ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

হুমায়ূন আহমেদ নবীন সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত

সাদিয়া মাহ্‌জাবীন ইমামের সাক্ষাৎকার

সাক্ষাৎকার ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৫
সাদিয়া মাহ্‌জাবীন ইমামের সাক্ষাৎকার

নবীন কথাসাহিত্যিক সাদিয়া মাহ্‌জাবীন ইমাম। সম্প্রতি প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ পা’-এর জন্য পেয়েছেন এক্সিম ব্যাংক অন্যদিন- হুমায়ূন আহমেদ নবীন সাহিত্য পুরস্কার।

লেখালেখি, বর্তমান ব্যস্ততা এবং পুরস্কারপ্রাপ্তি নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন বাংলানিউজের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আতিফ আতাউর



আপনার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই
আমার জন্ম ১৯৮২ সালে ১২ অক্টোবর ফরিদপুরের দয়ারামপুরে, আমার নানাবাড়িতে। সেটা ছিল বোধহয় কার্তিক মাস, আর মঙ্গলবার। একেবারেই প্রত্যন্ত গ্রাম ওটা। ইলেক্ট্রিসিটি ছিল না। শুনেছি তখন নাকি আখের সময় ছিল। একদম আখ ভাঙ্গানো হচ্ছে ওরকম সময় মেঝের মধ্যে আমি হয়েছি। এটা অবশ্য এখন ভালো লাগে ভাবতে এরকম একটি সময়ে জন্মেছি। আর বড় তো হয়েছি একেবারেই মফস্বলে। যেখানে একটা পাড়ায় হয়ত একটা টেলিভিশন থাকত। দুইশ’ বাড়ির মধ্যে একটা টিএনটি ফোন থাকত। তো ওরকম একটি জায়গায় ফরিদপুরের ঝিলটুলিতে আমরা থাকতাম অনেকদিনের পুরনো একটি বাড়িতে। ওটা বাবা কর্মসূত্রে পেয়েছিলেন। ’৪৭-এর হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার সময় একজন অভিজাত হিন্দু ব্যবসায়ীর ফেলে যাওয়া বাড়ি ছিল ওটা। পরে গভমেন্ট ওই বাড়িটা নিয়ে নেয়। ওই বাড়িতে আমরা ১৯৮২ সাল থেকে থাকতে শুরু করি। আর পড়াশোনা করেছি ফরিদপুর গার্লস হাইস্কুলে, তারপর ফরিদপুর সারদা সুন্দরী কলেজে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার সতের বছর বয়স পর্যন্ত ফরিদপুরে বড় হয়েছি। ফরিদপুরে ছোটবেলায় ফুলকি, চাদের হাট ইত্যাদি বাচ্চাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম।

লেখালেখির হাতেখড়ি হলো কিভাবে?
প্রথমত আমি নিয়মিত ডায়েরি লিখতাম। যখন থেকে বানান করে লিখতে শুরু করেছি তখন থেকে আমি নিজের কথা ডায়েরিতে লিখে রাখতাম। কিন্ত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মেইনস্ট্রিম বলতে যা বোঝায় সেটা খুবই সম্প্রতি ২০১০ সাল থেকে লেখা শুরু করেছি। প্রথম লেখা ছাপা হয়েছিল ইত্তেফাকে। তারপর কালি ও কলমে। মোটামুটি বাংলাদেশের সব পত্রিকাতেই ছাপা হয়েছে।

