জন্ম-মৃত্যু
জীবন ও মৃত্যু কেউ কারও শত্রু নয় বরং পরস্পরের পরম বন্ধু। মানুষ যতদিন বাঁচে, দু’জনে একে অন্যের হাত ধরাধরি করে চলে।
জীবনের সবচাইতে অমোঘ, অপ্রতিরোধ্য ও বড় সত্যটি আমরা সবসময় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আজন্ম চেষ্টা শুধু প্রাত্যহিক জীবনের অস্তিত্বটিকে একমাত্র ও অদ্বিতীয় সত্ত্বা হিসেবে মেনে নিয়ে তথাকথিত জীবন সংগ্রামটি চালিয়ে যাওয়া। ‘তুমি শুধু এই মুহূর্তটি বেঁচে আছো, বর্তমানটিই তোমার একমাত্র বিবেচ্য। অতীত থেকে শিক্ষা নাও যাতে বড়জোর এগিয়ে আসা সামনের ভবিষ্যতটি ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারো। ’ এ ধরনের বাস্তববাদী দর্শনের ডংকা পিটিয়ে আজ একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবী বিশ্বায়নের স্লোগান দিয়ে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত আরও বেশি করে পরম সত্যটি থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা জন্মের পর জীবনকে নিয়ে এতোই ব্যস্ত থাকি যে, সূর্যোদয়ের পর যে সূর্যাস্ত অনিবার্য তথা জন্মের পর মৃত্যু অবধারিত, তা নিয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র উদ্বেগ নেই। ‘জন্মিলে মরিতে হবে’ গানটি শুনে আমরা তার সুরে আর ভাবে আকুলিত হই ঠিকই, কিন্ত লাইনটির আসল অর্থটি কি বোঝার চেষ্টা করি বা জীবনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি- মৃত্যুর জন্য কোনো প্রস্তুতি নেই?
সাধারণ মানুষের আধ্যাত্মিকতা অনিবার্য মৃত্যুচিন্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মৃত্যুভয় খুব স্পর্শকাতর বিষয় ও একান্ত গোপনীয়। সেজন্যই দৈনন্দিন জীবনে মৃত্যু নিয়ে কথাবার্তা একেবারেই নিষিদ্ধ। মৃত্যুর খবর মানেই দুঃসংবাদ, অশনি সংকেত! শব্দটি অপয়া ও সরাসরি দুর্ভাগ্যের সঙ্গে জড়িত। এর প্রধান কারণ, আমরা সাধারণত ‘দুঃখ ও শোক’র মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারি না বা চাই না। স্টেশনে এসে গাড়ি ফেল করে আমাদের দুঃখ হয়, কোনো কিছু হারালে আমরা নিতান্তই মুষড়ে পড়ি। প্রেমের ব্যর্থতায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। রোগে পড়ে নিজে ও আত্মজনদের কষ্ট দেই। কিন্ত দৈনন্দিন জীবনের ক্ষয়ক্ষতি সাবধান হলে প্রায় সবই এড়ানো সম্ভব। সময়মতো স্টেশনে পৌঁছলে গাড়ি ফেল হয় না। সাবধানে থাকলে পকেটমার টাকা মারতে পারে না। ভালোবাসায় গলদ না থাকলে প্রেম ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই। সময়মতো যথাযথ চিকিৎসায় কঠিন রোগও সারে (জরাক্রান্তরা ব্যতিক্রম)। এক কথায়, পার্থিব প্রায় সব বস্তুগত পরাজয় বা ক্ষতি আমরা বুদ্ধি, ক্ষমতা, অন্যের সহায়তায় আর কৌশলে পরিহার করতে পারি। কিন্ত মৃত্যুকে পারি না কেন? কারণ একটাই, মৃত্যু কোনো পার্থিব ক্ষতি নয়, এটি জীবনেরই একটি অপরিহার্য অংশ। সূর্যোদয় হলে সূর্যাস্ত যেমন অপরিহার্য, তেমনি জন্ম আর মৃত্যুই আমাদের সবার সমগ্র জীবনকাহিনী। প্রথমটি শুরু, দ্বিতীয়টি শেষ।
জন্মকে আমরা খুশীর সঙ্গে অভ্যর্থনা করি। জন্মসংবাদ একটি মহাআনন্দের বিয়য়। উৎসবের আয়োজন করা হয়, আমরা নবীন বাবা-মাকে অভিনন্দন জানাই। জানি এ শিশুটিও একদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে, তারপরও তার দীর্ঘ ও নীরোগ জীবন এমনভাবে কামনা করি যেনো এর জীবন অবিনশ্বর! কারণ, মনে মনে আমরা সবাই এক অসম্ভব ও অবাস্তব অমরত্বের স্বপ্নে বিভোর থাকি! কিন্ত এই অবশ্যম্ভাবী ও অনিবার্য সত্যটিকে না মেনে তো কোনো উপায় নেই। অজানা-অচেনা বিষয়ে মানুষের ভয় সহজাত। কিন্ত আমরা যদি আমাদের পার্থিব জীবনের সমাপ্তিটি মুক্তমনে স্বীকার করে, একে এড়িয়ে না গিয়ে বিষয়টির আকৃতি-প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করি, এর সঙ্গে পরিচিত হই, আমার দৃঢ় বিশ্বাস- মৃত্যুর যে সাধারণ বিভীষিকা আমাদের মনে আজন্ম ভর করে থাকে তা অবশ্যই কমে যাবে। মৃত্যুর উপরে বিশ্বাস আসবে। এবং যাকে বিশ্বাস করতে পারেন, সেই তো পরম বন্ধু। তাহলে বন্ধুকে ভয় কীসের? আসুন দেখা যাক, মৃত্যুর সময়ে আমাদের নশ্বর দেহটিতে আসলে কী ঘটে?
