ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৫)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৪ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৬
দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৫)

মূল: অগাস্ট কুবিজেক
অনুবাদ: আদনান সৈয়দ


[লেখক অগাস্ট কুবিজেক ছিলেন কুখ্যাত নাজি বাহিনীর জনক অ্যাডলফ হিটলারের ছেলেবেলার বন্ধু। তার জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ’ থেকে জানা যায়, হিটলার তার প্রথম যৌবনে গান গাইতেন, ধ্রুপদী সঙ্গীতের সমঝদার ছিলেন, ছিলেন একজন প্রেমিক ও ছবি আঁকায় তার ছিলো আজন্ম ঝোঁক।

তিনি যেনো এক অন্যরকম হিটলার! লেখক অগাস্ট কুবিজেক গ্রন্থটির মাধ্যমে হিটলারের জীবনের অনেক অজানা অধ্যায়কে উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন: অনুবাদক]

পর্ব ১৫

ষষ্ঠ অধ্যায়

মৃত্যুর আগে এটি ছিলো বাবার আদেশ। জীবনে যা কিছু হোক না কেন স্কুল কামাই করা যাবে না। এখন সেই দায়িত্বটি যেনো অ্যাডলফ হিটলারের মায়ের কাঁধে ন্যাস্ত হলো। মায়ের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে মাতৃভক্ত পুত্র স্কুলের পাঠের দিকে মনোনিবেশ হওয়ার চেষ্টা করলো। স্টেয়ারেতে থাকাকালীন অ্যাডলফ দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’ পড়ে উদ্দীপ্ত হয়েছিলো এবং সেসময় সে তার স্কুলকে ডিভাইন কমেডির সঙ্গে তুলনা দিয়ে ‘ভয়ংকর একটি জায়গা’ বলে উল্লেখ করেছিলো। স্টেয়ারেতে হিটলার যে বাড়িটায় থাকতো সেটি ছিলো একটি কোর্ট হাউজের বাড়ি। ঠিকানা এলডার ভন সিচিনি, ১৯ গ্রুনমার্কট। তবে সময় সুযোগ পেলেই সে স্টেয়ার থেকে লিজে চলে আসতো। তবে স্কুলের অভিজ্ঞতা তার ভালো ছিলো না মোটেও। যথারীতি পরীক্ষার ফল খারাপ হয়েছিলো এবং স্কুলে পুনরায় তাকে ভর্তি হতে হয়েছিলো। সেপ্টেম্বর ০১ থেকে ১৫ এর মাঝামাঝি সময়ে স্কুল ত্যাগ করার সময় তার ঝুলিতে তখন জ্যামিতিতে ‘অকৃতকার্য’ এবং গণিতেও সেই একই অবস্থা ‘অকৃতকার্য’।

আরেকটি সমস্যা সমান্তরালভাবে হিটলারকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে তা হলো, তাকে একই সময় স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে মানিয়ে চলা এবং সেই সঙ্গে মায়ের সঙ্গেও ভালো সুসম্পর্ক বজায় রাখা। আমি যে বিষয়টি কাছ থেকে দেখেছি, হিটলার তার মাকে সবসময় তার ব্যাক্তিগত জ্বালা যন্ত্রণা বা দুষ্কর্ম থেকে দূ’রে রাখার চেষ্টা করতো। কারণ, মা ছিলো তার গোটা পৃথিবী। কিন্তু প্রতিমুহূর্তে স্কুল জীবনের ব্যর্থতার কারণে সেটি আর তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি। এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো অ্যাডলফের ভবিষ্যত জীবন নিয়ে তার বাবা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আর হয়ে উঠবার নয় এবং বাবা তার অকর্মণ্য বলে পুত্রকে নিয়ে যে ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন তাও সত্য হওয়ার পথে। সব মিলিয়ে সে তার মাকে বোঝাতে অক্ষম হয়েছিলো, কেন সে গতানুগতিক শিক্ষার বাইরে গিয়ে ভিন্নধর্মী একটা জগৎকে ভালোবাসে অথবা কেন সে ভবিষ্যৎ জীবনের উচ্চ পেশা নিয়ে যারা ভাবে সে ঠিক সেই দশজনের মতো নয়। অ্যাডলফ তার জীবনে কতোটুকু কৃতকার্য ছিলো তা বিবেচনায় না এনে সেসময় তার মাকে সবাই যে উপদেশটি দিয়েছিলো তা হলো, আপনার প্রিয় পুত্রটি হাই স্কুল পাশ করতে পারবে কিনা সন্দেহ। স্কুলের গতানুগতিক শিক্ষার বাইরে সে ‘বিকল্প রাস্তা’ হিসেবে তার নিজের জীবনের পথটি নিশ্চয়ই ভেবে রেখেছিলো। এমনও হতে পারে সে হয়তো তার নিজের পথ নিয়ে সংশয় ছিলো এবং মার মৃত্যুর অনেক বছর পরও সে হয়তো তার জীবনের ইস্পিত লক্ষ্য নির্ধারণে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছিলো। অতএব তিনি তার পুত্রের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে ভাবতেই কবরে শায়িত হলেন।

