ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সনির ব্লুজ (২) | জেমস আর্থার বাল্ডউইন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন

অনুবাদ গল্প ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৫
সনির ব্লুজ (২) | জেমস আর্থার বাল্ডউইন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন

জেমস আর্থার বাল্ডউইন (২ আগস্ট, ১৯২৪-পহেলা ডিসেম্বর, ১৯৮৭) একাধারে একজন আমেরিকান ছোট গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার, নাট্যকার, কবি এবং সমাজ সমালোচক। তার প্রবন্ধ সংগ্রহ ‘নোট অব আ নেটিভ সন’ (১৯৫৫)-এ তিনি বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়কার আমেরিকার পশ্চিমা সমাজে বিদ্যমান এবং তখনও আলোচিত হয়নি এমন সাম্প্রদায়িক, যৌন এবং নানা ধরনের শ্রেণী বিভেদ এবং এই সংক্রান্ত অনেক অপরিহার্য সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন।

দ্য ফায়ার নেক্সট টাইম (১৯৬৩), নো নেইম ইন দ্য স্ট্রিট (১৯৭২), এবং দ্য ডেভিল ফাইন্ড ওয়ার্ক (১৯৭৬) তার আরো তিনটি বিখ্যাত প্রবন্ধ সংগ্রহ।

বাল্ডউইনের উপন্যাস এবং নাটক সমূহে কৃষ্ণাঙ্গসহ সমকামী এবং উভকামী পুরুষদের মৌলিক ব্যক্তিগত অনেক প্রশ্ন এবং জটিল সব সামাজিক ও মানসিক পীড়ন এবং ন্যায়সঙ্গত চাওয়া পাওয়া কাহিনী হিসেবে চিত্রিত হয়েছে। একই সঙ্গে এধরনের ব্যক্তিত্বের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে বেশ কিছু আভ্যন্তরীণ বাঁধা বিঘ্নও বর্ণিত হয়েছে। সমকামীদের অধিকারের বিষয়টি আমেরিকা জুড়ে ব্যাপকভাবে সমর্থন পাবার আগেই এসম্পর্কে বল্ডউইন তার বিখ্যাত উপন্যাস, গিওভানি’স রুম (১৯৫৬) লেখেন, এটি তার দ্বিতীয় উপন্যাস। তার প্রথম উপন্যাস, গো টেল ইট ওন দ্য মাউন্টেইন, তার সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম।

সনি’স ব্লুজ গল্পটি বল্ডউইনের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং নির্বাচিত গল্পগুলির একটি। এটি ১৯৫৭ সালে প্রথম ছাপা হয়, পরে গোয়িং টু মিট দ্য ম্যান (১৯৬৫) গল্প সংগ্রহে ঠাঁই পায়। - অনুবাদক



প্রথম কিস্তি পড়তে ক্লিক করুন



ঠাৎই আমার ভেতরে কিছু একটা ঢুকে পড়ে এবং উপচে পড়ার হুঁশিয়ারি দিতে থাকে। আমি আর ওকে ঘৃণা করতে পারি না। আমার মনে হতে থাকে আবারও আমি ছোট্ট শিশুর মতো কাঁদতে শুরু করে দিব।
“নিশ্চয়”—আমি বলি। “ভয়ের কিছু নেই। ” আমি আমার ওয়ালেটের ভেতরে তাকাই আর দেখি সেখানে কোনো এক ডলারের নোট নেই, কেবল একটা পাঁচ ডলারের নোট। “এইতো”—আমি বলি। “এইটা রাখো?”

ও নোটটার দিকে তাকায় না—ও সেটার দিকে তাকাতে চায় না। ওর মুখজুড়ে কেমন যেন একটা ভয়াবহ আবহ ভর করে, যেন সে বিলের নম্বরটা নিজের এবং আমার কাছ থেকে গোপন করতে চাইছে। “ধন্যবাদ। ” ও বলে, এবং তারপর ও আমাকে বিদায় দেবার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। সনিকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। হয়ত আমি ওকে লিখব বা কিছু একটা পাঠাব। ”
“অবশ্যই”—আমি বলি। “তুমি সেটা কোরো। যতদূর পারো। ”
“আপনার সঙ্গে আবার দেখা হবে”—ও বলে। আমি পা ফেলে নিচে নামতে শুরু করি।



