ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১২)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৮ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৬
দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১২)

মূল: অগাস্ট কুবিজেক
অনুবাদ: আদনান সৈয়দ

[লেখক অগাস্ট কুবিজেক ছিলেন কুখ্যাত নাজি বাহিনীর জনক অ্যাডলফ হিটলারের ছেলেবেলার বন্ধু। তার জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ’ থেকে জানা যায়, হিটলার তার প্রথম যৌবনে গান গাইতেন, ধ্রুপদী সঙ্গীতের সমঝদার ছিলেন, ছিলেন একজন প্রেমিক ও ছবি আঁকায় তার ছিলো আজন্ম ঝোঁক।

তিনি যেনো এক অন্যরকম হিটলার! লেখক অগাস্ট কুবিজেক গ্রন্থটির মাধ্যমে হিটলারের জীবনের অনেক অজানা অধ্যায়কে উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন: অনুবাদক]

পর্ব ১২

পঞ্চম অধ্যায়

অ্যাডলফের বাবার প্রতিকৃতি
অ্যাডলফের পরিবারের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হওয়ার বছর দুই আগেই তার বাবা মারা গিয়েছিলেন। কিন্ত তাতে কী? অ্যাডলফের বাবা মারা যাওয়ার পরেও এই মৃত ব্যক্তিটি তার পারিবারিক দাপট নিয়ে সমানভাবেই যেনো তাদের পরিবারে উপস্থিত ছিলেন। তার মা অ্যাডলফের বাবাকে এতোই ভালোবাসতো বা শ্রদ্ধা করতো যে, তার স্বকীয়তা বলতে কিছু একটা রয়েছে সেটি তিনি বেমালুম ভুলে যেতেন। সে কারণেই অ্যাডলফের মা তার বাবার সব কাজ ও চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে জীবন যুদ্ধে নিজেকে প্রতিনিয়ত দাঁড় করিয়ে রাখতেন। এ কারণে হিটলারের বাবার মৃত্যুর পরেও তিনি বেঁচে রইলেন তাদের গোটা পরিবারজুড়েই। তাদের বাড়িতে ঢোকা মাত্রই দেখতে পাবেন সবচেয়ে ভালো একটি কক্ষে অ্যাডলফের বাবার ছবিটা সুন্দর আর যত্ন করে বাঁধাই করে টানিয়ে রাখা হয়েছে। আমার স্পষ্ট মনে আছে, তাদের রান্নাঘরের দেয়ালের একপাশে অ্যাডলফের বাবা যে হুকাটা ব্যবহার করতেন সেটার লম্বা পাইপটি খুব যত্নের সঙ্গে সাজিয়ে রাখা ছিলো। দেখেই বোঝা যায়, অ্যাডলফের বাবা তাদের গোটা পরিবারের উপর যে কী পরিমাণ প্রভাব বিস্তার করে বেঁচে ছিলেন। যখনই অ্যাডলফের বাবার কোনো বিষয় নিয়ে কথা উঠতো তখনই ক্লারা হিটলার সেই হুকার পাইপের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধায় নত হয়ে কথা বলতে শুরু করতেন। এতেই বেশ বোঝা যায়, কতো ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার সঙ্গে তিনি পারিবারিক এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইতেন।

