ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

ভ্রমণামৃত-৫

বুনো নির্জনতার আমাজনদিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৬
বুনো নির্জনতার আমাজনদিন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ইউজিনের আজকের সকালটা ছিল বড়ই বৃষ্টিবিঘ্নিত। থেকে থেকে মেঘের আনাগোনা।

এই বৃষ্টি ঘনঘোর মেঘ তো মুহূর্তেই আলো ঝলমল রোদ্দুর। তাপমাত্রা ওঠানামা করছে মিনিটে মিনিটে। ১৫ ডিগ্রি থেকে ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার ওঠানামা ভাবা যায় না! পশ্চিমাদের ফাস্ট জীবনযাত্রার মতোই আবহাওয়ারও দ্রুত বদল।

আমরা এশীয়রা ধীরলয়ে চলি, আমাদের আবহাওয়াবদলও ধীর। বাংলাদেশে আজ ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবস’। ভাবলাম, আমেরিকার ওয়েস্টকোস্টে সাহিত্যময় আষাঢ় আমাদের সঙ্গী হয়েই এসেছে।

লেখকের বোহেমিয়ান মন আজ বড় উচাটন। সে মন বাইরেই ছুট দিতে চায়। ইউজিনে আমাদের সাময়িক আবাস ‘স্পেন্সার ভিউ’ থেকে তাকালে অদূরে পাহাড়। পাশে আমাজন পার্ক ও ট্রেইল। আবহাওয়া যাই হোক, আমাজন ট্রেইলের বুনোপথে হারিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই আজ। কিন্তু বোহেমিয়ানাকে টেনে ধরে রাখে জীবন-সংসারের স‍ুতো। আমাজন ট্রেইলে গাইড করে নিয়ে যাবে যে মামণি শায়লা তাকে যেতে হবে সুপারমার্কেটে বাজার করতে।

ট্রেইল যেদিকে, সে মার্কেট উল্টোপথে দু’কিলোমিটার দূরে। কি করা, ঘরের রসদ আর মনের রসদ দু’য়ের মেলবন্ধন করেই আমরা বেরিয়ে পড়লাম কয়েক মাইল হাঁটার প্রস্ত‍ুতি। হন্টন দলে জলি, তুসু, শায়লা। বেরুতে বেরুতে বিকেল তিনটা। অসুবিধা নেই, সন্ধ্যে হতে অনেক বাকি। এখানে সন্ধ্যে নামে নয়টার পর। পাহাড়িপথে ট্রেকিং বিশ্বজুড়ে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ভ্রামণিকদের অন্যতম আকর্ষণ। বাংলাদেশেও ট্রেকিং, ট্রেইলভ্রমণ জনপ্রিয় হচ্ছে। আমি সাধারণ ভ্রামণিক। আমার ভ্রমণ শহর-নগর, পর্যটনস্থানকেন্দ্রিক।

ঘাসগুলো সুন্দর করে ছাঁটা। দু’য়েকজন জগার দেখা গেলো। পাশের আরেক টিলায় পাথরের শিল্প। বন ও পার্কের এক জায়গায় স্কেচবোর্ড খেলুড়েরা গড়ে তুলেছে স্কেটবোর্ড বোউল। ইতোমধ্যে বৃষ্টি থেমে ঝলমলে রোদ উঠেছে। সেই রোদে বুনোপথের হন্টনে আরও মজা পাচ্ছে বোহেমিয়ান মন। নগরকোলাহলবিচ্যূত এই নিসর্গ নির্জনতার মধ্যেই অনেকটা সময় কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠে না। জীবনসংসারের টানে আমাজন পার্ক থেকে বেরিয়ে আবার হিলিয়ার্ড স্ট্রিটে বের হতেই হয়। ব্যস্তসমস্ত রাস্তা, হুস হুস যান চলাচল। ফুটপাথ ধরে দিকে এগিয়ে গেলাম বাজারের দিকে।

সুপারমার্কেটে গিয়ে চোখ আটকে গেলো এর সাইনবোর্ডে। লেখা ‘সেফওয়ে’। ঢাকার রাজনৈতিক ভাষ্যকার বন্ধু মঞ্জুর চৌধুরী ‘সেফওয়ে’ নামে প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াতের সূত্রে ঢাকার ‘সেফওয়ে’র সঙ্গে আছে নিবিড় যোগ। ইউজিনে বাজার করতে গিয়ে ‘সেফওয়ে’ নাম কিছুক্ষণের জন্য নষ্টালজিক করে দিলো। আমাজনের বুনো নির্জনতা থেকে নগরকোলাহলের বাজারি ব্যস্ততার স্রোতে মিশে গেলাম। এখানে আমি খুঁজছিলাম ব্যতক্রমী কিছু। খুঁজে পাওয়া ব্যতিক্রমী পেপিনো মেলন, এভোকাডো নামের দু’টি ফল। ইকুয়েডরের এই ফলের চাষ অনেকটা বনপাহাড় ঘেরা খামারে। বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে ট্রেইল আর বাজার সামলে বাসায় ফেরা হলো। স্মৃতিতে গেঁথে রইলো বৃষ্টিবিঘ্নিত বুনোপথ নির্জনতার এক আমাজন দিন।

**আলোকচিত্রের জন্য মার্কিন মুলুকে
**আমেরিকায় বয়ে নেওয়া বাক্সভরা আবেগ
** চিকেন চাইতেই এলো সিগারেট!
** সাড়ে তিন ঘণ্টার উড়াল ও ম্যাদোনা

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৬
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।