ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

গুচ্ছ কবিতা | সাজ্জাদ সাঈফ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৮
গুচ্ছ কবিতা | সাজ্জাদ সাঈফ গুচ্ছ কবিতা

সাইলেন্সার
যার যাবে সকল গল্প ফুরিয়ে
পরাজিতদের পানশালায় এভাবেই

তার শুধু মাতলামী দ্যাখে লোকে, তার শুধু অশ্রুত ক্ষত
চারপাশে কাতর তমসা জুড়ে
খাবি খায়,
খাবি খায় ডুবে!
 
বিপন্ন জ্যোতির কাছে
রাঙা হয় সূর্যাস্ত, এরপর,
ধীরে ঝরে
বেলি ও বকুল;
 
যার শুধু
বেদনার আস্তিন
শস্য ও শারদে পূর্ণ হলো, তার কাছে
হাত পেতে বসি,
তারও কি থাকে
অনির্ণীত গান?
হৃদয়ে ব্যাপ্ত
স্বর ও লিপি কোনও?
 
হৃদয় এক সাইলেন্সার নাকি,
বেদনাবোধিতে তাক করা যার দ্রোহ!
 

পোর্ট্রেট
নিষ্ক্রিয় বাঘের থাবা, দেয়ালে ঝুলে আছে দেখে
আমার এই পোর্ট্রেট ভালো লেগে গেছে;
মনে হচ্ছে
পাশেই হরিণী হেঁটে যেতে দিলে
বাঘ টের পেয়ে যাবে;
যেটুকু হাঁটাপথ আঁকা, ছবির অরণ্যে
তেলরঙে শিশিরসিক্ত ঘাসে,
এর ধারে শাপলা ফুটেছে ঝিলে,
এর ধারে ব্রক্ষ্মাণ্ড
বহুকাল কুয়াশাবধির, যেনো, এই বন আমারও নিজের কাছে
বহুদিন ধরে চেনা!
 
এই ছবি ভালো লেগে গেছে, ফুল ফলাদির অধিক সবুজ
এই ট্রাভেলিং,
আর যতোসব
গ্লানি গড়ে ওঠে নগরভর্তি ধোঁকায়
আমি ততো সরে আসি ক্রমে
দ্রাঘিমার কিনারে;
যে রকম
শতাব্দী জুড়ে
অস্বস্তির জ্বর
পৃথিবীকে জাগ্রত রাখছে, ক্রোধে-
দেখি চোখ মেলে আছো, পুষ্পপ্রতিকী চোখ,
এ গোপন প্যাপিরাস, পৃথিবীতে,
বলো তুমি কোথায় পেয়েছো, বলো;
ঘৃণা ভরতি জীবন ডিঙিয়ে প্রিয়, চলো তুমি, কতদূর যাবে চলো!
 
 
ইথার
ইথারে অনেক কথা পড়ে আছে,
একদিন তুমি বলেছো যে কথা
এবং যে কথা আমি বলেছি তোমাকে,
অনেকগুলি কথা পড়ে আছে ইথারে,
হয়তো ভুলে গেছি আমরা,
হয়তো ছাইচাপা পড়ে গেছে কোথাও,
হয়তো স্মৃতিকোষ
হালখাতায় লিখেছে সে কথা,
হয়তো নয়,
কাছাকাছি গাছির কলস
ভরে যাচ্ছে খেজুর ফলানো রসে, এই এক ভারসাম্য, সিভিল দুনিয়ার
বিষ মাখানো ছুরির মতো চোখ
এতসব দেখে নাকি, বলো?
তাই শীত ভালো লাগে,
ভালো লাগে সম্বন্ধ,
ধীর পায়ে সামনে এগোতে থাকা
ভানহীন শীতের সকাল পেয়ে
ভালো লাগে
কচুরিফুলের ডগা,
হাঁস হেঁটে যাওয়া
গ্রাম্য পুকুরঘাট!
 
 
পারাপার
কৃপা ও কর্তব্যের দরজায় দাঁড়িয়ে
একটি লোক
মানুষের রাস্তা পারাপার দেখছে, যেন অনন্তকাল, যেন বৃষ্টির
বড় বড় ফোঁটা এড়াতে মানুষ
ঢুকে যাচ্ছে দোকানে দোকানে,
আর স্বেচ্ছায় ভিজে যাচ্ছে গাছেরা, প্রকৃতির সকল পলেস্তারা, আজ হলো শীতবৃষ্টি, উপকূল উত্তাল হলো-
 
তারপর, নিজস্ব লেখনির কাছে গিয়ে নতমুখে
দাঁড়িয়ে থাকছে সে, যেনো সে রক্তাক্ত, যেনো কবুতর এক
পেয়ে গেছে বুকে শিকারীর কার্তুজ, চারিদিকে কোলাহল,
চারিদিকে প্রবৃত্তির সাথে জুয়া,
খেলছে অনিশ্চয়;
তারপর গান, মেঘমালা বয়ে নিয়ে গেলো
অনন্ত একতারা; রাখালের হারিয়ে ফেলা বাঁশি
জলরঙে ভিজতেছে কোথাও!
 
আর সব নিজস্ব লেখনি, জড়ো করে একা
আগুনে স্নান করছে লোকটি, আগুনে ঝলসে যাচ্ছে খুলি,
আগুনে ভস্ম হচ্ছে হৃদয়,
কৃপা ও কর্তব্যের তাড়া
তুষ হয়ে জ্বলে,
ধিকিধিকি, তাঁর সাথে জ্বলে!
 
