ঢাকা: আয়োজনের মধ্যমণি বসা ছিলেন মঞ্চেই। উত্তরীয় পরিয়ে, মানপত্র ও অর্থপুরস্কার হাতে তুলে দিয়ে সম্মাননা জানানো হলো।
এবার বলা হলো সম্মাননা প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়া জানাতে। মাইক্রোফোনে মুখ রেখেই সরল-সলাজ হাসিতে বললেন, কি বলবো বুঝতে পারছি না। বক্তৃতা দিতে পারি না আমি। বক্তৃতা দিইনি কখনও। সম্মাননা পেলাম। নিঃসন্দেহে এটা বড় প্রাপ্তি।
তবে সম্মাননার আর্থের পরিমাণ আরও বাড়ানো দরকার। অর্থ কম হলে পুরস্কারটাও ছোটো মনে হয়! প্রয়োজনে আমরা সবাই মিলে পৃষ্ঠপোষক জোগাড় করে দিলাম!
মঞ্চে বসা অতিথিরা তো বটেই, হলভর্তি বন্ধু, সতীর্থ, অগ্রজ-অনুজ সবাই করতালি দিয়ে কামুর এমন সহজ-সরল, ভনিতাবর্জিত কথার সমর্থন জানালেন।
এর পরই বললেন একটি কবিতা শোনাই। কবিতার নাম ‘মাতৃভূমি’। পাঠ করলেন। হলভর্তি উপস্থিতি করতালির পাশাপাশি আরও কবিতা বলার অনুরোধ জানালো। কিন্তু এবার কবিতা না বলে শোনালেন গান-
হাতের উপর হাতের পরশ রবে না
আমার বন্ধু, আমার বন্ধু হবে না, হবে না
.....
শিশির ঝরবে সকাল বেলা
আমাকে তুমি করবে হেলা
আমাকে ভালোবাসবে ঠিকই কিন্তু আমার
হবে না...
এটুকু গেয়ে ডায়াস থেকে বসতে যাচ্ছিলেন। পরে অনুরোধে ছোট্ট করে শোনালেন একটি কবিতার চার লাইন।
শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘লোক সাহিত্য সম্মাননা-২০১৪’ গ্রহণ করে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানান কবি, গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্রাকার কামরুজ্জামান কামু।
সঞ্জীব চৌধুরীর কণ্ঠে তার লেখা ‘আগুনের কথা বন্ধুকে বলি দু’হাতে আগুন তারও’ অথবা ‘তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও করি প্রেমের তর্জমা’ অথবা ‘তোমার বাড়ির রঙের মেলায় দেখেছিলাম বায়োস্কোপ’ প্রভৃতি গানের জনপ্রিয়তা আজও সমান।
সাহিত্যের ছোটো কাগজ ‘লোক’ ২০০৯ সাল থেকে এ সম্মাননার আয়োজন করছে। কবি চঞ্চল আশরাফ, কুমার চক্রবর্তী, মুজিব মেহদী, মাহবুব কবির, ইমতিয়ার শামীমের পর সবশেষ এ সম্মাননা পেলেন কামরুজ্জামান কামু। ‘লোক সাহিত্য সম্মাননা-২০১৫’ পেতে যাচ্ছেন প্রবাসী কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ। সম্মননা অনুষ্ঠান থেকেই মনোনীত এ কবির নাম ঘোষণা করেন লোকের সম্পাদক অনিকেত শামীম।
সূচনাসঙ্গীত দিয়ে শুরু হয় সম্মাননা অনুষ্ঠান। আনন্দন ও সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের শিল্পীরা একে একে গান করেন। স্বাগত ভাষণ দেন আয়োজক অনিকেত শামীম। এরপর একে একে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কামরুজ্জামান কামুর বন্ধু-সতীর্থ লেখক-কবি টোকন ঠাকুর, আহমাদ মোস্তফা কামাল, ইমতিয়াজ মাহমুদ ও বিধান সাহা।
সম্মাননা অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে ছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ ও আসাদ মান্নান। সবশেষে তারাও বক্তব্য দেন। তবে সম্মাননা অনুষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের চেয়ে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে নির্মলেন্দু গুণ, ইমতিয়াজ মাহমুদ আর কামুর প্রাঞ্জল কথা-রসিকতায়।
কবি নির্মলেন্দু গুণ অনিকেত শামীমকে বলেই ফেললেন, আগামী বছর যদি ৫০ হাজার টাকা সম্মাননা দেওয়ার ঘোষণা দিতে পারো তাহলে কামু কম পাবে কেন? এ বছর থেকেই সেটা করা হোক।
এক পর্যায়ে নির্মলেন্দু গুণ নিজে এ ৫ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর কবি আসাদ মান্নানও ঘোষণা দেন তিনিও দেবেন ৫ হাজার টাকা। গান, কবিতা, কথা-রসিকতার এ সম্মাননা অনুষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি কবি ইমতিয়ার শামীম।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য, অর্থনীতিসহ সবকিছু চলে যাচ্ছে দুর্বৃত্তদের হাতে। আমরা নির্বিকার-নির্লিপ্ত-নির্লজ্জ। বিগত কয়েক দশকে সাহিত্যের অবনমন ঘটেছে বলেই আমরা প্রতিবাদের ভাষা হারিয়েছি।
সমসাময়িক লেখক-কবিদের হাত দিয়েই আমরা সাহিত্যের ভাষা প্রতিবাদের ভাষা ফিরে পেতে চাই।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
এমএইচপি/এএ