আপনার প্রথম পড়া বইয়ের কথা মনে আছে?
না, ওইভাবে স্মৃতিতে প্রথম পড়া বইয়ের কথা মনে নাই। তবে ছোটবেলায় যেসব বই পড়তাম সেসবের কয়েকটির কথা মনে আছে। যেমন, ‘সোনার মেয়ে রূপবতী’ নামের একটি বই আমি চার বছর বয়সে পুরস্কার পেয়েছিলাম। আবৃত্তি করে। বইটা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের। একেবারেই বাচ্চাদের জন্য লেখা একটা বই। কিন্তু বইটা পড়েই সোনার মেয়ে রূপবতী যে ঘরে বসে বই পড়তে চায় সেই জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতাম। আসলে তখন ক্লাসে যে বইগুলো পড়তাম সেই বইগুলোই সুন্দর ছিল। ওখানেই এত ভালো গল্প কবিতা থাকত। টেলিফোন গাইডও পড়েছি, পত্রপত্রিকাও পড়েছি। আমাদের বাসায় বাবার প্রচুর বই ছিল। সেগুলোও পড়েছি। এটা আমার জন্য বড় একটা সুবিধা ছিল।

লেখালেখির উৎসাহটা পেলেন কিভাবে?
আসলে যেকোন একটা ঘটনায় একজন মানুষ লিখতে শুরু করে এটা কিন্তু খুবই কম হয়। সেটা হয়ত এক্সসেপশনাল কেস। কিন্তু যারা নিয়মিত লেখেন তাদের কোনো না কোনোভাবে অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতিটা নানারকমভাবে শুরু হয়। তার শৈশব তাকে ইন্সপায়ার করে। অথবা তার সমসাময়িক কাজ বা জীবিকা তাকে উদ্ধুদ্ধ করে। কোনো না কোনোভাবেই কিন্তু প্রস্তুতিটা হতে থাকে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে সে হয়ত কখনো লেখা শুরু করে। আমার যেটা হয়েছে ২০১০ সাল থেকে কাগজে নিয়মিত লেখা শুরু করেছি। আমি তখন এটিএন বাংলাতে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছি। কিন্তু আমার মনে হলো আমার জীবনবোধ আমার দেখা, ব্যক্তিগত অনুভূতি থেকে আমি মানুষের সঙ্গে যে যোগাযোগ করতে চাই সেটা আসলে আমার শুধু এতটুকু কাজে হচ্ছে না। তখন আমার মনে হলো আমি লিখতে চাই। এবং লিখতে গেলেই আমার এই জায়গাটি পরিপূর্ণ হচ্ছে। তখন আমি লেখা শুরু করলাম। তবে লেখা ওইভাবে আমি তো খুব ছোটবেলাতেও লিখেছি। স্কুলের ম্যাগাজিনেও লিখেছি। তখন আমাদের পাঠাগারে এবং স্কুলে কর্মসূচি হতো। পাড়া মহল্লাতে ছেলেমেয়ে মিলে ম্যাগাজিন বের করে ফেলত। এখন যদিও এগুলো হয় না। কিন্তু তখন মফস্বলে এগুলো হতো।

আপনার প্রথম ছাপা হওয়া লেখাটি কী ছিল?
ক্লাস এইটে পড়ার সময় দৈনিক জনতাতে একটা লেখা ছাপা হয়েছিল। সেটা ছিল একটা কবিতা। তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি। আর মেইনস্ট্রিম লেখা প্রথম ছাপা হয় ২০১০ সালে ইত্তেফাকে। ইত্তেফাকে একটা বিশেষ সংখ্যা হয়েছিল তিন নারী লেখকের লেখা নিয়ে। তার মধ্যে আমি সর্বকনিষ্ঠ ছিলাম। এটা ছিল প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমার প্রথম গল্প প্রকাশিত হওয়া। গল্পটার নাম ছিল ‘ফুলকিরা ফিরে আসে’। এটা ছিল একটা সাম্প্রদায়িক বিষয়কে কেন্দ্র করে। এরকম একটি ঘটনা অনেক বছর পরেও মানুষের জীবনে কিভাবে থেকে যায় সেই গল্প। আর নামটা নেওয়া হয়েছে—আমার জীবনের প্রথম যে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল—রং করতে, ছবি আঁকতে বা কবিতা আবৃত্তি করতে শেখানো সেই সংগঠনটির নাম ছিল ফুলকি। এ কারণে ফুলকি নামটা নেওয়া।