মহাভারতে কৌরবদের মামা শকুণি ও পিতৃস্নেহের মায়ায় বিবশ ও অন্ধ সম্রাট ধৃতরাষ্ট্রের নিষ্ঠুরতায় ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির যখন পাশা খেলায় নির্মমভাবে হেরে চার ভ্রাতা, দ্রৌপদি ও মাতা কুন্তিসহ বারো বছর বনবাস ও ত্রয়োদশ বছরটি বিরাট রাজার প্রাসাদে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে অজ্ঞাতবাসে ছিলেন; সেসময় পিপাসার্ত মাতার জন্য নিকটস্থ দীঘি থেকে পানি আনতে গিয়ে একে একে চার ভ্রাতাই প্রাণ হারান। কারণ, দীঘিটির মালিক ধর্মদেবের (যুধিষ্ঠিরের আসল পিতা) তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হবার পরও তার নিষেধাজ্ঞা না মেনে তারা জলপান করেন।
সবশেষে নিখোঁজ ভাইদের খুঁজতে এসে দীঘির পাড়ে যুধিষ্ঠির পিতা ধর্মদেবের তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে তাকে সস্তষ্ট করে মৃত ভ্রাতাদের প্রাণ ভিক্ষা করে তাদের পুনর্জীবিত করেন। দু’টি প্রশ্ন এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই, কিন্ত তৃতীয়টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। প্রশ্নটি ছিলো, ‘হে প্রিয় যুধিষ্ঠির, মানুষের জীবনে সবচাইতে বড় বিস্ময়টি কী? ‘বিন্দুমাত্র না ভেবেই পাণ্ডবশ্রেষ্ট ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির উত্তর দিলেন, ‘প্রতিটি মানুষই যে একদিন মৃত্যুবরণ করবেই, এ সত্যটি কেউই দিনে একবারও ভাবে না। এমনভাবে সবাই জীবনযাপন করে যেনো সে অমর! তার মৃত্যু নেই। ’
বিবর্তনে মানুষের কল্পনাশক্তির প্রধান ভূমিকাটি নিয়ে বৈজ্ঞানিকদের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্ত তার কিছু কিছু কল্পনা একেবারেই অযৌক্তিক ও অসম্ভব (অমানবিকও বটে) যেমন, চিরযৌবন আর অমরত্বের আকাঙ্ক্ষা।
বাস্তবদৃষ্টিতে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রথম সংজ্ঞাটি হলো, এর সুনির্দিষ্ট সীমারেখা। কিন্ত মূলত সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ভাষা ও কৃষ্টিগত (এবং সামান্য অর্থে হলেও, ধর্ম) সামঞ্জস্যতাই একটি জাতির সামগ্রিক ও ঐক্যবদ্ধ ঐতিহ্যের মুল সূত্র। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত মাত্র একটি রাষ্ট্রই মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে সশস্ত্র ও রক্তাক্ত সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে বিশ্ববাসীর প্রশংসার পাত্র হয়েছে, তা আমাদের প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশ। ছোট-বড়-মাঝারি ত্রিশ হাজার নদ নদী, শত সহস্র বিল, ঝরনা, পুকুর, নালা আর সর্বোপরি সমগ্র দক্ষিণ সীমা বঙ্গোপসাগরের ছত্রছায়ায় এই চির সবুজ দেশটির মানুষ আজন্ম ভাবুক আর রোমান্টিক। যে জন্য এ সোনার দেশে মরমী আর আউল-বাউলের নিত্য আনাগোনা। লালন শাহ, হাসনরেজা, আবদুল করীম, রামপ্রসাদ, গগন হরকরা প্রমুখ হাজারো সাধকদের পদস্পর্শে এ বাংলার মাটি ভাববাদের সিগ্ধ ছোঁয়ায় হাজার বছর ধরে লালিত। মধ্যযুগের পুঁথিসাহিত্য, যাত্রা-পালা গান, ভাওয়াইয়া, কীর্তন আর কতো যে মনকাড়া সহজ সরল