ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৮)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৬
দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৮)

মূল: অগাস্ট কুবিজেক
অনুবাদ: আদনান সৈয়দ

[লেখক অগাস্ট কুবিজেক ছিলেন কুখ্যাত নাজি বাহিনীর জনক অ্যাডলফ হিটলারের ছেলেবেলার বন্ধু। তার জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ’ থেকে জানা যায়, হিটলার তার প্রথম যৌবনে গান গাইতেন, ধ্রুপদী সঙ্গীতের সমঝদার ছিলেন, ছিলেন একজন প্রেমিক ও ছবি আঁকায় তার ছিলো আজন্ম ঝোঁক।

তিনি যেনো এক অন্যরকম হিটলার! লেখক অগাস্ট কুবিজেক গ্রন্থটির মাধ্যমে হিটলারের জীবনের অনেক অজানা অধ্যায়কে উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন: অনুবাদক]

পর্ব ৮

তৃতীয় অধ্যায়
যতোই সময় যাচ্ছিলো আমি যেনো তাকে (হিটলার) নতুন করে আবিষ্কার করছিলাম। হিটলার শহর খুব ভালোবাসতো। এর প্রধান কারণ, একজন মানুষের ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে এবং জীবনের বিভিন্নরকম অভিজ্ঞতা অর্জন করতে শহরের অবদান থাকে সবচেয়ে বেশি। অ্যাডলফ নিজে ছিলো খুব উচ্চাকাংঙ্ক্ষী এবং এ কারণে সে নিজেও যারা উচ্চাকাঙ্খী, স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে এবং সুন্দর ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতে পারে- সেই শ্রেণির মানুষদেরকে ভালোবাসতো। এসব দিক বিবেচনায় আনলে দেখা যাবে, গ্রাম হলো অনেক সহজ, সাধারণ, তাৎপর্যহীন, পিছিয়ে থাকা একটি জায়গা যেখানে মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই হিটলারের জন্য উপযুক্ত ছিলো না। পাশাপাশি শহরের উঁচু দালান আর জৌলসু কে না ভালোবাসে? সব মিলিয়ে এটি খুব সহজেই অনুমান করা যায়, সে কেন শহরকে এতো ভালোবাসতো।

অন্যদিকে, সে সবসময় শহরকে গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচনা করতো। কারণ, একমাত্র শহরেই সে তার মেধা ও স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন ঘটনোর যথাযথ সুযোগ পেতো। প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় একটি সম্পর্ক থাকার কারণেই সে শহর ও প্রকৃতির মধ্যে কোনো দূরত্ব দেখতে পেতো না। সে শহরের ব্যস্ত জীবনেও প্রকৃতিকে আবিষ্কার করতে চেষ্টা করতো। তবে এই শিক্ষা অর্জন করতে শুধু ইচ্ছা থাকলেই হয় না বরং প্রকৃতিকে অন্তরাত্মায় লালনও করতে হয়। হিটলারের জীবনেও তাই হয়েছিলো।

আমার বন্ধু বিশেষ এক পন্থায় প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করতো। সে শহরের বাইরে নীরব-নিভৃত কোনো স্থানে একটি জায়গা পছন্দ করতো যেখানে সে বার বার প্রকৃতির ধ্যানে মগ্ন হতে পারে। শহরের প্রতিটা গাছ ও প্রতিটা ঝোপ-জঙ্গল ছিলো তার নখদপর্ণে। সে এমন সব জায়গা বেছে নিতো যেখানে সে কোনোরকম ঝুট-ঝামেলা ছাড়াই নিবিষ্ট মনে প্রকৃতির ধ্যানে বসতে পারে, চুপচাপ নিজের মতো করে সময় দিতে পারে, নিজের পরিকল্পনা এবং জ্ঞানকে ঝালাই করতে পারে।

