কন্ট্রোল।

প্রতিবেশ ধর্ম অনুসারে প্রাণীদের বিবর্তন চলে।
পুঁজির ধর্ম ইতিহাসে টের পায় মানব শরীর।
চাইলে যায় ভেঙ্গে দেয়া ছয় কোম্পানির সুলতানি।
চাইলে যায় বেদনার দামে কেনাবেচা জীবনের স্বাদ।
বাসনার বাসনারে করা যায় প্রেমে রূপান্তর।
বৃহত্তর দেহটারে ক্ষুদ্রতর দেহে রাখা যায়।
ক্ষুদ্রতর দেহ দিয়া বৃহতের গান গাওয়া যায়।
চারচন্দ্র ভেদ করলে জাইগা উঠে প্রজ্ঞা-কুসুম।
কোম্পানি শাসনের হয় অবসান।
পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকুক।
উদ্ভিদ সালোক সংশ্লেষণ।
কোম্পানি শাসনহীন বৃহত্তর দেহে
সদানন্দ ক্ষুদ্রতর দেহে
জাগা মন প্রেমের বাজার।
যারা জানে, তারা জানে। জানা কথা। চাইলে জানা যায়।
সহজসাধনার কথা সহজে—পাগল রাহী
লিখতেছে প্রেমের খাতায়।

৬/ ১১/২০১৪


আমার অক্ষরগুলি

আমার অক্ষরগুলি
ঝরে যাচ্ছে জীবনের খরতাপে
তুমি মালা গাঁথতে পারো
যদি সকালের দিকে
তুলে আনতে পারো
বকুলের তলা থেকে, ভোরে।
আমি অসীম অনন্তের দিকে পাড়ি জমালাম।
তুমি অক্ষরের মালা গলে দিয়া
গাও তবে প্রভাত সঙ্গীত
যদি চাও।
আমি জীবনের আরো কোনো মানে আছে নাকি—
এইসব ভাবাভাবি শেষে
আনন্দের কথা তুললাম
বেদনার হাতে হাত রেখে।
আমার অক্ষরগুলি
তুমি ভুলে থাকতে পারো যদি
বেঁচে যাবা এবারের মতো।
বেঁচে গেলে আনন্দের কথা তুললেই
বেদনার হাত পেয়ে যাবা
হাতে।
 
১৬/৯/২০১৪


মোহ

মোহ॥
 
এই মোহ আবরণ
কেটে গেলে পরে মন
আর চায় না তারে
ঠিক আগের মতন।
 
তখনন্যরকম
ভাবে ভালোবাসা রয়
যার কামনা হৃদয়
আগে করেনি কখন।
 
এই মোহ যে জাগে
এই ভালো যে লাগে
তার কেটে যাওয়া সুর
তুমি শোন নি আগে।

শুনে থাকলে পরে
অনেকানেক দিনের
স্মৃতি মন্থনেরও সুখ
পাইতিরে মন।
 
তাই মোহ আবরণ
কাটা হয়ে গেলে মন
বৃথা পাইস না ব্যথা
কর মোহের স্মরণ
কর দুইজনাতে
কর যয়জনে চা’স
কর বাসনা স্বরূপ
উদ্ঘাটন খেলা।

এই মোহ জাগরণ
হেতু বাসনার ধন
পেয়ে হারানোর সুখ
বল পাবে কয় জন?

রাহী সেই সুখ চায়
তা সহজে না পায়
তা যে সহজ সাধন
তা জানলি না মন।

২৩/৬/২০১৩



বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।