ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

দ্য ভিঞ্চি কোড | ড্যান ব্রাউন (৫ম পর্ব)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৮
দ্য ভিঞ্চি কোড | ড্যান ব্রাউন (৫ম পর্ব) দ্য ভিঞ্চি কোড | ড্যান ব্রাউন (৫ম পর্ব)

ডানিয়েল গেরহাড ব্রাউন (জন্ম ২২ জুন, ১৯৬৪) একজন আমেরিকান থ্রিলার ঔপন্যাসিক। এনজেলস অ্যান্ড ডিমনস (২০০০), দ্য ভিঞ্চি কোড (২০০৩), লস্ট সিম্বল (২০০৯), ইনফারনো (২০১৩) এবং অরিজিন (২০১৭) তার বিখ্যাত থ্রিলার উপন্যাস।

এসব উপন্যাসের নায়ক রবার্ট ল্যাংডন। ক্রিপ্টোগ্রাফি, গোপন চাবি, সিম্বল, কোড এবং কন্সপিরেসি থিওরির জ্ঞান কাজে লাগিয়ে, সব ধরনের গুপ্ত রহস্য ভেদ করে চব্বিশ ঘণ্টার মাঝে তাকে সমস্যার সমাধান করতে দেখা যায়।

তার বইগুলো এযাবত ৫৬টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এবং ২০১২ সাল পর্যন্ত মোট ২০০ মিলিয়নেরও বেশী কপি বিক্রি হয়েছে। এনজেলস অ্যান্ড ডিমনস, দ্য ভিঞ্চি কোড এবং ইনফারনো-এর কাহিনী অবলম্বনে তিনটি সফল চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।
ব্রাউনের এসব উপন্যাসে প্রধান চরিত্র, ল্যাংডন। পাশাপাশি এসবে মটিফ হিসেবে এমনভাবে ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু এবং খ্রিস্টানত্ব অন্তর্ভূক্ত হতে দেখা যায়, যা বিতর্ক উসকে দেয়। তার থ্রিলার নোভেল দ্য ভিঞ্চি কোড এর শুরুতেই প্যারিস ল্যুভর মিউজিয়ামে এক লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। এই খুনের সঙ্গে জড়িয়ে যায় প্রধান চরিত্র ‘সিম্বলজিস্ট’ প্রফেসর রবার্ট ল্যাংডনের নাম। রহস্য ভেদ করতে আরও এগিয়ে আসেন ক্রিপ্টোলজিস্ট সফি নাজে। ঘটনার অব্যবহত পরই এ দু’জন, তাদের প্রতীক ও ক্রিপ্টোগ্রফির জ্ঞান ব্যবহার করে, পরস্পরবিরোধী গুপ্তসংঘ প্রায়োরি অব সিয়ন ও অউপাস ডেই-এর অজানা সব লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড আবিষ্কার করতে শুরু করেন। এক পর্যাযে তারা জানতে পারেন, সহচর মেরি মাগদালিনের গর্ভে যিশু খ্রিস্টের সন্তান জন্ম এবং তার বংশধরদের টিকে থাকার মতো বিতর্কিত বিষয় নিয়ে গোপন এই বিবাদের সূত্রপাত... 
 

