ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৯)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৬
দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৯)

মূল: অগাস্ট কুবিজেক
অনুবাদ: আদনান সৈয়দ

[লেখক অগাস্ট কুবিজেক ছিলেন কুখ্যাত নাজি বাহিনীর জনক অ্যাডলফ হিটলারের ছেলেবেলার বন্ধু। তার জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ’ থেকে জানা যায়, হিটলার তার প্রথম যৌবনে গান গাইতেন, ধ্রুপদী সঙ্গীতের সমঝদার ছিলেন, ছিলেন একজন প্রেমিক ও ছবি আঁকায় তার ছিলো আজন্ম ঝোঁক।

তিনি যেনো এক অন্যরকম হিটলার! লেখক অগাস্ট কুবিজেক গ্রন্থটির মাধ্যমে হিটলারের জীবনের অনেক অজানা অধ্যায়কে উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন: অনুবাদক]

পর্ব ১৯

সপ্তম অধ্যায়

আমি অনেক দিন ধরেই ভেবেছিলাম যে, অ্যাডলফ লজ্জার কারণেই স্টেফেনির সামনে গিয়ে সরাসরি কোনো প্রস্তাব দিতে পারছে না। কিন্তু তারপর দেখা গেলো ওটা লজ্জার কারণে নয়। প্রেম, ভালোবাসা আর সম্পর্ক নিয়ে সে যেভাবে চিন্তা করে তা অন্যদের মতো নয়। দুজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষের মধ্যে গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় যে প্রণয়ের জন্ম হয় তা সে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। যেহেতু সে এই গতানুগতিক উপায়ে কোনো নারীর প্রণয় ভিক্ষায় তার কোনো বিশ্বাস নেই, সে কারণেই সে কখনও স্টেফেনির সামনা-সামনি দাঁড়ানোর প্রয়োজন মনে করেনি। তার ভাবনা ছিলো, স্টেফেনিই হয়তো একদিন তার কাছে এসে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেবে।  আমি এই বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কখনও কোনো কথা বলতে চাইতাম না কিন্তু যেহেতু যেকোনো বিষয় নিয়েই অ্যাডলফের খুব গভীরভাবে ভাবার একটা অভ্যাস রয়েছে, সে কারণে এই বিষয়টি নিয়েও অ্যাডলফ একটি ভবিষ্যত পরিকল্পনার ছক কেটে ফেললো। যেহেতু মেয়েটি অ্যাডলফের কাছে তখনও পর্যন্ত অপরিচিতা, যার সঙ্গে কোনো বাক্য বিনিময় তখন পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। সেই মেয়েটির জন্য পারিবারিক শিক্ষাবঞ্চিত এবং সব দিক থেকে অকৃতকার্য এই যুবকটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আঁটতে মগ্ন হয়ে গেলো। দীর্ঘ চার বছর পর বিভিন্ন পরিকল্পনা এঁটে সে স্টেফেনির হাত ধরার জন্য অবশেষে মুখ খুলেছিল।

আমরা বিষয়টির আপাত সমস্যা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করেছি, যেহেতু অ্যাডলফ আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিল, স্টেফেনি সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য যোগাড় করে দিতে। মিউজিক সোসাইটিতে যে ছেলেটি সিলি বাজায় তাকে মাঝেমধ্যেই স্টেফেনির ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। তার কাছ থেকেই আমি জানতে পেরেছিলাম, স্টেফেনির বাবা ছিলেন একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা যিনি কয়েক বছর আগেই মারা যান। তার মায়ের রয়েছে একটি সুন্দর বসবাস উপযোগী বাড়ি আর বিধবা হিসেবে সরকারি পেনশনও তিনি নিয়মিতভাবে পেয়ে আসছেন যা তিনি তার দুই সন্তানের উপযুক্ত আর ভালো শিক্ষার জন্য ব্যয় করছিলেন। স্টেফেনি তখন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে ইতোমধ্যেই মেট্রিক পাশ করে ফেলেছে। সুন্দরী হওয়ার কারণে তার আশেপাশে ভক্তের সংখ্যা নেহায়েত কম ছিলো না। নাচ হলো তার প্রিয় একটি সখ এবং গত শীতে সে তার মায়ের সঙ্গে শহরের সব বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল। সিলিস্ট এর তথ্য অনুযায়ী, স্টেফেনির সঙ্গে তখনও কারও বাগদান হয়নি।


অ্যাডলফ আমার এই অনুসন্ধানে অনেক খুশি হয়েছিল এই ভেবে, আর যাইহোক স্টেফেনি এখনও কাউকে কোনো কথা দিয়ে ফেলেনি। এবং সম্ভবত এই শূন্যস্থানটি অ্যাডলফকেই পূরণ করতে হবে। স্টেফেনির উপর আমার অনুসন্ধানে শুধু একটি বিষয় অ্যাডলফ পছন্দ করতে পারেনি। আর তা হলো, স্টেফেনি নাচ ভালোবাসে। শুধু নাচ সে ভালোবাসে তাই নয়, সে নিজেও খুব ভালো নাচিয়ে এবং নাচকে উপভোগ করে। এই বিষয়টি অ্যাডলফেরর নিজস্ব চিন্তা আর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে একেবারেই যাচ্ছিল না। ভাবা যায়, বলরুমে একজন মাথামোটা লেফটেন্যান্টের কাঁধে হাত দিয়ে স্টেফেনি নাচছে! দৃশ্যটি ভাবতে অ্যাডলফের জন্য মোটেও সুখকর কিছু ছিলো না।