আমরা ১১০তম স্ট্রিটে পৌঁছে লেনোক্স অ্যাভিনিউর দিকে যেতে থাকি। আর এই অ্যাভিনিউটা আমার কাছে আজীবনই পরিচিত। কিন্তু যেদিন থেকে সনি সমস্যায় আক্রান্ত হয় সেদিন থেকে আমার কেবলই মনে হচ্ছে এর প্রতিটি নিঃশ্বাসের মাঝে যেন কোনো এক অজানা ভীতি লুকিয়ে রয়েছে।
“আমরা প্রায় এসে গেছি”—সনি বলে।
“প্রায়। ” এর বেশি কিছু বলতে আমরা দুজনেই অস্বস্তি বোধ করি। আমরা একটা হাউজিং প্রজেক্টে থাকি। খুব বেশি দিন হয়নি। তৈরির বেশ কয়েকদিন পর এটাকে একেবারে প্রথাবিরোধী নতুন বলে মনে হয়েছিল, এখন, অবশ্যই, এর একেবারেই জরাজীর্ণদশা। একে এখন সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, এবং ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি ব্যঙ্গ বলেই মনে হয়—



এবং দীর্ঘদিন আমি সনিকে কিছু লিখিনি বা কোনো কিছু পাঠাইনি। শেষে আমার ছোট মেয়ে মারা যাবার পর ওকে একটা চিঠি লিখি, জবাবে ও আমাকে একটা চিঠি লিখে, যেটা পড়ার পর নিজেকে পিতৃপরিচয়হীন বলে মনে হতে থাকে।

চিঠিতে ও এসব কথা লিখেছে:
  প্রিয় ভাই,
  তুমি জানো না তোমার কাছ থেকে শোনার আমার কত দরকার। আমি বহুবার তোমার কাছে লিখতে চেয়েছি, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি আমি তোমাকে কতটা আঘাত দিয়েছি আর তাই তোমাকে লিখিনি। কিন্তু এখন আমি একজন পুরুষের মতোই বুঝতে পারছি যে কিনা কোনো গর্ত বেয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে, সত্যিকার গভীর এবং ভয়ঙ্কর কোনো গর্ত থেকে যে কেবল উপরকার বাইরের সূর্যটা দেখতে পাচ্ছে। আমাকে এখান থেকে বেরুতে হবে।
  কী করে আমি এখানে এলাম সে সম্পর্কে খুব বেশি একটা আমি তোমাকে বলতে পারব না। আমি বোঝাতে চাইছি আমি জানি না ঠিক কিভাবে সেসব তোমাকে বলতে হবে। আমার ধারণা আমি কোনো একটা কিছুর ভয়ে ভীত বা আমি কিছু একটা থেকে পালাতে চাইছি আর তুমি ভালো করেই জানো যে মাথার দিক দিয়ে আমি কখনোই খুব একটা শক্ত নই (হাসি)। আমি খুশি যে মা বাবা মারা গেছেন এবং তারা দেখছেন না তাদের ছেলের ভাগ্যে কী ঘটেছে এবং আমি শপথ করে বলছি আমি যদি জানতাম কী করছি তাহলে আমি তোমাকে কখনোই এতটা আঘাত দিতাম না, তুমি এবং আরো অসংখ্য ভালো লোকেরা যারা আমার প্রতি সদয় ছিলেন এবং আমাকে বিশ্বাস করেছেন।
  আমি তোমাকে এটা ভাবাতে চাই না যে সঙ্গীতজ্ঞ হতে গিয়েই আমি এমন কিছু একটা করেছি। এটা তার চাইতেও বেশি কিছু। অথবা হতে পারে এর চেয়ে কম কিছু। এখানে সোজাসাপ্টাভাবে কোনো কিছু মনে করতে পারছি না আর আমি ভাবতেও চাইছি না আমার কী হবে যখন আবারও বাইরে বের হব। কখনো কখনো আমি ভাবি আমি হয়ত ফুরিয়ে গেছি এবং কখনোই বাইরে বের হব না আর কখনো কখনো আমি ভাবি আমি হয়ত আবারও ফিরে আসব। আমি তোমাকে একটা কথা বলছি, যদিও, আমি বরং এমনটা যাতে আর হতে না পারে সেই মতো আমার চিন্তাকে বইতে দিচ্ছি। কিন্তু ওরা সবাই এ কথাই বলে, তাই আমাকেও ওরা সেসব বলে। যদি আমি তোমাকে বলব কখন আমি নিউইয়র্কে আসব এবং তুমি যদি আমার সঙ্গে দেখা করতে পারো, আমি নিশ্চিত তখন সেটা তুমি উপভোগ করবে। ইসাবেল আর বাচ্চাদের আমার ভালোবাসা দিবে এবং ছোট্ট গ্রোসি’র কথা যা জানলাম তাতে আমি যারপরনাই দুঃখিত। আশা করি আমি মায়ের মতো হতে পারব এবং বলব স্রষ্টাই করবেন, তবে আমি জানি না কখন আমার এমন মনে হবে যে সমস্যা এমন একটা জিনিস যা কখনোই শেষ হবার নয় এবং আমি জানি না এর জন্য স্রষ্টাকে দোষ দেয়া কতটা ভালো হবে। তবে হতে পারে এতে কিছু একটা ভালো হতেও পারে যদি তুমি তাতে বিশ্বাস রাখো।
  তোমার ভাই,
  সনি