বাবার প্রসঙ্গ উঠলেই অ্যাডলফ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে নিয়ে কথা বলতো। তাদের দু’জনের মতের মিল না থাকলেও আমি কখনও শুনিনি, সে তার বাবা সম্পর্কে কোনো কূটকথা বলেছে। সত্যি বলতে, সে তাকে সবসময়ই খুব শ্রদ্ধা করতো। অ্যাডলফ এটিকে কখনও ভুল মনে করতো না যে, তার বাবা হিসেবে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা খুব স্বাভাবিক ও এটা তার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তবে তার সৎবোনের কাস্টম কর্মকর্তা স্বামী রাওবালের কথা আলাদা। সে যেভাবে তার সিদ্ধান্ত অ্যাডলফের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতো সেটি সে কোনোভাবেই ভালো চোখে দেখতো না। অ্যাডলফ কখনই তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে তাকে নাক গলাতে দিতো না। তবে তার বাবার ক্ষেত্রে অ্যাডলফের ভাবনাটা ছিলো একেবারেই আলাদা। এমনকী তার মৃত্যুর পরেও। তবে তার বাবার মৃত্যুর পর সে যেনো স্বাধীনভাবে তার চিন্তা-ভাবনায় ডুবে থাকার অবাধ স্বাধীনতা খুঁজে পেয়েছিলো। তার বাবার চারিত্রিক এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাকে মনে মনে বিদ্রোহী করে তুলেছিলো। এ নিয়ে অ্যাডলফ তার বাবার সঙ্গে সামনাসামনি কোনো তর্ক বা বিবাদে না জড়ালেও সে ভেতরে ভেতরে এটা নিয়ে ফুঁসে উঠেছিলো। কথাটি অ্যাডলফ একদিন আমাকে বলেওছিলো। তবে এই ফুঁসে ওঠার বিষয়টি অ্যাডলফ নিজের কাছেই লুকিয়ে রাখতো, যদিও তা ধীরে ধীরে তার অন্তরাত্মায় প্রকট আকার ধারণ করেছিলো।


কাস্টম কর্মকর্তা আলইস হিটলার সবসময় পরিবারের উপর তার আধিপত্য বজায় রাখতেন। পরবর্তীতে তার জীবনের এই চিত্রটি আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখতে পাই। তার বিবাহিত জীবনে সে মোটেও তেমন সুখী মানুষ ছিলো না কিন্তু তার কর্মজীবন ছিলো বর্ণময় ও রঙিন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি কয়েকটি পদন্নোতি লাভ করেছিলেন। কর্মসূত্রে তিনি সবসময় নিজের ছবি উঠিয়ে নিজেই তা বাঁধাই করে রেখেছিলেন। তার বেশিরভাগ ছবিতেই একজন সদা হাস্যোজ্জ্বল সিভিল সার্ভেন্টমার্কা এক অবয়ব ধরা পড়ে। তার চোখ ছিলো কাস্টম কর্মকর্তাদের মতোই বিচক্ষণ। এমনকি কর্মক্ষেত্র থেকে অবসরে যাওয়ার পরও তার একটি ছবি তুলে তিনি তা বাঁধিয়ে রেখেছিলেন। সেটি দেখে মনে হবে, লোকটি মরে গিয়েও যেনো সদা ব্যস্ত কর্মরত একজন মানুষের মতোই জীবন যাপন করেছেন।

তার কাস্টম কর্মকর্তা সহকর্মীদের দৃষ্টিতে আলইস হিটলার ছিলেন একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা। তবে তার এই বেশি পরিমাণ নিষ্ঠার কারণে তিনি খুব একটা জনপ্রিয় ছিলেন না। কর্মের বাইরে তিনি ছিলেন একজন দায়িত্ববান পুরুষ। তিনি তার নিজের কর্ম ও পদবি নিয়ে সবসময়ই গর্ব করতেন।