প্রথম লেখা ছাপা হওয়ার পর দীর্ঘ একটা বিরতি নিয়েছিলেন। এটা কেন করলেন?
এটা আসলে আমার পড়াশোনার জন্য। আমার মা মনে করতেন এদিকে গেলে লেখাপড়া থেকে আমার মনটা অন্যদিকে সরে যাবে। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হবে আমাকে। আমিও মনে করি এই সময়ে যে আমি লিখিনি, তাতে আমার পড়ার প্রস্তুতিটা হয়েছে। যেটা লেখার জন্য সব চাইতে আগে জরুরি। আমি লেখার চাইতে পড়তে বেশি ভালোবাসি।



আপনার প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘পা’-এর পেছনের গল্পটা জানতে চাই।
আমি অনেকগুলো গল্প লিখেছি। এর মধ্যে যে পনেরটি গল্প কোথাও না কোথাও প্রকাশিত সেই গল্পগুলো এক মলাটে ‘পা’ নামে বের হয়। দেখা গেল আমার অনেকগুলো গল্প প্রকাশিত হয়েছে এবং পাঠকেরা একটু করে হলেও সাড়া দিচ্ছে, আশপাশের অনেকেই উৎসাহ দিতে থাকল। অনেক ছোট ছোট মানুষের বই থাকে। তোমার কোনো বই কেন নেই। তোমার একটা বই করা উচিত। এরকম একটা পরিস্থিতিতে আমারও মনে হলো আসলেই তো। অনেকেই বলে তার ওই বইটা। তার ওই বইটা। ইতোমধ্যে আমার কিছু তো পাঠক তৈরি হয়। তারা বলল, এক মলাটে আমার অনেকগুলো গল্প পড়তে চায়। আমি বইমেলার মাত্র বিশ দিন আগে সিন্ধান্ত নিলাম। আমার একটা চিন্তা ছিল আমি নিজে থেকে কখনো বই প্রকাশ করব না। এখন যেটা তরুণ কবিরা করে। প্রকাশকরা যেন ঝুঁকি নিয়ে আমার বই প্রকাশ করেন। এরপর আমি অনন্যার প্রকাশক মনিরুল ভাইকে বলি। তিনি আমাকে তেমন চেনেন না। আমার লেখার কয়েক পৃষ্ঠা উল্টিয়ে তিনি বললেন হ্যাঁ, আমরা আপনার লেখা বই প্রকাশ করব। এরপর বইটা অনন্যা থেকে বের হয়।

গল্পগ্রন্থের নাম ‘পা’ কেন?
আমার বইটার শেষ গল্পের নাম পা। এই গল্পটার নামেই আমি বইটার নাম রেখেছি। পা গল্পটা আসলে আমার লেখা প্রথম পরাবাস্তব গল্প। যে গল্পটা সরাসরি কাউকে আহত করে না। আঘাত করে না। যেটা আমরা প্রতিদিন একটা মানুষ অন্য একটা মানুষকে করে থাকি। কিন্ত সরাসরি প্রত্যক্ষ আহত না করেও, আঘাত না করেও প্রতিদিনের একটু একটু কষ্ট, একটু একটু পরাজয়ে মানুষের যে কত ক্ষতি হতে পারে বা কত বড় মানসিক বিপযর্য় হতে পারে সেই একটা বোধ থেকে লেখা গল্পটা। এটা আমার খুব পছন্দের একটা গল্প। এই কারণেই এই নাম।