১৯০৫ সালে ঘন বসন্তের মাঝামাঝি সময়ে অ্যাডলফের জীবনটা ছিলো ছুরির আগায় রাখা কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি এক জীবন। কারণ, তাকে তখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে স্টেয়ারের রিয়েলস্কুলে আবার ভর্তি হবে নাকি সে সাধারণ কোনো সরকারি স্কুলে ভর্তি হয়ে যাবে। তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে তার প্রিয় মায়ের শেষ ইচ্ছা পুরণ করবে নাকি স্কুল ত্যাগ করে তার আজন্ম লালিত ইচ্ছা চারুকলায় মনোনিবেশ করবে। শেষ পর্যন্ত সে দ্বিতীয় সিদ্ধান্তেই অটল থাকলো। স্কুলের যাবতীয় পাট চুকিয়ে দিয়ে সে চারুকলায় মনোনিবেশ করবে বলে স্থির করলো। আমি বেশ বুঝতে পারি, মায়ের কথা ভেবে অ্যাডলফকে এই সিদ্ধান্ত নিতে নিশ্চয়ই অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতে হয়েছিলো।

১৯০৫ সালের বসন্তে অ্যাডলফ তার জীবনের সবচেয়ে বেশি কঠিন সময় পার করছিলো। সে সেই সময়টায় কঠিন এক অসুখে ভুগছিলো। রোগটি ছিলো মূলত শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত। তার আত্মজীবনী ‘মেইন ক্যাম্ফ’-এ এই বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। সেই সময় তার বোন পাওলা তার ভাইয়ের এই অসুখকে পাকস্থলিতজনিত সমস্যা বলে উল্লেখ করেছিলেন। আমি সেই সময় প্রায় প্রতিদিনই তাদের বাড়িতে তাকে দেখতে যেতাম। শুধু তাকে দেখতে নয় পাশাপশি স্টেফেনি* সম্পর্কে নতুন নতুন খবর দিতেও আমাকে যেতে হতো। তাকে দেখতে গিয়ে আমার যে ধারণা হয়েছিলো তা হলো, অ্যাডলফ সম্ভবত নিমোনিয়া গোছের কোনো রোগের ইনফেকশনে ভুগছে। পরবর্তীতে আমি জেনেছিলাম, সে খুব বেশি পরিমাণ কাশতো এবং বুকের নীচে ব্যথায় কাতরাতো। এটি ঘটতো যখন আবহাওয়া অনেকটা স্যাঁতসেঁতে থাকতো এবং অস্বাভাবিক রকম আচরণ করতো।

অতএব বিষয়টা বোঝা যায় যে, কেন অ্যাডলফের মা তাকে স্কুলে যেতে খুব বেশি পরিমাণ চাপ দিতেন না। অ্যাডলফ প্রায় সময়ই শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে সে নিয়ম করে স্কুলে যেতে পারতো না। অবশ্য এটা জোর করে বলা কঠিন যে, তার এই শারীরিক অসুস্থতা স্কুলে না যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে সে নিজেই তিল কে তাল করে প্রকাশ করতো নাকি সে সত্যি সত্যিই প্রতিদিন অসুস্থ হয়ে পড়তো। যখন সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতো তখন সে তার বিগত জীবনের স্কুল এবং ক্লাস এই বিষয়গুলোকে ভুলে গিয়ে নিজের ভবিষ্যত জীবনে কীভাবে ভালো শিল্পী হওয়া যায় সেই ভাবনায় ডুবে থাকতো।

দুই বছর এভাবেই উদ্দেশ্যহীনভাবে তার জীবন কাটলো। জীবনের এই সময়টাকে সে তার আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘মেইন ক্যাম্ফ’-এ বর্ণনা করেছে ‘জীবনের শুষ্ক বিরানভূমি’। এটি তার জীবনের একটি ভালো বর্ণনা। তখন সে আর স্কুলে যেতো না, জীবিকার জন্যে কোনো প্রশিক্ষণে অংশও নিতো না, বাড়ির অন্ন ধবংস করা ছাড়া তার আর কোনো কাজ ছিলো না। তবে সে একেবারেই যে অলস ছিলো তা কিন্তু নয়। তার জীবনের এই সময়টায় সে প্রাণভরে ছবি আঁকায় নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে। সে তখন এই সময়ে মনের সুখে স্কেচ করে, ছবি আঁকে, কবিতা লেখে এবং প্রচুর বই পড়ে সময় কাটায়। আমি মনে করতে পারি না সে কখনও কাজ ছাড়া অলস জীবন কাটিয়েছে বা কাজ করতে করতে বিরক্ত হয়ে সটকে পরেছে। তার যদি কোনো কিছু করতে ভালো না লাগতো সে তখন সময় নষ্ট না করে সেই মুহূর্তেই সটকে পড়তো এবং তার যা ভালো লাগে এমন কাজে মনোনিবেশ করতো। সবকিছু মিলিয়ে তার সেই সময়ের কাজগুলো কোনো পরিষ্কার লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে ছিলো না। শুধুমাত্র বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে জীবনের নানান দিক নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করাই ছিলো তার মূল লক্ষ্য। এই বিষয় নিয়ে সে আমাকে কখনও কোনোদিন ব্যাখ্যা দেয়নি। তার কাজ তখন জীবনকে আবিষ্কার করা। জীবনকে বিভিন্নভাবে খোজা এবং সেই সঙ্গে নিজেকেও আবিষ্কার করা। এটাই ছিলো তার একমাত্র আরাধোনা।

*স্টেফেনি, অ্যাডলফ হিটলারের প্রথম মেয়ে বন্ধু। এই নিয়ে পরবর্তী ৭ম অধ্যায়ে বিশদ আকারে তথ্য রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৬
এসএনএস

আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন-
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-২)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৩)

**দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৪)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৫)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৬)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৭)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৮)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৯)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১০)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১১)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১২)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৩
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৪)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।