তার সিভিল সার্ভিস পেশাটি আরও অন্য দশজন সিভিল সার্জন থেকে আলাদা ছিলো না। কেননা তার মতো অন্যরাও অনেক ন্যায় আর নিষ্ঠাকে কাজে লাগিয়ে অস্ট্রো-হাঙেরিয়ান কাস্টমস বিভাগে নিজেদের জীবন সঁপে দিয়েছিলেন। তারপরও তিনি নিজেকে যতোটুকু সম্ভব স্বাতন্ত্র্য রাখতে ভালোবাসতেন। কেউ কেউ মনে করেন, ‘মেইন ক্যাম্ফ’ অ্যাডলফের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ নয় বরং এটি মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্যেই লিখিত। অ্যাডলফ হিটলার অবশ্য মনে করতো, গ্রন্থটিতে তার জীবনের সঙ্গে রাজনীতি যতোটুকু আনার তা আনা হয়েছে বিশেষ করে একজন বাবার তৃতীয় পক্ষের সন্তান হিসেবে তাকে কীভাবে বড় হতে হয়েছে এবং তার বাবার জন্মের বৈধতা নিয়েও অনেক কথা সেই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। আলইস হিটলারের জন্মের বৈধতা নিয়ে স্ট্রোন পারিস চার্চের নথিপত্র অনুযায়ী জানা যায়, ৪২ বছর বয়সী আনা মারিয়া স্কিকলগ্রুবার নামে এক নারী ১৮৩৭ সালের ০৭ জুলাই এক নবজাতকের জন্ম দেন। নবজাতকটির বাবা ছিলেন মারিয়ার কর্মক্ষেত্রের মালিক। কিন্তু সন্তানের বাবার পরিচয় সমাজের কাছে তিনি গোপন রেখেছিলেন। পরবর্তীতে মারিয়া ১৮৪২ সালে যখন জোহান জর্জ হিয়েলডারকে বিয়ে করেন তখন তার সন্তানের বয়স ছিলো পাঁচ বছর। জোহান হিয়েলডার পরবর্তীতে ৮৪ বছর বয়সে উইট্রাতে তার সম্পদ উইল করার সময় বিষয়টি নথিপত্রে উল্লেখ করেছিলেন। ততোদিনে মারিয়ার মৃত্যু হয় এবং আলইস স্কিকলগ্রুবার ব্রাওনাওয়ের একজন পদস্থ কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

যেহেতু তার মায়ের বিয়ের সময় এই অবৈধ সন্তানের কোনো বৈধ স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি তাই তার নাম স্কিকলগ্রুবারই থেকে যায়। সে জোহান নেপোমুক হিয়েলডার নাম রাখা না পর্যন্ত এই নামেই পরিচিত লাভ করেছিলো। জোহান জর্জ হিয়েলডার (পালক পিতা) তার পুত্রের পাশাপাশি তার পালকপুত্রের জন্যেও কিছু সম্পত্তি উইল করে রেখে গিয়েছিলেন। তবে উইল করার একটি শর্ত ছিলো যে, তার নামের শেষে বংশনাম হিসেবে ‘হিয়েলডার’ রাখতে হবে। সেই শর্ত পূরণ করতে ১৮৭৬ সালের ০৪ জুলাই তার নতুন নাম রাখা হলো আলইস হিয়েলডার। জানুয়ারি ০৬, ১৮৭৭ সালে তার এই নামটি সরকারিভাবে নথিবদ্ধ করা হয়। তখন থেকেই আলইস স্কিকলগ্রুবার নিজেকে আলইস হিয়েলডার হিসেবে পরিচয় করে দিতে শুরু করেন। শুরু হয় আলইস হিয়েলডারের নতুন জীবন। নামের শেষে হিয়েলডার বংশখেতাব জুড়ে দেওয়ার কারণে তিনি যেনো অন্যরকম এক মানুষ বনে গেলেন। পরবর্তীতে তার গোটা জীবনে তিনি কখনই স্কিকলগ্রুবার বংশখেতাব ব্যবহার করেননি। শুধু তাই নয়, তিনি তার পুরনো বংশখেতাবটি উচ্চারণ করতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন। তিনি তার নামের শেষে ‘হিয়েলডার’ বসিয়ে বেশ স্বস্তি আর সেই সঙ্গে সামাজিক মর্যাদা পেয়েছিলেন এবং এ নিয়ে বেশ গর্বও অনুভব করতেন। পরবর্তীতে আরও এক ধাপ এগিয়ে হিয়েলডারের বর্ধিত সংস্করণ হয়ে যায় ‘হিটলার’। তার নাম তখন দাঁড়ায়, আলইস হিটলার (অ্যাডলফ হিটলারের বাবা)।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৬
এসএনএস

আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন-
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-২)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৩)

**দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৪)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৫)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৬)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৭)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৮)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৯)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১০)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১১)

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।