আপনি লেখালেখির অনুপ্রেরণা পান কোত্থেকে?
বিশ্ব সাহিত্য থেকে। ওই যে বললাম, একটা সময় আমি নিজে কিছু লিখি নাই। তখন আমি অনেক পড়ার চেষ্টা করেছি। ক্লাস টেস্টের বাইরে আমি একটাই কাজ করতাম। সেটা হচ্ছে বুঁদ হয়ে বই পড়তাম। সম্ভবত ওটাই আমার ভেতরে ভেতরে গল্পের ভিঁত তৈরি করেছে। গল্প বা কবিতা যাই হোক, আমাকে লেখার বোধ বুঝিয়ে দিয়েছে। এটা হচ্ছে নিজের ভেতরকার। আর হচ্ছে যে, আমরা যখন কথা বলি বা লিখি আশেপাশের মানুষরা এটা অবজার্ভ করে। আপনি এখান থেকে চলে যাওয়ার পর আপা কিভাবে কথা বলে এরকম একটা অবজার্ভ করবেনই। ওরকমই, ওই সময় আমার আশেপাশে যারা ছিলেন তারা আমাকে উৎসাহিত করতেন—তুমি এমন ছোট ছোট কিছু না লিখে মৌলিক কিছু লেখা লেখো। আমি যেহেতু আগে থেকেই সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, বাংলাদেশের অনেক প্রমিনেন্ট সাহিত্যিকদের সঙ্গে আমার ওঠাবসা ছিল। তারা আমাকে উৎসাহিত করতেন তুমি মৌলিক লেখায় চলে আসো।

আপনার প্রিয় লেখক কারা?
আমার প্রিয় লেখক তো আসলে অনেক। এটার তালিকা বলা খুবই মুশকিল। তারপরও তলেস্তয় আমার সবচাইতে প্রিয় লেখক। তার মোটামুটি সব পড়ে ফেলেছি। বাংলা সাহিত্যে তারাশংকর, মানিক বন্দোপাধ্যায়ের উপন্যাস হচ্ছে আমার কাছে সবচাইতে পছন্দের। কবিতায় মায়া অ্যাঞ্জেলো, বাংলায় রবীন্দ্রনাথ তো অবশ্যই, জীবনানন্দ আমার কাছে তারও আগে।

বাংলা সাহিত্যের কোন কোন লেখকের সান্নিধ্য পেয়েছেন?
সেলিনা হোসেন আপা, মঈনুল আহসান সাবের, শাহনাজ মুন্নীসহ অনেকেই আছেন। তবে আমার লেখার জন্য সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে তারা, যারা আমার লেখা নিয়ে কথা বলেছেন বা উৎসাহ দিয়েছেন।

আপনার লেখক জীবনের এখন পর্যন্ত একটি কোনো সেরা ঘটনা?
এই তো এবারের পুরস্কার। এটা আসলে খুব বিশাল একটা ব্যাপার আমার জন্য। তারচেয়ে বড় পুরস্কার তাদের অজান্তেই হয়ে গেছে শওকত আলী স্যারের সাথে। কারণ এরকম পুরস্কার তো আমি আর পাব না। শওকত আলী স্যারের মতো মানুষের ছায়ার সঙ্গে দাঁড়ানোটাই আমার মতো মানুষের কাছে বড় একটা পুরস্কার।

আপনি গবেষণা করছেন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও গণমাধ্যম নিয়ে। এ সম্পর্কে জানতে চাই।
আমার এই গবেষণা কাজটি শেষ হয়ে গেছে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। আমি পাঁচ বছর সময় নিয়ে এই গবেষণার কাজটি করেছি। আমার গবেষণার বিষয় ছিল বিংশ শতকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা। বিংশ শতকে উপমহাদেশে যে বড় বড় দাঙ্গাগুলো হয়েছে সেই দাঙ্গাগুলোকে গণমাধ্যম কিভাবে প্রভাবিত করেছে। মানে চাইলে গণমাধ্যম কিভাবে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করে আরো কমাতে পারত আর গণমাধ্যম কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিভাবে উস্কে দিয়েছে এসব তুলে ধরা আমার মূল বিষয় ছিল। তার মধ্যে বাংলাদেশের ঘটনাগুলোও আছে। বাংলাদেশে ১৯৫৫ সাল, ১৯৬৪ ও ১৯৯২-তে বাবরি মসজিদ দাঙ্গার পরে বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিষয় উঠে এসেছে। ওই সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা কী ছিল—সেসব নিয়ে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়েও আপনি কাজ করছেন...
সেটা সম্প্রতি শুরু করেছি।