এরপর আমি সবসময় ওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করি এবং সাধ্যমতো যা পারি পাঠাতে থাকি এবং নিউইয়র্কে ফিরে আসার পর ওর সঙ্গে দেখা করতে যাই। ওকে দেখার পর ভুলে যাওয়া অনেক কথা মনে পড়ে যায়। এ কারণেই আমি শুরু করি, শেষে, সনির ব্যাপারে অবাক হই, ভেতরে ভেতরে যে জীবন সে যাপন করছিল। এই জীবন, সেটা যাই হোক না কেন, ওকে বয়স্ক করে তোলে এবং সরু, এবং সেটা দূরবর্তী সেই স্থিরতার মাঝে ডুবে যাচ্ছিল যার ভেতর সব সময় ওর যাতায়াত ছিল। আমার সেই শিশু ভাইয়ের থেকে ওকে অনেক আলাদা মনে হচ্ছিল। যদিও, যখন হাসছিল, হাত মেলাচ্ছিল, যে শিশু ভাইটিকে আমি কখনোই চিনতে পারিনি সে তার ব্যক্তিগত জীবনের গভীর থেকে উঁকি মারছিল, ঠিক এমন একটা পশুর মতো যেটা আলোর হাতছানিতে প্রলুব্ধ হবার জন্য অপেক্ষা করছে।

“কেমন যাচ্ছে দিনকাল?” আমাকে সে জিজ্ঞেস করে।
“ভালো। আর তোমার?”
“ভালোই তো। ” ওর সারা মুখ জুড়ে হাসি ফুটে ওঠে। “খুব ভালো হলো তোমাকে আবারও দেখতে পেলাম। ”
“তোমাকে দেখেও ভালো লাগছে। ”

আমাদের মাঝে সাত বছরের ফারাক গভীর একটা খাদের মতো বিছিয়ে রয়েছে: খুব অবাক হতাম এই বছরগুলো যদি কখনো আমাদের মাঝে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করত। আমি মনে করতে চেষ্টা করছিলাম, আর এতে করে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট বোধ হচ্ছিল, কারণ ও জন্মের সময় আমি ওখানেই ছিলাম, এবং ওর প্রথম কথাটা আমিই শুনি। যখন ও হাঁটতে শুরু করে, তখন ও মায়ের কাছ থেকে সোজা আমার কাছে আসত। পড়ে যাবার আগেই আমি ওকে ধরে ফেলি যেদিন ও এই পৃথিবীতে প্রথম পা ফেলে হাঁটতে শুরু করে।

“ইসাবেলের কী খবর?”
“ভালো। ও তোমাকে দেখার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। ”
“আর ছেলেরা?”
“ওরাও ভালোই আছে। ওরা ওদের কাকাকে দেখার জন্য উদ্বিগ্ন। ”
“আরে, ঠিক করে বলো। তুমি জানো আমার কথা ওদের মনে নেই। ”
“তুমি কি ছেলেমানুষী করছো? অবশ্যই তোমার কথা ওদের মনে আছে। ”