 
একদিন
একদিন আমরা নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে বসবো মুখোমুখি,
আর জীবনের সকল ফাটল
বেয়ে উঠে আসা পিপীলিকা
আমাদের খোশগল্পে ঢুকে যাবে
সারি বেঁধে, যে রকম আশ্চর্য তারা,
দ্রুত হয় পালস, মনে হয় এইখানে এরকম না ভাবাও রীতি-
যেমন সন্ধ্যা,
স্যাতস্যাতে হয়ে আছে,
স্মৃতির ভেতর হতে ধেয়ে আসা হাওয়ায়,
রেস্তোরার ভীড় শেষে
একা ও অবিন্যস্ত পাখা
মেলে দিলো
প্রসঙ্গতঃ পাখি;
টুল টেনে নিয়ে
কবিতা লিখতে বসা তারপর, নিয়তি
অকালডুমুর,
তার ভাষা রাত্রির দিকে
তাক করে থাকা তর্জনীর মতো ৠজু, ব্রত অভিমুখী;
যেনো পরবশ নদী
উদাত্ত হলো প্রেমে;
যেনো হাতের রেখা টেনে কেটে দেয়া
ছুরির আঁচড়
হৃদয়ে সারাৎসার সাজিয়ে, সংকোচে বসে আছে!
 
 
খাম
একদিন খুলে খুলে যাবে হৃদয়ের সমস্ত খাম, সমস্ত ভাবনার ডালে
পাখি রঙে বসে থাকবে মেঘ, এর নাম আদ্রতা-
যার সাথে বনিবনা, যার সাথে অপার বাসনা
ভাগাভাগি হলো
খুলে যাবে তারও
গানের গলা ও গীতি;
এ তল্লাটে অজগর হাঁটাপথ,
ঝুরি নামা বটগাছ ছেড়ে
কতদূর বেঁকে চলে গেছে,
নিশান উড়িয়ে ধূলার,
এরপর জনপদ নাকি!
এরপর অপাপস্নিগ্ধ শিশু,
টোলে পড়ে স্বরব্যঞ্জনধ্বনি?
 
মানুষের তবু থাকে সুর, দ্বিধা,
পিতার অসুখ হতে বাতাসে ছড়ানো
ফাংগাস কিছু
টেকে আবহাওয়ায়,
নিরালায় তার ঝরে
অশ্রু ও স্মৃতির বিরাগ!
 
 
নাগর
এ নদীর বুকে
এক বিষণ্ণ ভায়োলিন,
এক নিরালা দুপুর পেয়ে
বেজে ওঠে আজ, আর ম্লানমুখে অতীত এসে
দেখা দেয় দূরে,
পাল তোলা নৌকা হতে
কত অপনেয় পাঠালো সংকেত!
দ্রাঘিমা উজাড় করা হাওয়া
সারাদিন সূর্যকে
দিয়ে গেলো
উদাস এক লাটিমের
ভঙ্গিমা, আর সমবায়
বুনছে মানুষ, এতো দূর
দেখে থাকে নাকি
নগরীর মাইওপিয়া?
নির্ঘুম নাগর নদী,
বেলাশেষে
হাম নিঃশ্বাস ফেলে?
ধানের চারার কাছে এলে
পতঙ্গ সেই কথা তোলে-
তুমি
লেখো
অস্থিপ্রমাদ আর শীতগ্রস্থের ঈশারাসমূহ শুধু!
 
 
সামান্য ঘুমের পরে
একদিন দুঃস্বপ্নের সাপের সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে তোমারও, পৃথিবীর সমস্ত বাগান শীতে জীর্ণ, তুমি জানো কাতরতা কাকে বলে!
-
এই যে সংসার ও সংস্কৃতি                                                                                         
একে অন্যের  ডালে
রোদের মতো ঝলসে যাচ্ছে,
প্যাচ খাচ্ছে সমানে,
আর,
হোয়াইট বোর্ড আকাশে
নীল নীল মেঘ
থুতনি উঁচানো ড্রাগনের মতো বেঁকে
দেখছে জগত-
এখানে,
আমাদের শিশুদের বুকে
নিউমোনিয়া
গাঢ় হয় ক্রমে,
তুমি এও জানো
এ চিত্র সদ্য আঁকানো কারও,
বহুদিন তারে
নাম ধরে ডাকছি না আমি-
দাঁড়ের নিকট এসে
থমকে থাকছে ঢেউ,
ক্ষীণ নদীবুক তবু কি ভরাট, শীতপাখিময়, উৎকীর্ণ!
রাইনাইটিস
::
একবার রাইনাইটিস
একবার ফনিমনসার দিকে চেয়ে
এই ঋতু পরিত্যক্ত লাগে, যেনো ঝোলা ভরতি ঝরা পাতাদের সাথে অগোছালো কথাবার্তায় দুপুর গড়ায় ঝাড়ুদারটির, সামনে ফুটবল মাঠ,
সামনে প্রশস্ত আঙিনা জুড়ে
শীতের ফসল,
তারস্বরে একটি কোকিল
ডাকনামে ডাকছে কাকে যে!
আর ধুলা প্রচণ্ড উৎসাহে
রাইনাইটিস ত্বরান্বিত করে, এই দেশে
এরকমই শীত-
ভূমিহীন মায়ের শিশুর মতো
নগরের সব কটা থাম
জিরজিরে,
কম্পিত হাড়!
 
একবার উদয় অভিমুখে, একবার অথির তপস্যায়
গান থেকে ঘাসফড়িঙেরা
একে একে উড়াল মেলছে হাওয়ায়, আদ্রতা সুনীল-সমর্পিত, তুমি তাকে অনুসরণ করো?
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।