এ বিষয়ে কি পরবর্তীতে গল্প বা উপন্যাস লিখবেন?
শরণার্থী নিয়ে না, আমার পরিকল্পনা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে একটি উপন্যাস লেখা। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাটা আমার জন্য নিজস্ব বোঝাপড়ার জায়গা। যেহেতু আমি দীর্ঘদিন এটা নিয়ে পড়েছি। এবং এটা এখনো খুব কনটেমপরারি ইস্যু আমাদের দেশে। এ বছরও দূর্গাপূজার সময় বিভিন্ন মন্দিরে হামলা হয়েছে। এবং প্রতি বছর আমাদের মাইনরিটির সংখ্যা কমছে। এটা আমার জন্য কমফোর্ট জোন। পড়ার জন্য। হয়ত এটা নিয়েই কাজ করব আগামীতে।

কার লেখা আপনাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে?
নিদির্ষ্টভাবে কার লেখা আমাকে প্রভাবিত করে এটা বোঝা যায় না। হয়ত আমি আগে সবচাইতে পছন্দের যে লেখাটি পড়েছি, তার কিছু অংশ আমার মধ্যে আছে। হয়ত আমার সকালবেলার মন খারাপ করার একটা অনুভূতি আছে। হয়ত বাইরে এই মাত্র যে ঘটনাটি দেখে আসলাম সেটাও আছে। সব কিছু মিলিয়েই একটা কমপাইল জিনিস যা হয় সেটাই তো একটা লেখা। ওইভাবে আমি জানি কার লেখা আমাকে বেশি প্রভাবিত করে। কোনো কোনো লেখকের অবদান তো অবশ্যই থাকে। পছন্দের লেখকের লেখার লাইন, শব্দ ভেতরে অনেক সময় ঢুকেই যায়। ঠিক নিদির্ষ্ট করে আমি বলতে পারব না কে প্রভাবিত করে।

সাংবাদিকতায় এলেন কিভাবে?
আমি ক্রীড়ালোকে শখের বসে লেখালেখি শুরু করি। বন্ধুরা করত, আমরাও করতাম। তাতে পকেট মানিটা আসত। ওটা করতে করতে যখন মাস্টার্স শেষ হলো আমি সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কাজ শুরু করলাম। ওই সময় আমি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকতায় ঢুকি। ২০০৬ সালে সিএসবি নামে বাংলাদেশে প্রথম ২৪ ঘণ্টার নিউজ চ্যানেল এসেছিল। ওখানে আমি জয়েন করি। এটা এক বছর পরই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আমি এটিএন বাংলায় জয়েন করেছি ২০০৮ সালের মে মাসে। এখানে বেসিক্যালি আমি ফরেন নিউজ করি।

এখন আপনি কোনো লেখা নিয়ে ব্যস্ত?
চারটা গল্প এক সাথে পেন্ডিং। হাফটার্ম হয়ে আছে।

এবারের বইমেলায় আপনার কোনো বই আসছে কি?
না ২০১৬’র বইমেলায় আমার কোনো বই আসবে না। আমার ওরকম কোনো প্রস্তুতি নেই। আমি বইয়ের সংখ্যা দিয়ে লেখকের মান বিচারে বিশ্বাসী নই।

