ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি? বারী সিদ্দিকী। ফাইল ফটো

তাঁর পূর্ণ নাম আবদুল বারী সিদ্দিকী, গায়ক ও বংশীবাদক, ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার এক সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। মিশে গিয়েছিলেন জন্মস্থান পূর্ব ময়মনসিংহের লোকায়ত সংগীতের প্রবাহে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী মরমী গানের দ্যোতনায় মানুষের হৃদয়ে বেদনার স্পর্শ বুলিয়ে দিয়েছিলেন তিনি তার দরদী কণ্ঠসুধা ও উপস্থাপনায়। জন্ম মাসেই তিনি ৬৩ বছর বয়সে জন্ম-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন স্কয়ার হাসপাতালে।

বারী সিদ্দিকীর গান শুনে মনে হয়, শুধু বাংলার মানুষের জীবনধারা নয়, বরং বিভিন্ন ধর্মের প্রার্থনায়, বিভিন্ন মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনে লোক সংগীত জড়িয়ে আছে শক্তভাবে।

ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, জারি, সারি আর বাউল গানের সুরে মাতোয়ারা হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

হাজার বছর পরেও আবেদন ফুরায়নি এসব গানের। এমন গানই তিনি পরম ভালোবাসায় গলায় তুলে নিয়েছিলেন।

একটি অনন্য গানে তিনি বলেছিলেন: `শুয়া চান পাখি আমার শুয়া চান পাখি,/আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি?/তুমি আমি জনম ভরা ছিলাম মাখামাখি,/আজি কেন হইলে নীরব, মেল দুটি আঁখি রে পাখি;/আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি?’ হাসপাতালের সেই ঘুমের অতল শীতলতা ছেড়ে আবার তিনি ফিরে আসবেন প্রিয় গান নিয়ে, হাজার ভক্ত-শ্রোতা করছেন এমনই প্রত্যাশা ও প্রার্থনা।

অতি শৈশবেই পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি হয় এই বিশিষ্ট গায়কের। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন।

ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারি সিদ্দিকীকে অবলোকন করেন এবং তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাথে যুক্ত হন। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিক নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন।

নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন। এছাড়াও তিনি গোপাল দত্ত ও ওস্তাদ আমিনুর রহমানের কাছ থেকে লোক এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে পাঠ নিয়েছেন।

মূলতঃ বংশী বাদক বারী সিদ্দিকী কথাসাহিত্যিক ও চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের প্রেরণায় নব্বইয়ের দশকে সঙ্গীতে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন এবং অল্পদিনেই বিরহ-বিচ্ছেদের মর্মভেদী গানের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেন।   এক সাক্ষাৎকারে সিদ্দিকী বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ আমার গাওয়ার পেছনে যথেষ্ট উত্সাহ দিয়েছিলেন। মূলত তার সাহস নিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পেয়েছি। ’

১৯৯৫ সালে বারী সিদ্দিকী প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করেন।   এরপর ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দেন। এর মধ্যে ‘শুয়া চান পাখি’ গানটির জন্য তিনি অতি দ্রুত ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। তিনি চলচ্চিত্রে কণ্ঠদান ছাড়াও একাধিক গান রচনা করেছেন।

২০১৩ খ্রিস্টাব্দে সিদ্দিকী ফেরারী অমিতের রচনা ও পরিচালনায় পাগলা ঘোড়া নাটকে প্রথমবারের মতো অভিনয় করেন। তার গানের একাধিক অ্যালবাম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

একটি বিখ্যাত গানে বারী সিদ্দিকী গেয়েছিলেন: ‘রজনী হইস না অবসান/আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন। ’ তিনিও সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন, পথ চেয়ে আছেন সবাই।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
এমপি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।