১৯৪২ সালের ২০ আগস্ট কলকাতার খিদিরপুরে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা আবদুর রাজ্জাক, মা নূরুন নেসার চার সন্তানের মধ্যে মেহেরুন্নেসা (রানু) ছিলেন দ্বিতীয়।
১৯৪৭ সালে বিভক্ত ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর তার পুরো পরিবার চলে আসে তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তান (ঢাকায়)।
‘কাফেলা’ পত্রিকায় প্রকাশিত মেহেরুন নেসার ‘রাজবন্দী’ কবিতার দুটি পঙক্তি ছিল আমাদের দাবি মানতে হবে এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। এ কবিতা ছাপা হওয়ার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে আসেন কিন্তু ছোট মেহেরকে দেখে চলে যান এবং তার বাবাকে বলে যান ওকে লেখা বন্ধ করার জন্য। এরপর মেহের অনেকদিন সব প্রকার লেখা বন্ধ রাখে।
তিনি রানু আপা নামে ‘পাকিস্তানী খবর’-এর নারী মহল পাতার সম্পাদনা করতেন। কবি হিসেবে তিনি ছিলেন সত্যিকার কবিতাকর্মী। খুব আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতার সঙ্গে তিনি জনতার সারিতে এসে দাঁড়ান। তার কবি প্রতিভাই আদায় করে নিয়েছিল কবি সুফিয়া কামালের স্নেহ আনুকূল্য।
কবি আবদুস সাত্তার ছিলেন তার অন্যতম বন্ধু। ‘বেগম’ পত্রিকায় তার শেষ কবিতা ‘জনতা জেগেছে’ প্রকাশিত হয় ২৩ মার্চ (তাকে মারার মাত্র তিন দিন আগে) ১৯৭১ সালে।
গণতন্ত্রের দীপ্ত শপথ কণ্ঠে কণ্ঠে সাধা/আমরা ভেঙেছি জয় বাংলার যত বিজয়ের বাধা। একাত্তরে বিহারি অধ্যুষিত মিরপুরে কবি কাজী রোজীর (বর্তমান সংসদ সদস্য) নেতৃত্বে অ্যাকশন কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন কবি মেহেরুন্নেসা। তিনি বিহারিদের হুশিয়ারি উপেক্ষা করে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৩ মার্চ সকাল ১০টায় ১৯৭১ সালে নিজ বাড়িতে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন। এ অপরাধে ২৭ মার্চ তার মা, দুই ভাই ও তাকে নির্মম, নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়। আর তিনি হন বাংলাদেশের প্রথম শহীদ নারী কবি।
১৯৫২ সালে মাত্র ১০ বছর বয়স থেকেই অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দেন তার খুরধার লেখনির মাধ্যমে এবং জায়গা করে নেন সংগ্রাম, ইত্তেফাক, দৈনিক পাকিস্তান, অনন্যা, কাফেলা, বেগম, যুগের দাবিসহ তৎকালিন প্রায় সব পত্রিকায়।
কর্মসূচি: প্রথম শহীদ নারী কবি মেহেরুন্নেসার ৮০তম জন্মবাষিকী উপলক্ষে স্বপ্নকলা সাংস্কৃতিক ভুবন দুপর ২টা থেকে রাজধানীর শাহাবাগস্থ গণগ্রন্থাগার সেমিনার কক্ষে (নিচতলায়) রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাধীনতার ৪৭ বছরে এসেও বরাবরের মতো উপেক্ষিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ নারী কবি ইতিহাস থেকে বিলীনপ্রায় মেহেরুন্নেসার অবদান আত্মত্যাগ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে ডকুফিকশন চলচ্চিত্র ‘শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা’ মেহেরুন্নেসার উপর একক নাট্য ও দুর্লভ আলকচিত্র প্রদর্শনী, মেহেরুন্নেসার লেখা কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, র্যালি ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এসময় সেখানে উপস্থিত থাকবেন- কবি মেহেরুন্নেসার বড় বোন মোমেনা খাতুন, বান্ধবী সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী, স্বাধীন বাংলার কন্ঠযোদ্ধা মনরঞ্জন ঘোসাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সামদানী ফকির, বাংলাদেশের প্রথম নারী এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম, স্ট্রাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহম্মেদ হালিম, গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম, টেলিভিশন অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আফজাল হোসেন খান, স্বপ্নকলার পরিচালকগন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
আরবি/