কী সেই পেছনে ফেলে আসা যন্ত্রণার ইতিহাস যা অ্যাডলফকে এমন করে ভাবতে তৈরি করে দিলো। কেন সে স্বভাবসুলভ তারুণ্যের প্রকাশকে মেনে নিতে পারছে না? অ্যাডলফের বাবা যিনি নিজেও দেখতে সুদর্শন ছিলেন এবং তার কাজ নিয়ে বেশ আনন্দেই মেতে থাকতেন। তিনিও নিশ্চয়ই অনেক নারীর স্পর্শে এসেছিলেন? তাহলে অ্যাডলফ এমন হলো কেন? দেখতে সে মন্দ নয়, শারীরিকভাবে সুগঠিত, সুঠাম, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা আর সেইসঙ্গে রয়েছে তার অসাধারণ আকর্ষণ করার মতো দু’টো চোখ। সে বারে গিয়ে মদ খাওয়া আর সেইসঙ্গে নাচগান পছন্দ করতো না। এটা ছিলো তার চরিত্রের বিরুদ্ধে। এই বিষয়গুলো তার চরিত্রে সম্পূর্ণভাবেই অনুপস্থিত ছিলো। উপরন্ত তার মা-ও তাকে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে এবং তার মনের অবস্থা পরিবর্তন করাতে কখনও কোনো উৎসাহ যোগাতো না।

বিষয়টি অনেকদিন পর্যন্ত এইভাবে ঝুলে থাকার পর শেষপর্যন্ত আমিই তাকে পরিবর্তন করার জন্য তার পিছু নিলাম। আমি অ্যাডলফের চোখের দিকে তাকিয়ে সরাসরি বললাম, ‘অ্যাডলফ, তোমার অবশ্যই নাচ শেখা উচিত’। কিন্তু নাচের বিষয়টি তার জন্য খারাপ ফল নিয়ে এলো। আমার পরিষ্কার মনে আছে, এই বিষয়গুলোর কারণে অ্যাডলফের সঙ্গে আমার থিয়েটার নিয়ে কোনো তর্ক-বিতর্ক হতো না বা দানিয়ুব নদীর উপরের ব্রিজ নিয়ে নতুন করে আর কোনো আলোচনায় বসা হতো না। আমাদের আলোচনার বিষয় ছিলো তখন একটাই, ‘নাচ’।

যেমনটি তার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। সে কখনও সবকিছুকে একসঙ্গে দেখতে পারতো না। অনেক সময় বিষয়কে সরলীকরণ করতে সে বাধ্য করতো। ‘কল্পনায় একটি ব্যস্ত বলরুমের কথা ভাবো। যেখানে অনেক নর-নারী গানের তালে তালে নাচছে। ’ সে আমাকে একদিন এভাবেই কথাটা বলেছিল। সে যোগ করলো, ‘আর কল্পনায় ভাবো যে, তুমি সেখানে এক বধির। কোনো কথা বলতে পারো না। আর তুমি কোনো গানও শুনতে পাচ্ছ না। এবার তুমি লোকগুলোর কাণ্ডজ্ঞানহীন শরীরটার দিকে তাকিয়ে দেখ। তাদের শরীরটা বোকার মতো দুলছে। তোমার কি মনে হয় না, লোকগুলো আস্ত বন্য আর পাগল ছাড়া আর কিছুই নয়?’

‘অ্যাডলফ, আমি জানি এসব ভালো নয়’। আমি উত্তর দিলাম। ‘কিন্তু স্টেফেনি নাচ ভালোবাসে। তুমি যদি স্টেফেনিকে চাও তাহলে তোমাকেও অন্যদের মতোই তার সঙ্গে নাচতে হবে। তোমাকে এই বন্য কাজটুকু করতে হবেই। ’ ‘না, না, তা কখনই সম্ভব নয়। ’ সে আমাকে চিৎকার করে বললো। তারপর যোগ করলো, ‘আমি কখনই নাচবো না! তুমি কি এটা বুঝতে পারছো না! স্টেফেনি নাচে কারণ, সমাজ তাকে এইভাবে তৈরি করেছে। কারণ, এই সমাজের উপর সে নির্ভরশীল। যখন সে আমার স্ত্রী হবে তখন নাচের প্রতি তার কখনই আর কোনো আগ্রহ থাকবে না’।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৬
এসএনএস

আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন-
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-২)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৩)

**দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৪)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৫)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৬)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৭)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৮)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৯)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১০)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১১)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১২)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৩
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৪)

** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৫)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৬)

** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৭)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৮)


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।