ও আবারও দাঁত বের করে হাসে। আমরা একটা ট্যাক্সিতে উঠি। একে অপরকে বলার মতো আমাদের তখন আরো অনেক কথা রয়েছে, কেবল জানা নেই কোথা থেকে শুরু করতে হবে।

ট্যাক্সি চলতে শুরু করলে, আমি জিজ্ঞেস করি, “তুমি কি এখনো ভারত যেতে চাও?”
ও হাসে। “তোমার এখনো সেটা মনে আছে। দোজখ, না। এখানকার ভারতীয়েরাই আমার জন্যে যথেষ্ট। ”
“এরা নিজেদের মতো থাকতে পছন্দ করে”—আমি বলি।
আর ও আবারও হেসে ওঠে। “ওরা আসলে জানেই না ওরা কী করছে যখন এটা ছেড়ে দেয়। ”

বছর খানেক আগে, যখন ও চোদ্দের কাছাকাছি, তখন ওর মাথায় ভারত যাবার ইচ্ছে চাড়া দিয়ে বসে। সে পাথরের ওপর উলঙ্গ হয়ে বসে থাকা লোকেদের ওপর বই পড়তে শুরু করে, যারা উলঙ্গ থাকে, সব ধরনের আবহাওয়াতে, যার বেশির ভাগই দুর্যোগপূর্ণ, প্রাকৃতিক, এবং তপ্ত বেলাভূমিতে খালি পায় হেঁটে বেড়ায় এবং এভাবেই প্রাজ্ঞতায় পৌঁছায়। আমি প্রায়ই বলতাম যে আমার কাছে মনে হয় ওরা যত তাড়াতাড়ি পারে প্রাজ্ঞতা থেকে দূরে সরে যায়। আমার মনে হয় এজন্যই ও আমার দিকে খানিকটা মাথা নিচু করে তাকাত।

“তুমি কি কিছু মনে করবে”—ও জিজ্ঞেস করে, “ড্রাইভারকে যদি পার্কের পাশ দিয়ে যেতে বলি? পশ্চিম পাশ দিয়ে—অনেক দিন ধরে আমি শহরটা দেখি না। ”
“অবশ্যই না”—আমি বলি। ভয় ছিল বোধহয় ওকে নিয়ে মজা করছি আমার গলার স্বরে এমন কিছু একটা ফুটে উঠছে, তবে আমি আশা করছিলাম ও সেটা সেভাবে নেবে না।

তাই আমরা পার্কের সবুজ এবং পাথুরে অভিজাত নিষ্প্রাণ সারি সারি অভিজাত হোটেল, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের মাঝ দিয়ে যেতে থাকি, আমাদের শিশুবেলা কাটানো প্রাণবন্ত সড়কের দিকে। এই সড়কগুলো একেবারেই বদলায়নি, যদিও এদের ঘিরে হাউজিং প্রজেক্ট গজিয়ে ওঠায় এখন এগুলোকে ফুটন্ত সাগর ঘেরা পাথরের মতোই মনে হয়। যে বাড়ি ঘরের মাঝে আমরা বেড়ে উঠেছি তার বেশিরভাগই এখন অদৃশ্য হয়ে গেছে, যে দোকানগুলো থেকে আমরা চুরি করতাম সেগুলোর মতোই, যে বেজমেন্টগুলোর ভেতর আমরা প্রথম সেক্স করতে চেষ্টা করি, যে ছাদগুলো থেকে আমরা টিনের ক্যান বা ইটের টুকরো ছুঁড়ে মারতাম। কিন্তু ভূমিদৃশ্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বাড়িগুলো দেখতে এখনো আগেরই মতো, এক সময় এই বাড়িগুলোতে যেসব ছেলেদের দেখতে পেতাম এখনকার ছেলেরাও দেখতে ওদের মতোই, ওরাও আলোর আর বাতাসের আশায় পথে নেমে এসে নিজেদের দুর্যোগের পাকে ঘেরা অবস্থায় আবিষ্কার করে। কেউ কেউ সেই সব ফাঁদ থেকে পালাতে সক্ষম হয়। বেশির ভাগই পারে না। যারা পালায় তারা পেছনে কিছু না কিছু ফেলে রেখে যায়, যেমন পশুরা তাদের কেটে যাওয়া পা খানা ফাঁদের মধ্যে ফেলে পালায়। বলা যেতে পারে, সম্ভবত, যে আমিও পালিয়ে ছিলাম, অন্তত, আমি ছিলাম একজন স্কুল শিক্ষক, বা সনিও, সে হারলেমে বছর খানেক ধরে বসবাস করছে না। যদিও, ক্যাবটা সড়ক ধরে সামনের দিকে এগোচ্ছে বাইরে তাকিয়ে মনে হচ্ছে, খুব দ্রুত চলার জন্যে, সড়কটা কালো কালো লোকে কালো হয়ে আছে, আর আমি সনির চেহারার লক্ষ্য করতে থাকি, আমার কাছে মনে হতে থাকে আমরা দুজনেই ক্যাবের পৃথক জানালা দিয়ে পেছনে ফেলে আসা সেই আগেকার আমাদের খুঁজছি। অভাব বোধ করা কোনো সদস্যের মুখোমুখি হওয়া সব সময়ই সময় ঘণ্টাখানেকের সমস্যা।

