ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ইতিহাস-পর্যটনের প্রামাণ্য ‘সিলেটের প্রত্নসম্পদ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৮
ইতিহাস-পর্যটনের প্রামাণ্য ‘সিলেটের প্রত্নসম্পদ’ ইতিহাস-পর্যটনের প্রামাণ্য ‘সিলেটের প্রত্নসম্পদ’

পর্যটন, ঐতিহ্য আর সমৃদ্ধ ইতিহাসের এলাকা সিলেটের প্রত্নসম্পদ নিয়ে লেখক ও গবেষক মোহাম্মদ আবদুল হাই রচিত ‘সিলেটের প্রত্নসম্পদ’ গ্রন্থটি অনন্য সংযোজন।
 

যদিও বইটি কোনো গবেষণা প্রকল্পের আওতায় রচিত হয়নি, গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে লেখা হয়েছে বলে লেখক দাবিও করছেন না; এটি সিলেটের প্রত্নসম্পদের একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ।
 
যারা প্রত্নসম্পদ নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী, এ নিয়ে কাজ করছেন ও করবেন; তাদের কাছে অনুপ্রেরণার বিষয় হিসেবে গ্রন্থটি গৃহীত হবে।


 
লেখক তার অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে, ইতিহাসের দায়বোধ থেকে অত্যন্ত সযতেœ তুলে ধরেছেন সিলেটের বিভিন্ন প্রত্নসম্পদের বিবরণ; সে সাথে ইতিহাস। শুধু ইতিহাস নয়; অজানা ইতিহাস। বের করে এনেছেন অনেক অজানা কথা। গ্রন্থখানি ইতিহাস পাঠকদেরও কাছে তাই অনুপ্রেরণার বিষয় হবে।
 
যারা পর্যটন নিয়ে আগ্রহী, ভ্রমণপিপাসু; সিলেটের বিভিন্ন স্পটে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বইটি গাইডবুক হিসেবে কাজ করবে। পর্যটন স্পট শুধু প্রাকৃতিক এলাকা হিসেবে বিকশিত হয় না; ঐতিহাসিক অনেক স্থান, স্থাপনাও পর্যটন কেন্দ্র। এরকম অনেকগুলো ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনা রয়েছে সিলেটে যেখানে ঐতিহাসিক নিদর্শনাবলীও রয়েছে; যা প্রত্নসম্পদ হিসেবে পরিচিত। এসব জায়গায় ভ্রমণের আগে বইটি পড়ে নিলে একটি প্রাক ধারণা পাওয়ার পাশাপাশি এসব নিদর্শনের ইতিহাস ও ঐতিহ্যও জানা যাবে।
 
বইটি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে সিলেটের চৈতন্য প্রকাশনী। ১২৪ পৃষ্ঠার বইটির গায়ের মূল্য ধরা হয়েছে ২৫০ টাকা। আসছে একুশে গ্রন্থমেলায়ও বইটি পাওয়া যাবে চৈতন্যের স্টলসহ বিভিন্ন স্টলে।
 
আব্দুল হাই লেখাপড়া করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেধাবী ছাত্র ছিলেন, এখন মেধাবী লেখক। নৃতত্ত্ব, পরিবেশ, পর্যটন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করছেন নিরন্তর। হঠাৎ করে শখ জেগেছে আর বই লিখেছেন- বিষয়টি এমন নয়। সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ের একজন রিসোর্স পার্সনও তিনি।  অনেক কাজ, অধ্যয়ন আছে সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে। গবেষক আব্দুল হাই বর্তমানের ভেতর বাস করেও খুঁজে বেড়ান অতীতকে, অতীতের ইতিহাসকে, আর ইতিহাসের নানান স্মারক, নির্দশন ও স্থাপনার ভেতর দিয়ে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেন ব্রাত্যজনের প্রত্ম-সংস্কৃতি ও তার গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে। তিনি যেসব প্রত্নসম্পদ নিয়ে লিখেছেন, এর অনেকগুলোর সাথে রয়েছে তার চাক্ষুষ পরিচয় সেই শৈশব-কৈশোর থেকে। দেখা থেকে লেখা। আবার জানা থেকে লেখা। এর বাইরে অনুসন্ধান করেছেন। তারপর লিখেছেন অনেকের অজানা কথাগুলো। ইতিহাসের হারিয়ে যাওয়া কথাগুলো।
 
সিলেট কেবল একটি জনপদ নয়, নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর এলাকাই শুধু নয়; সিলেট নানা গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের ধারক-বাহক। এ জনপদের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে ঐতিহাসিক ও প্রাগৈতিহাসিক পুরাকীর্তি ও প্রত্নসম্পদ। এসব পুরাকৃর্তি আর প্রত্নসম্পদের অনেকগুলো পর্যটন কেন্দ্র। বহু পর্যটকের আনাগোনা ঘটে প্রতিদিন। এই প্রত্নসম্পদের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বহু গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। বিজেতারও ইতিহাস। মোহ্ম্মাদ আব্দুল হাই সেগুলোকে মলাটবদ্ধ করেছেন।
 
‘সিলেট প্রত্নসম্পদ’ বইয়ে তিনি মলাটবদ্ধ করেছেন- সিলেটের বিখ্যাত হযরত শাহজালাল (রহ.) এর দরগাহ, টিলাগড়, পেচাঁগড় বা হারুংহুরুং, জৈন্তেশ্বরী মন্দির, বামজঙ্ঘাপীঠ, মেগালিথিক পাথর, সংগ্রামপুঞ্জির মেগালিথিক ও ভিত্তিখেল সতনাথ মন্দির, গ্রীবাপীঠ, রাজা বিজয় সিংহের সমাধিসৌধ, জৈন্তেশ্বরী বাড়ি, জৈন্তাপুর রাজবাড়ি, রায়নগর রাজবাড়ি, সোনাধনের বাড়ি, জাফলং রাজবাড়ি, দুধরাজার বাড়ি, মণিপুরি রাজবাড়ি। এগুলো মূলত সিলেট নগরী, সিলেট সদর, জৈন্তাপুর ও গোয়াইঘাট উপজেলায় অবস্থিত।
 
এসব এলাকার আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনার পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ঐতিহাসিক স্থাপনা আছে, যেগুলোর আলোচনা এ গ্রন্থে নেই। আসল কথা কী- সিলেটের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো নিয়ে লেখকের ধারাবাহিক প্রয়াসের অংশ এই বই। একজন নৃবিজ্ঞানীর চোখ দিয়ে তিনি এগুলো তুলে ধরেছেন। স্থান না পাওয়া বাকিগুলো তার পরবর্তী বইয়ে স্থান পাবে।

(বুক রিভিউ লিখেছেন এহসানুল হক জসীম)
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৮
এসএনএস​

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।