সঙ্গীতের নিত্য গুঞ্জনে গ্রামবাংলার আকাশ-বাতাস ভরে থাকে। মওলানা ভাসানী বলতেন, বাংলাদেশে নব্বই হাজার গ্রাম। আসলে আমার দেশটি কয়েকটা হাতে গোনা (তথাকথিত) শহর বাদ দিলে, আজও একটা বিশাল গ্রামই। এখনও ক্ষেতে হাল দিতে গিয়ে বা ফসল কাটার সময় চাষীর উদার কণ্ঠে শোনা যায় ভাটিয়ালী, মুর্শিদি। পল্লীবিদ্যুতের কল্যাণে আজ প্রত্যন্ত গ্রামেও টিভি পৌঁছে গেছে। কিন্ত এখনও অত্যাধুনিক প্রচারযন্ত্রে গ্রামবাংলার কৃষক লালন আর পল্লীগীতিতেই আকৃষ্ট হয় বেশি। আধুনিক বাংলার সূত্রপাত নিয়ে বিদগ্ধজনদের মতের অমিল রয়েছে। কিন্ত একটা কথা ঠিক, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এদেশে জন্ম না নিলে কি বাংলা পাঠ ও লেখা এতো সহজ হতো? কে উদ্ধার করতো আমাদের বঙ্কিম, বিদ্যাসাগরের কঠিন আর দাঁতভাঙা ভাষার জোয়াল থেকে? সেই কবিগুরুও আমাদের চিরকালীন ঐতিহ্য, ভাব আর মরমীবাদেরই শ্রেষ্ঠ ফসল। তার গানে কবিতায় আবহমান বাংলার ‘ওরে আয়, আমায় নিয়ে যাবি কে রে দিনের শেষে শেষ খেয়ায়’ এই ব্যাকুল আহ্বানেরই আসা যাওয়া।
গ্রামের নিরক্ষর যুবক চাষীও সবুজ গাছ, ফুল, গ্রামের নোলক পরা যুবতী দেখে আকুল হয়, গুন গুন করে গান গায়। নিদ্রাহীন রাতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বা ঘুমিয়ে প্রেমের স্বপ্ন দেখে। অনেকে বলবেন, এ সব তো সার্বজনীন, বিশ্বের সব মানুষেরই এটা হয়ে থাকে। আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার কথা আমি জানি না, এ দু’টি মহাদেশে আমার এখনও যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। তবে ইউরোপে দীর্ঘ সময় কাটানো ও আমেরিকায় দু’-তিনবার যাওয়ার পর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাঙালির প্রেমে এখনও যে তেজ আর সমঝোতা না করার সাহস বিদ্যমান, তা ইউরোপে বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর আমেরিকার নেতৃত্বে অর্ধেক ইউরোপজয়ী আর বাকি অর্ধেক পরাজিত হয়ে, আমেরিকার কালচার আর ঐতিহ্যের অন্ধ ভক্ত হয়ে যায়। আজ ইউরোপে যা চলছে তা আমেরিকাতে আগেই ঘটে গেছে। কট্টর জাতীয়তাবাদও এখানে আধুনিক তরুণদের পপ গানে ইংরেজির জায়গায় জার্মানকে স্থলাভিষিক্ত করতে পারেনি, কোনোদিন পারবেও না। আমেরিকান ওয়ে অব লাইফ, আমেরিকার পপ আর ম্যাকডোনাল্ডই এখন ইউরোপিয়ান কালচারের মধ্যবিন্দু।
সাংখ্যবিদদের মতে, ইউরোপ-আমেরিকায় গড়ে ১৪ বছর বয়সেই ছেলে-মেয়েরা যৌনতার সব রহস্যই জেনে ফেলে। সপ্তাহান্তে ডিস্কোশেষে সন্ধ্যায় নতুন-পরিচিত তরুণ-তরুণীরা সারারাত একসঙ্গে থেকেও কেউ কারও নামও জিজ্ঞেস করে না! এখানে নর-নারীর সংক্ষিপ্ত দেহগত মিলনটি ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। প্রেমে বুক ধুক ধুক করা, গলা শুকিয়ে আসা, উদাস হয়ে থাকা, অনিদ্রা বা ক্ষুধাহীনতায় ভোগা এসব ব্যাপারে এখানকার যুবকদের সঙ্গে কথা বলে তাচ্ছিল্যের হাসি শুনেছি। আরও শুনতে হয়েছে, ওসব প্রাচ্যে তোমাদের ব্যাপার। তোমাদের কোনো কাজ নেই, তাই প্রেমে পড়ে কবিতা লেখো আর রাত জেগে দীর্ঘশ্বাস ফেলো। আমাদের অত ফালতু সময় নেই!
