ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কর্মীরা ভয় পাচ্ছে, নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে পারছি না - টুটুল

সাক্ষাৎকার ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
কর্মীরা ভয় পাচ্ছে, নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে পারছি না - টুটুল

শুদ্ধ মননচর্চা ও মুক্তবুদ্ধির প্রকাশই ‘শুদ্ধস্বর’। ‘মন যোগাতে নয়, মন জাগাতে’—বই প্রকাশ করে পাঠকের হাতে পৌঁছে দেয় তারা।

গত ৩১ অক্টোবর প্রতিক্রিয়াশীল চক্র বর্বরোচিত হামলা চালায় সংস্থাটির প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলের ওপর। গুরুতর জখম হয়েও থেমে থাকেননি টুটুল। সেসময় হাসপাতালের বেড থেকেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাকে এভাবে থামানো যাবে না।

ক’দিন বাদেই, ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে বাংলা একাডেমির আয়োজনে শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। শুদ্ধস্বরের কণ্ঠস্বর থামাতে পারেনি হামলাকারীরা। এবারও মেলায় আসছে কিছু নতুন বই। বইমেলা, নতুন প্রকাশনা, আদর্শগত অবস্থান ও সর্বোপরি নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাহীনতা—নানা প্রসঙ্গে সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের ফিচার সম্পাদক তানিম কবির



আপনার বা শুদ্ধস্বরের ওপর হামলার পর এবারের বইমেলা নিয়ে শুদ্ধস্বরের প্ল্যান কী? শুদ্ধস্বরের কি স্টল থাকছে মেলায়?
শুদ্ধস্বর মেলায় থাকবে এটাই প্ল্যান। এর জন্য আমরা তিনটা স্টল বরাদ্দ পেয়েছি। বাংলা একাডেমিতে স্টলভাড়া ইত্যাদি জমা দেয়া হয়েছে। তবে স্টল অপারেট করার মতো লোক পাওয়া যাচ্ছে না। কর্মীরা ভয় পাচ্ছে। আমি কারো নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে পারছি না।

নতুন কোনো বই করছেন কি এবার?
..এই হলো এখন পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম এবং সমস্যা। কয়েকটা নতুন বই প্রকাশের চেষ্টা করছি। কিছু বই রিপ্রিন্টের। আমি এখনো অসুস্থ। চলাফেরা করতে পারছি না।

নতুন বইগুলো কী কী?
চারটা বই করছি এবার, শুদ্ধস্বরের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে কমসংখ্যক বই। বইগুলো হলো—রণদীপম বসুর ‘নাস্তিকতা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ এবং ‘চারবাকদর্শন (২য় খণ্ড)’, মাহবুল লীলেনের ‘পুরাণ থেকে’ ও আমার সম্পাদিত ‘নাস্তিকতা : জীবন-দর্শন ও বিজ্ঞান ভাবনার আলোকে’।

হামলার পর লেখকদের কাছ থেকে কতটা সহযোগিতা পেয়েছে শুদ্ধস্বর?
সহযোগিতা পেয়েছি শতভাগ। কিন্তু অনেকে শুদ্ধস্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহে পড়েছেন। এরকম ঘটনার পর কর্মী পাচ্ছি না। অফিসে পুলিশের তালা। নিরাপত্তার ভরসা নাই...

অফিসে কাজ করতে পারছেন? কাজের সময় তালা খুলছে পুলিশ?
অফিসে তালা থাকলেও মনে ও চিন্তায় তো তালা লাগেনি। আগে একভাবে কাজ করেছি। এখন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে অন্যভাবে কাজ করছি। আমি তো রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী নই যে আমাকে ক্রমাগত জনসংযোগের মধ্যে থাকতে হবে। যেভাবেই হোক আমার কাজ আমি করে যেতে পারলেই হলো।

যে বই বা যে ধরনের বই নিয়ে এতকিছু, সে বই বা সে ধরনের বইগুলো থাকছে এবারও?
যে বইকে ঘিরে এতসব, সেসব বইয়ের প্রতিনিধিত্ব করে শুদ্ধস্বর। শুধু ছেপে বিক্রি করার জন্য শুদ্ধস্বর প্রকাশনায় আসেনি। এটি একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনও। তাই অভিজিৎ-অনন্তের বই শুদ্ধস্বরের স্টলে পাঠকরা পাবেন।


(৩১ অক্টোবরের হামলার পর। ফাইল ছবি. বাংলানিউজ। )

আর কর্মী সংকট কাটিয়ে উঠবেন কিভাবে?
কর্মী সংকট না। কর্মীদের নিরাপত্তার সংকট। আমাদের কাছে তো কোনো বৈধ বা অবৈধ অস্ত্র নাই, অস্ত্রের চর্চা করা আমাদের কাজও নয়। আমাদের হাতে আছে একমাত্র অস্ত্র বই ও লেখা; মন জাগানোর বই, মন জাগানোর লেখা। কিন্তু বাস্তবতা হলো বই দিয়ে জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে এই নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সংবিধান আমাকে দিয়েছে, আমাদেরকে দিয়েছে। আবার যারা ধর্মের নামে বা মতবাদের নামে গোপনে-প্রকাশ্যে মানুষের ওপর আঘাত করে, মানুষকে হত্যা করে তাদের দমন করার নির্দেশও সংবিধান রাষ্ট্রকে দিয়েছে। তাই আমি চিন্তা করছি আমার কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে। শুধু কর্মীদের জন্য না, আমি উৎকণ্ঠিত মুক্তমনা ও মুক্তচিন্তার সব লেখক-প্রকাশক এবং এক্টিভিস্টদের জন্যও।

আপনি আমেরিকা চলে গেছেন, এমন একটা গুজব উঠেছিল। এ বিষয়ে কী বলবেন?
গুজব তো গুজবই। গুজব নিয়ে নতুন করে বলার কিছু আছে বলে মনে করি না।

মেলা আয়োজকদের কাছে আপনার ও আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশা কী এবার?
চাইলে কি পাওয়া যাবে? পাওয়ার কোনো নজির আছে কি? মেলার গেটে লেখককে হত্যা করার পরও যখন মেলার আয়োজকরা শোক পর্যন্ত জানাতে পারেন না, তাদের কাছে চাওয়ার আর কী থাকতে পারে?



বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।