কখনও কখনও সে টার্মলেইটনওয়েগ শহরের অনতিদূরে কোনো বেঞ্চে বসে উন্মুক্ত পড়াশুনার ব্যবস্থা করতো। সেখানে সে তার প্রিয় বইগুলো পড়তো, স্কেচ করতো ও আপন মনে জল রঙে ছবি আঁকতো। তার প্রথম কবিতাটির জন্ম হয়েছিলো সেখানেই। সে তার আরেকটি প্রিয় জায়গা আবিষ্কার করেছিলো, যেটি ছিলো আগেরটির চেয়ে আরও বেশি নির্জন আর চুপচাপ। সেখানে আমরা দু’জনেই ঝুলন্ত পাথরের উঁচু চূড়ায় একসঙ্গে বসতাম ও উপর থেকে নিচের প্রবাহমান দানিয়ুব নদীকে নিবিষ্টমনে দেখতে পেতাম। দানিয়ুব নদীর এই শান্ত প্রবাহ অ্যাডলফকে দারুণভাবে প্রভাবিত করতো। কতো সময়ই না আমার বন্ধু তার হাজাররকম পরিকল্পনার কথা এই জায়গাটায় বসে আমার সঙ্গে শেয়ার করতো তার কি কোনো শেষ আছে! কখনও কখনও সে তার কল্পনায় বোনা অনেক কথাই আমাকে শোনাতো। মনে আছে, একবার সে ক্রিমহিলডস (১) হানস ভ্রমণের বর্ণময় গল্পটি আমাকে এমনভাবে শুনিয়েছিলো যে, আমি কল্পনার চোখে রাজা বারগানডির ভেড়ার পাল নদীর দিকে ধাবিত হচ্ছে, এ দৃশ্যটি যেনো ঠিক চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছিলাম।

দূরের ভ্রমণের ক্ষেত্রে আমাদের দু’জনের মধ্যে একটা পার্থক্য ছিলো। ভ্রমণের জন্য আমাদের খুব বেশি প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিলো না- এক্ষেত্রে একটি শক্ত লাঠিই ছিলো অতি প্রয়োজীন বস্তু। এসময় প্রতিদিনের কাপড়-চোপড়ের মধ্যে সে পরতো রঙিন শার্ট যা তাকে ভ্রমণের পোশাক হিসেবে বেশ উদ্দীপনা দিতো। তখন সে গতানুগতিক টাইয়ের পরিবর্তে সিল্কের টাই পরতো যার ফিতা দু’টো দু’দিকে ঝুলে থাকতো। সে যখন আমাদের সঙ্গে ভ্রমণে বের হতো তখন নিজের জন্য তেমন কোনো খাবার সঙ্গে নিতো না। তবে সে নিজের জন্য কিছু শুকনো পাউরুটি আর দুধের ব্যবস্থা করে রাখতো। কী সুন্দর চিন্তামুক্ত সময়ই না ছিলো আমাদের!

আমরা রেলগাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি অপছন্দ করতাম এবং দু’জনে পায়ে হেঁটে বেড়াতেই বেশি ভালোবাসতাম। রোববাবের বিশেষ কোনো ভ্রমণে আমার বাবা-মা ট্রেনে চড়ে কান্ট্রি ইন অবকাশ কেন্দ্রে আসতেন। সেখানে তাদের সঙ্গে পায়ে হেঁটে আমরা দেখা করতে যেতাম আর আমার বাবার দেওয়া বিশেষ ভালো খাবার খাওয়ার সুযোগ নিতাম। ভ্রমণের জন্যে আমার বাবার প্রিয় গ্রামটির নাম ছিলো, ওয়ালডিং। ওয়ালডিং গ্রামটি আমাদের কাছেও খুব প্রিয় ছিলো কারণ, এর কাছেই ছিলো রডেল স্ট্রিম যেখানে গরমকালে আমরা প্রাণভরে গোসল করতাম।