আমরা ১১০তম স্ট্রিটে পৌঁছে লেনোক্স অ্যাভিনিউর দিকে যেতে থাকি। আর এই অ্যাভিনিউটা আমার কাছে আজীবনই পরিচিত। কিন্তু যেদিন থেকে সনি সমস্যায় আক্রান্ত হয় সেদিন থেকে আমার কেবলই মনে হচ্ছে এর প্রতিটি নিঃশ্বাসের মাঝে যেন কোনো এক অজানা ভীতি লুকিয়ে রয়েছে।
“আমরা প্রায় এসে গেছি”—সনি বলে।
“প্রায়। ” এর বেশি কিছু বলতে আমরা দুজনেই অস্বস্তি বোধ করি। আমরা একটা হাউজিং প্রজেক্টে থাকি। খুব বেশি দিন হয়নি। তৈরির বেশ কয়েকদিন পর এটাকে একেবারে প্রথাবিরোধী নতুন বলে মনে হয়েছিল, এখন, অবশ্যই, এর একেবারেই জরাজীর্ণদশা। একে এখন সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, এবং ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি ব্যঙ্গ বলেই মনে হয়—খোদাই জানেন যেসব লোকেরা এর ভেতরে থাকেন তারা একে ব্যঙ্গাত্মক করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। চারপাশের নিয়মিত ঘাস তাদের জীবনটাকে সবুজ করার জন্য যথেষ্ট নয়, ঝোঁপগুলোকে কখনোই সড়কের সীমানা জুড়ে ধরে রাখা হয় না, এবং তারা সেটা জানে। বড় বড় জানালাসমূহ কাউকেই বোকা বানায় না, শূন্য থেকে স্থান তৈরি করার জন্য সেগুলো যথেষ্ট বড় নয়। এরা এই সব জানালা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না, বরং এর বদলে তারা টিভি দেখে। খেলার মাঠগুলো শিশুদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা যারা জেকস, বা স্কিপ রোপ, বা রোলার স্কেট, বা সুয়িং তথা দোলনা খেলে না। আমরা এমন একটা অংশ দিয়ে যাচ্ছি কারণ জায়গাটা আমি যেখানে পড়াই সেখান থেকে খুব একটা দূরে নয়, এবং এর অংশ বিশেষ শিশুদের জন্য বরাদ্দ; তবে সনি আর আমি যেখানে বেড়ে উঠেছি এখানকার ঘরবাড়ি অনেকটা সেখানকার মতো। একই ঘটনা ঘটছে, ওরাও সেই একই স্মৃতি বয়ে বেড়াবে। যখন আমি আর সনি ঘরে ঢুকতে যাই তখন আমার এমন মনে হতে থাকে যেন আমি তাকে এই মাত্র বিপদ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসলাম যেখান থেকে সে পালাবার জন্য মরিয়া হয়ে ছিল।

তৃতীয় কিস্তি পড়তে ক্লিক করুন



বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।