নিজের পুরস্কারপ্রাপ্তিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এই অর্জনকে মূল্যায়ন করা আসলে... এটা আমার প্রথম বই। প্রথম পুরস্কার। এটা অন্যদিন-হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কারেরও প্রথম পুরস্কার। আসলে জীবনের প্রথম কোনো কিছুর ব্যাখ্যা দ্বিতীয় আর কোনো শব্দ দিয়ে হয় না। সেটা বোধহয় আমার এখানে হয়ে গেছে। শওকত আলী স্যারের সঙ্গে। শওকত আলী স্যারের সঙ্গে দাঁড়ানোটাই অনেক বড় একটি পুরস্কার। পুরস্কার আসলে আনন্দের, উদযাপনের বটেই, কিন্তু সেটা সার্থক তখনই হয় যখন আমরা বুঝতে শিখি যে পুরস্কার মানে হচ্ছে তোমাকে একটা মানদণ্ড দিয়ে তোমার দায়বদ্ধতা বুঝিয়ে দেওয়া। এই পুরস্কারপ্রাপ্তির ফলে আমার মধ্যে প্রচণ্ড দায়বদ্ধতা তৈরি হলো।

এই পুরস্কার আপনার লেখালেখিতে কোনো চাপ ফেলবে কিনা? আপনি কী মনে করেন?
একটা কথা বলে নিই। পুরস্কার ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি একটা কিছু পড়তে পারিনি। এই যে এখন আমি আপনাকে সময় দিচ্ছি। পুরস্কার না পেলে এই সময়টা আমি পড়তে পারতাম বা লিখতে পারতাম। যদিও আমি খুব এনজয় করছি যে, আমার ইন্টাভিউ নিতে আপনি আসছেন। তারচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, পুরস্কার পেলে লেখায় বা পড়ায় ক্ষতি হয়। নিজেরও আনন্দের একটি ব্যাপার থাকে। সেটাতেও সময় যায়। যাই হোক দুই তিনদিন পর এটা ঠিক হয়ে যাবে। তবে এটা ঠিক, পুরস্কারের চাপে দায়বদ্ধতা বেড়ে যায়। আমার এখন যেটা মনে হচ্ছে, চাইলে আগে যেমন মনের আনন্দে লিখে ফেলতাম, এখন বোধহয় মনের আনন্দে লেখার পরেও আমাকে দেখতে হবে এখানে মানুষের কথা আছে তো? শুধু আমার একার কথা নয় তো? কারণ লেখাতে মানুষের কথা যতক্ষণ না থাকছে ততক্ষণ সেটা সার্বজনীন হচ্ছে না।

দিনের কোন সময় লেখালেখি করেন?
অনেক রাতে এবং দুপুরবেলা। অনেক রাতে মানে অনেক রাতে। আমি আসলে ভোরের দিকে ঘুমাই। দুইটা থেকে চারটা এই সময়ে লিখি আমি। আবার দুপুর বারোটা থেকে দুইটা।

শখ?
ছবি তুলতে খুবই পছন্দ করি। আমি ফটোগ্রাফি করি। বই পড়ি। গান শুনি। তবে সবই একটু পুরনো সেকেলে ধরনের। দাদারা যেসব সংগীত গেয়েছেন সেসব আর কি। আমাদের সমসাময়িক না।

আপনার পারিবারিক জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
আমরা দুই ভাইবোন। আমার ছোটভাই সাংবাদিক। বাবাও সাংবাদিক ছিলেন। আছেন আমার মা, এবং আমার হাসব্যান্ড আনোয়ার হোসেন শিমুল। বিয়ে করেছি ২০০৮ সালে। তিনি এয়ারটেলে কর্মরত।

অবসরে কী করেন?
আমি আসলে অবসর পাই না। যদি সামান্যতম অবসরও পাই, কিছু করি না। হয় নিজের মতো ছবি তুলি, না হয় আমি ফোনের সমস্ত কমিউনিকেশন বন্ধ করে দিয়ে বই পড়ি। নিজের মতো থাকার চেষ্টা করি।

বাংলানিউজকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
বাংলানিউজকেও ধন্যবাদ।



বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।