একটি ঘটনা আমার স্মৃতিতে এখনও গেঁথে রয়েছে। আমরা দু’জনেই ভালো সাঁতারু ছিলাম কিন্তু আমার মা এ নিয়ে সবসময় দুশ্চিন্তায় ভুগতেন। একবার তিনি আমাদের পিছু নিয়ে একটি বড় পাথরের আড়ালে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। হঠাৎ তাকে আড়াল করে রাখা পাথরটি গড়িয়ে পানিতে পড়ে যায় এবং আমার মা-ও পা পিছলে পানিতে পড়ে গেলেন। আমি কিছুটা দূরে থাকায় মাকে সাহায্য করতে পারছিলাম না কিন্তু হঠাৎ দেখি, হিটলার দ্রুত ঝাঁপ দিয়ে মাকে উদ্ধার করে পানি থেকে উপরে উঠিয়ে নিয়ে এলো। সে সবসময়ই আমাদের পরিবারের একজন হয়ে ছিলো। ১৯৪৪ সালে আমার মায়ের ৮০তম জন্মবার্ষিকীতে সে একটি খাবারের প্যাকেট ডাকযোগে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলো।  

অ্যাডলফের প্রিয় জায়গা ছিলো মুলভিয়েরটেল।  পোস্টলিংবার্গ থেকে হেঁটে হলজপলডি তারপর আবার ইলেন্ডসিমারল থেকে হেঁটে গ্রামাস্টেটেন হয়ে কাঠের দেয়ালবেষ্টিত লিচেনহেগ শহর পর্যন্ত ছিলো আমাদের সীমানা। অ্যাডলফ বড় বড় রাজপ্রসাদের দেয়ালের পুরুত্ব মাপতো এবং তার সঙ্গে রাখা স্কেচ খাতায় তা এর হিসেব-নিকেশ করতে ব্যস্ত হয়ে উঠতো। তারপর সে তার খাতায় পানির নালাবেষ্টিত রাজপ্রসাদের ছবি এঁকে নিতো। সেই সঙ্গে তার খাতায় রাস্তার পাশের ছোট সাঁকো, রাজবাড়ির অট্টালিকার দেয়াল, দেয়ালের চূড়া ও সুউচ্চু মিনারের ছবি ফুটে উঠতো। তার স্কেচ দেখে আমি বিস্ময় প্রকাশ করলে সে বলতো, ‘এই জায়গাটা হলো আমার সনেট চর্চার জন্যে একটি উপযুক্ত স্থান’। যখন আমি এই বিষয়ে আরও বেশি জানতে চাইতাম তখন তার উত্তর ছিলো, ‘বিষয়টা আগে আমাকে লিখতে দাও, তারপর এ নিয়ে কথা হবে’। বাড়ি ফেরার সময় সে শপথ নিতো, স্কেচ খাতায় টুকে নেওয়া তার এই কাজগুলো সে ভবিষ্যতে থিয়েটারের জন্য কোনো কাজে লাগাবে।

সেন্ট জর্জেনে আমরা বিখ্যাত পিজেন্ট (২) যুদ্ধের কারণ ও তার ক্ষতচিহ্ন দেখতে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বিষয়টা উদঘাটন করা আমাদের পক্ষে এতো সহজ ছিলো না। শেষ পর্যন্ত হিটলারের মাথায় একটি অদ্ভুত ধারণা এলো, যে জায়গাটিতে এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিলো সেই এলাকার লোকজনের নিশ্চয়ই যুদ্ধটি সম্পর্কে ভালো কোনো স্মৃতি থেকে থাকবে। তাই সে পরের দিন একা একা সেখানে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে মানুষজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু সেখানেও কোনো হদিস করতে না পেরে সে আমার বাবাকে বুঝিয়ে আমার একদিনের জন্য ছুটি মঞ্জুর করালো। আমরা দু’জনেই সেখানে গেলাম। হিটলার সেখানে দুই দিন ও দুই রাত কাটিয়েছিলো কিন্তু এর ফলাফল কী হয়েছিলো তা আর আমার মনে নেই।

১. ক্রিমহিলডস হলো জার্মান গীতিকাব্য Nibelungenlied-এর নায়িকা
২. ১৫২৪ থেকে ১৫২৫ পর্যন্ত জার্মানিতে পিজেন্ট যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বলা হয়ে থাকে, এ যুদ্ধে এক লাল থেকে তিন লাখ কৃষক ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে হত্য করা হয়েছিলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৬
এসএনএস

আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন-
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-২)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৩)

**দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৪)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৫)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৬)
**দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৭)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।