আমাদের দেশে এখনও তরুণ-তরুণীরা অ্যাডাল্ট বই পড়ার সময় সাবধানে থাকে, কেউ যেনো না ধরে ফেলে। অবাধ যৌন-স্বাধীনতা আমাদের দেশে কোনোদিন আসবে বলে তো মনে হয় না। নিরক্ষর বাঙালি প্রেমে পড়ে যেমন গুন গুন করে তেমনি যার একটু অক্ষরজ্ঞান আছে সেই প্রেমে পড়ে অন্তত একবার কবিতা লেখার চেষ্টা করে। দেশে-বিদেশে আজও যে অজস্র বাংলা পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয় তার অন্তত চল্লিশ শতাংশই কবিতা। বাংলাদেশ কবিগুরু, জীবনানন্দ, শামসুর রাহমানের দেশ। প্রতি বইমেলায় আমার তো মনে হলো, কবিতার বইই সংখ্যায় বেশি প্রকাশিত হয়ে থাকে। কবিতার বইয়ের ক্রেতারও অভাব নেই। ঢাকায় শুনেছি, শতাধিক দৈনিক পত্রিকার নাকি নিয়মিত সাপ্তাহিক সাহিত্য পাতা রয়েছে। সব পত্রিকাতেই কবিতার জয় জয়কার। এমনকি কিছু ওয়েব পোর্টালে নিয়মিত কবিতা প্রকাশিত হয়। জার্মানিতে পাঁচশোর উপর দৈনিক পত্রিকা। এর একটিরও সাহিত্য পাতা নেই! প্রতিটি ছোট-বড় শহরেই দৈনিক পত্রিকা বের হয়। সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকার তো লেখাজোখা নেই। ভ্রমণ কাহিনী বা মাঝে মধ্যে ছোটগল্প এসবে দেখা যায়, কিন্ত কবিতা? নৈব নৈব চ!
আমরা রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী করি। স্কুল-কলেজসহ নানা সাংস্কৃতিক সংস্থা এসব বরেণ্য কবিদের জন্মদিন, মৃত্যুদিবস পালন করে। সরকারিভাবে, নানা একাডেডিম, রেডিও, টিভি এসব সাড়ম্বরে পালন করে।
মন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রধানরা বাণী দেন। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধও থাকে। আর এখানে? কেউ জানেই না কবে গ্যেটে বা বেথোফেন, মোজার্ট মারা গেছেন, বা তারা জন্মেছিলেনই বা কবে? এখানে টিভির কোনো ওপেন চ্যানেলে (পঞ্চাশের অধিক) এসব বিশ্ববিখ্যাত কোনো লেখক, কবি বা সঙ্গীতজ্ঞদের জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকীতে কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় না বললেই চলে।
যেদিন বাংলাদেশে কবি শামসুর রাহমান প্রয়াত হলেন, তখন জেনেছি, তার মৃত্যুর খবরে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণার কথা। সারা দেশে শোক-মিছিল, সভা, সমাবেশের খবর। শহীদ মিনারে এসব সেলিব্রিটিদের শবদেহ নিয়ে গিয়ে শেষকৃত্যের আগে সাধারণ জনসাধারণের তাদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা ও শোক জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়। হাজার হাজার মানুয়ের ঢল নামে শহীদ মিনারের সামনে। এবারে আমি ঢাকায় থাকার সময় চিত্রনায়ক মান্না পরলোক গমন করেন। তার মরদেহ এফডিসিতে বা শহীদ মিনারে লাখো ভক্তদের ভিড়ে রাখা বা আনাই সম্ভব হয়নি। এসব চোখে (টিভি) না দেখলে আমি নিজেই বিশ্বাস করতাম না। সেজন্যই বলি, বাঙালির চিরন্তন ভাববাদ, প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা, ভালোবাসা, রোমান্টিকতায় আজকের চরম বিশ্বায়নের যুগেও উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো চিড় ধরেনি। কিন্ত মরমীবাদের পুজারীদের তো মৃত্যুভয় থাকার কথা নয়! তাহলে আমরা মৃত্যুভয়ে এতো কাতর কেন? আফ্রিকার আদিবাসীরা, আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানরা যেভাবে অতি সহজে মৃত্যুকে মেনে নেয় (যদিও তারা আদৌ ভাববাদী নয়), আমরা তা পারি না কেন? ইউরোপের হজপিস আন্দোলনের নিরিখে হয়তো এর জবাব পাওয়া যেতে পারে।
আগামী পর্বে পড়ুন হজপিস কী ও কেন
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৬
এসএনএস
**মৃত্যু নিয়ে আবদুল্লাহ আল-হারুনের ধারাবাহিক বাংলানিউজে