ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বৃষ্টি কফি | মুনমুন ফেরদৌসী দীপ্তি

গল্প ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৭
বৃষ্টি কফি | মুনমুন ফেরদৌসী দীপ্তি বৃষ্টি কফি | মুনমুন ফেরদৌসী দীপ্তি

গাছের পাতা ও ফুলগুলো বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আনন্দ নৃত্যে মেতে উঠেছে৷ টিনের চাল দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে বৃষ্টির পানিগুলো পড়ছে যেনো কাকটির তৃষ্ণা মেটানোই ওর দায়িত্ব। আনমনে মিতা জানালার পাশে চলে এসেছে৷ এই মধুর দৃশ্যগুলো সে খুব উপভোগ করছে৷ ভাবছে, এই মুহূর্তে গাছের পাতা কিংবা ফুল হতে পারলে মন্দ হতো না৷ মাথায় কে যেনো হঠাৎ ধাক্কা দিলো৷ মিতার এলোমেলো ভাবনাগুলো সব স্থির হয়ে গেলো৷ পিছনে ফিরে দেখে, সুমন মিটিমিটি হাসছে৷

সুমন: কী তুমি যাবে না?

মিতা: সবাই চলে গিয়েছে?
সুমন: হু। কেবল আমি আছি।

চলো কলেজে যাই।

কলেজের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী ব্যাচে মাধব স্যারের কাছে রসায়ন পড়ে। সকাল সাতটা থেকে দুই ঘণ্টা ব্যাচে পড়ে, ওরা কলেজে দশটার ক্লাস ধরে। মিতা ও সুমন বেরিয়ে পড়লো। অনেক কষ্টে সুমন একটা রিকশা জোগাড় করতে পেরেছে। সাধারণত মিতা স্যারের বাসা থেকে বাসে চড়ে কলেজে যায় কিন্তু এই ঝুম বৃষ্টিতে মানুষই চোখে পড়ছে না বাসতো দূরের ব্যাপার। বাধ্য হয়েই মিতা সুমনের সঙ্গে রিকশায় উঠলো।

মিতা: সুমন, রিকশার হুড নামাবে না?
সুমন: হুড না ওঠালে তুমি ভিজে যাবে। এরমধ্যে অনেকখানি ভিজে গিয়েছো। তাছাড়া আমাদের সঙ্গে কোনো ছাতা নেই।
মিতা: ভিজে যখন গিয়েছি কী আর করা। এখন হুড তুলে লাভ নেই।
সুমন: তুমিতো ঠাণ্ডায় কাঁপছো! কথা দিচ্ছি কোনো প্রকার অসভ্যতা তোমার সঙ্গে হবে না।
মিতা: তুমি অসভ্যতা করবে আর আমি চুপচাপ বসে থাকবো, এটা কী করে ভাবলে?

হঠাৎ রিকশা থামিয়ে সুমন নেমে পড়ল। মিতার খুব মায়া হতে লাগলো। ভাবছে, বেচারা এখন ভিজে জ্বর না বাঁধায়।

রিকশাচালক: আপা, যামু না খাড়ামু? আরও জোরে বৃষ্টি আইতাছে।

মিতা কিছু বলার আগেই সুমন দুই হাতে দুই কাপ কফি নিয়ে হাজির। তারপর এক লাফে রিকশায় উঠে বসলো। সুমন এক হাত মিতার দিকে বাড়িয়ে কফিটা নিতে বলল। সে দেখলো, মিতা এখনও কাঁপছে। মিতা কফিটা হাতে নিলো।

মিতা: কফি কোথায় পেলে?
সুমন: পেয়েছি। সামনেই একটা দোকানে কফি বিক্রি করছে। আসো দু’জনে বৃষ্টি কফি পান করি।

বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা পানি কফিতে পড়ে এক তরঙ্গ সৃষ্টি হচ্ছে। সেখানে মিতা চুমুক দিয়ে উপলব্ধি করলো, সুমনের প্রতি তার এক অন্যরকম ভালোলাগা আছে যা অন্যদের প্রতি নেই।

সুমন: আমি কী তোমার হাত ধরতে পারি?

মিতার ভেতরটা তোলপাড় হয়ে গেলো। অজানা এক অনুভূতি তাকে ঘিরে ধরলো। মিতা নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তরে 'না' জানালো।

সুমন: অপেক্ষায় রইলাম।
মিতা: অনেক দেরি করে ফেলেছি। ক্লাসে কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না।
সুমন: আমি অপেক্ষায় আছি। একটুখানি চেয়ে দেখো।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক দ্বিধা নিয়ে মিতা পাশ ফিরেই রইল। হঠাৎ শুনতে পেলো দূর থেকে কে যেনো বলছে, "আপা আমগো বাঁচান! আমরা গাত্তার মইধ্যে পইড়া গেছিগা! ভাইজান ডুইব্যা যায়তাছে। তারফরেও হাতখান বাড়াইয়া রাখছে। আপা ভাইজানরে 'না' কইয়েন না”।

মিতা তখন বুঝতে পারলো, একটা বিশাল গর্তে রিকশার এক চাকা পড়ে সুমন ও রিকশাচালক গর্তে হাবুডুবু খাচ্ছে। রিকশাচালকের মাথা ও সুমনের একটা হাত দেখা যাচ্ছে যে হাতটি মিতার দিকে বাড়ানো। মিতা মুচকি হেসে সুমনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।