ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

‘মিলনময়’একটি সন্ধ্যা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫
‘মিলনময়’একটি সন্ধ্যা ছবি: রাজীব/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের বয়স এখন ৬০ বছর। কিন্তু হীরক জয়ন্তীতে গুণীজনরা বলছেন, মিলন চিরতরুণ ও প্রাণচঞ্চল।

পুরো সন্ধ্যা এ সাহিত্যিকের গুণ বর্ণনায় যেন ‘মিলনময়’ হয়ে উঠলো।

শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ হলে আয়োজিত ‘ইমদাদুল হক মিলন হীরক জয়ন্তী উৎসব’ শীর্ষক সম্বর্ধনা সভার চিত্র এটি।

সভার আয়োজন করে ‘ইমদাদুল হক মিলন হীরক জয়ন্তী উদযাপন পর্ষদ’।

অনুষ্ঠানে চন্দ্রাবতী একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘তোমাদের জন্য উপহার’, চট্টগ্রামের শিক্ষক আবু বকর ছিদ্দিকের লেখা ‘ইমদাদুল মিলনের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থ দু’টির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

গত ৮ সেপ্টেম্বর ছিল ইমদাদুল হক মিলনের জন্মদিন। ১৯৫৫ সালের এ দিনে বিক্রমপুরে জন্মেছিলেন তিনি। বর্তমানে জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘দৈনিক কালের কন্ঠ’র সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।

বিকেল ৫টার দিকে সঙ্গীতানুষ্ঠান দিয়ে শুরু। এরপর পর্ষদের আহ্বায়ক সেলিনা হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ও মিলনকে উত্তরীয় পরিয়ে আশীর্বাদ করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মিলনের হাতে তুলে দেন ক্রেস্ট।

শিল্পী হাশেম খান মিলনের হাতে উপহার তুলে দিয়ে বলেন, মিলন ৬০ বছর ধরে লেখেন না, তবে তার লেখা বেঁচে থাকবে অনেক ৬০ বছর।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কবি আসাদ চৌধুরী, সাহিত্যিক রশিদ হায়দার, কবি নুরুল হুদা, সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রমুখ।

কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, মিলন সব বয়সী মানুষের প্রিয়। এটি তার শক্তি। তার পর্যবেক্ষণ শক্তি অসাধারণ। তাই লেখায় যেকোনো চিত্র সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারেন। মিলন যে কবিতা পড়েন, সে ছাপ পাওয়া যায় তার লেখায়।

রশিদ হায়দার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, এক রাতে এক বসায় একটি উপন্যাস লিখে দিয়েছিলেন মিলন। কাজের প্রতি এত নিষ্ঠা সবার থাকে না। তাই এতো অল্প সময়ে এতো লেখা লিখতে পেরেছেন মিলন। এরপর তিনি ঢুকেছেন সাংবাদিকতায়, যেখানে অনেক বিচিত্র মানুষের দেখা মেলে। এসব অভিজ্ঞতা থেকে মিলন লিখবেন, সেসব আমরা ভবিষ্যতে পাবো।

নুরুল হুদা বলেন, মিলন আমাদের সবার গল্প লিখছে। তিনি ছিমছাম একজন লেখক, তারুণ্যে ভরা। আশীর্বাদ করি, মিলন ১শ ৬০ বছর বাঁচুক। তবে বৃদ্ধ হয়ে নয়, এমন প্রাণবন্ত হয়ে।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, মিলন যদিও বলেন, তিনি নাকি জীবিকার জন্য লেখেন। কিন্তু তার প্রাচ‍ুর্য্য থাকলেও লিখতেন। তার প্রাণ হলো লেখায়। তিনি অনেক খেটে লেখেন। যারা সমালোচনা করেন, তারা একটি জনপ্রিয় উপন্যাস লিখে দেখান। ১০টি লেখার একটিও যদি মানোত্তীর্ণ হয়, সেটিই যথেষ্ট। মিলনের লেখা আধুনিক ও কোনো কোনোটি কালোত্তীর্ণ।

বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে সাহিত্যম‍ুখী করতে মিলনের বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রত্যাশা রাখি, তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘নূরজাহান’কে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো লেখা আরও দেবেন।

এরপর সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন মিলন।

তিনি বলেন, অকপটে বলতে চাই- এক সময় আমি ছাপার অক্ষরে নিজের নামটি দেখতে চেয়ে লিখতাম। সাহিত্য
বুঝতাম না। কিন্তু পরে এটি আমার রক্তে মিশে যায়।

এভাবে একে একে নিজের প্রখ্যাত উপন্যাসগুলোর পিছনের গল্প তুলে ধরেন তিনি। কীভাবে সাধারণ একজন লেখক থেকে ক্রমশ তিনি একজন সাহিত্যিক হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন, জানালেন সেসব।

উপস্থিত অগ্রজরা ছাড়াও তার জীবনে অবদান রাখা ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মিলন।

বিশেষ করে, কালের কণ্ঠে সুযোগ দেওয়া ও সেই সঙ্গে লেখার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

আহমেদ আকবর সোবহানের সহযোগিতা ছাড়া লেখালেখি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না, যোগ করেন মিলন।

সভাপতি আনিসুজ্জামান বলেন, মিলনের স্বাভাবিক প্রতিভাই সাফল্যের দুয়ারে নিয়ে গেছে তাকে। অর্জনের ক্ষমতা তার নিজস্ব।

সাহিত্যাঙ্গনের গুণীজনরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মিলনকে ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানান। শুভেচ্ছা জানান চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন, টিভি ব্যক্তিত্ব নাদের চৌধুরী, বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে আসা প্রতিনিধি, বিভিন্ন সংগঠনের
প্রধানরাও।

অনুষ্ঠানে আগতদের একটি করে বুলেটিন দেওয়া হয়। এতে ইমদাদুল হক মিলনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও তাকে নিয়ে অগ্রজদের লেখা স্থান পেয়েছে।

বুলেটিনে উল্লেখ রয়েছে, ইমদাদুল হক মিলনের এ পর্যন্ত বইসংখ্যা প্রায় ২শ ৬০, টিভি নাটকের সংখ্যা প্রায় ২শ ৫০, ধারাবাহিক প্রায় ৩০টি।

১৯৯২ সালে হুমায়ূন কাদির সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৯৫ সালে জাতীয় ব্যক্তিত্ব পদক, ১৯৯৮ সালে মাদার তেরেসা পদক, ১৯৯৯ সালে এস এম
সুলতান পদক, শেরে বাংলা পদক, ২০০৩ সালে বাচসাস পুরস্কার, ২০০৫ সালে টেলিভিশন দর্শক অ্যাওয়ার্ড (শ্রেষ্ঠ শিশু সাহিত্যিক), ২০০৮ সালে রাইটার্স অ্যাওয়ার্ডসহ (জাপান) অনেক পুরস্কার জমা হয়েছে এ সাহিত্যিকের ঝুলিতে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫
এসকেএস/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।