 
দ্য ভিঞ্চি কোড
মূল: ড্যান ব্রাউন
ভাষান্তর: সোহরাব সুমন

 
অধ্যায় ৪
ক্যাপ্টেন বিজু ফ্যাশ তার চওড়া কাঁধ দুটি পেছনে ঠেলে দিয়ে আর থুতনিটি শক্ত করে বুকের দিকে গুটিয়ে ক্ষেপাটে একটি ষাঁড়ের মতো হাঁটতে শুরু করেন। পেছনের দিকে আঁচড়ানো তেল দেওয়া কালো চুলগুলো, যুদ্ধ জাহাজের গলুয়ের মতো সামনের দিকে বেরিয়ে থাকায়, তার রোমশ ভ্রু ওয়ালা কপালের মাঝ বরাবর সিঁথিটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আগে বাড়তেই, মনে হচ্ছিল তার কালো চোখ দুটি যেন সামনের পৃথিবীটুকু ঝলসে দেবে, ওর আগুন সদৃশ বিচ্ছুরিত এক স্পষ্টতা সব বিষয়ে তার আপোসহীন আন্তরিক সুনামের কথা জানান দিচ্ছে।
গ্লাস পিরামিডের নিচে ভূগর্ভস্থ গহ্বরের বিখ্যাত মার্বেলের সিঁড়ি ধরে নামাতে থাকলে ল্যাংডন ক্যাপটেনকে অনুসরণ করে। নামার সময়, তারা মেশিন গান সমেত জুডিশিয়াল পুলিশের দুজন সশস্ত্র গার্ডের মাঝ দিয়ে এগিয়ে যায়। বার্তাটি খুবই স্পষ্ট: ক্যাপটেন ফ্যাশের অনুগ্রহ ছাড়া আজ রাতে কেউই ভেতরে বা বাইরে যেতে পারবে না।
একতলা থেকে নিচে নামার সময়, ল্যাংডন ক্রমশ বাড়তে থাকা সচকিত এক উত্তেজনার সঙ্গে লড়াই করে। ফ্যাশের উপস্থিতি আর যাই হোক না কেন আনন্দদায়ক নয়, এবং এ মুহূর্তে ল্যুভরেও অনেকটা বিষাদময় এক আবহ বিরাজ করছে। সিঁড়িটিও, অন্ধকার মুভি থিয়েটরের মতো, প্রতি ধাপে দৃঢ়ভাবে আঁটা সুবেদী ট্রেড-লাইটিং এর সাহায্যে আলোকিত। ল্যাংডন তার মাথার উপরকার কাচে নিজের পা ফেলার প্রতিধ্বনি শুনতে পায়। উপরের দিকে তাকাতেই, দেখে ফোয়ারা থেকে ভেসে আসা আবছা আলোকিত একরাশ হালকা জলীয় বাষ্প স্বচ্ছ ছাদের বাইরের দিকটা ঘোলাটে করে দিচ্ছে।
“আপনি কি সমর্থন করেন?” চওড়া থুতনি উপরের দিকে কাত করে, ফ্যাশ জানতে চায়।
ভান করতে ক্লান্ত লাগায়, ল্যাংডন দীর্ঘশ্বাস ফেলে। “হ্যাঁ, আপনাদের পিরামিডটি চমৎকার। ”
ফ্যাশ ঘোঁত করে বলে ওঠে। “প্যারিসের মুখের ওপর আস্ত এক ক্ষত। ”
প্রথম আঘাত। ল্যাংডন বুঝতে পারে তার নিমন্ত্রাতা একজন শক্ত লোক হওয়ায় তাকে খুশি করা কঠিন। এই পিরামিড তৈরির সময় প্রেসিডেন্ট মিতেরা একে সর্ব মোট ৬৬৬ টুকরো কাচ দিয়ে বানাবার যে সুস্পষ্ট ইচ্ছা ব্যক্ত করে ছিলেন- ৬৬৬ (৬৬৬) কে শয়তানের সংখ্যা বলে বিশ্বাস করা ষড়যন্ত্রতত্ত্বের অন্ধ অনুরাগীদের মাঝে উদ্ভট এই অনুরোধ সব সময়ই ঝাঁঝালো একটি প্রসঙ্গ হিসেবে আলোচিত হয়ে এসেছে- এ ব্যপারে ফ্যাশের আদৌ কোনো ধারণা রয়েছে কী-না ভেবে তিনি খুব অবাক হন।
ল্যাংডন বিষয়টি টেনে আনবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন।
তারা ভূগর্ভস্থ মিলনায়তনের দিকে আরও নিচে নামতেই, ছায়ার মাঝ থেকে ধীরে ধীরে উন্মুক্ত জায়গা দৃশ্যমান হয়। উপরিতলের সাতান্ন ফুট গভীরে গড়ে তোলা, ল্যুভরের নব নির্মিত ৭০,০০০-বর্গফুট আয়তনের এই মিলনায়তনটি একটি অসীম গহ্বরের মতো বিস্তৃত। উপরে ল্যুভরের বাইরের চেহারার মধু-রঙা পাথরের সঙ্গে মিল রেখে উষ্ণ ওকার মার্বেলে নির্মিত, ভূগর্ভস্থ হলটি সাধারণত রোদ আর পর্যটক সমাগমে সরগরম থাকে। আজ রাতে, তবু, জনমানবশূন্যতা আর অন্ধকার লবির, পুরো জায়গাটিকে শীতল আর সমাধির মতো আবহ এনে দিয়েছে।
“আর জাদুঘরের নিয়মিত নিরাপত্তারক্ষীরা?” ল্যাংডন জানতে চান।
“অও ক্যাহোতেন- আটক আছে,” জবাবে ফ্যাশ বলে, মনে হয় ল্যাংডন বুঝি ফ্যাশ কর্মীদলের সম্ভ্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। “বোঝাই যাচ্ছে, আজ রাতে এমন একজন প্রবেশাধিকার পেয়েছে যার পাওয়ার কথা ছিল না। ল্যুভরের স্যুলি উইং-এর রাতের সব ওয়ার্ডেনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমার নিজস্ব এজেন্টরা রাতের জন্য মিউজিয়ামের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে।
ফ্যাশের সঙ্গে তাল রেখে দ্রুত হাঁটতে গিয়ে, ল্যাংডন হেলে পড়েন।
“জ্যাক সোনিয়াকে আপনি কতটা চিনতেন?” ক্যাপটেন জানতে চান।
“বলতে গেলে, একেবারেই না। আমাদের কখনও দেখা হয়নি। ”
ফ্যাশেকে বিস্মিত দেখায়। “আজরাতে আপনাদের প্রথম দেখা হওয়ার কথা ছিল?”
“হ্যাঁ। আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যর্থনায় আমার বক্তৃতা শেষে আমরা দেখা করব বলে ঠিক করি, তবে তাকে কখনই দেখা যায়নি। ”
ফ্যাশ ছোট্ট একটি খাতায় ছড়ছড় করে কিছু একটা লেখেন। হাঁটার সময়, ল্যাংডন ল্যুভরের স্বল্প-পরিচিত পিরামিডটি একনজর দেখেন- লা পিহামিদে আভেকসি- দুইটি তলার মাঝের অংশের লাগোয়া ছাদ থেকে স্ট্যালাকটাইটের মতো ঝুলন্ত বিশাল একটি উল্টো স্কাইলাইট। ফ্যাশ কয়েক কেতা সংক্ষিপ্ত সিঁড়ি দিয়ে পথ দেখিয়ে ল্যাংডনকে একটি খিলান ওয়ালা সুড়ঙ্গের মুখে নিয়ে আসেন, যার উপর একটি সাইনপোস্টে লেখা: দেনো। দেনো উইং ল্যুভরের তিনটি মূল অংশের মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত।
“আজ রাতের সাক্ষাতের জন্য কে অনুরোধ করেছিল?” হঠাৎ-ই ফ্যাশ জিজ্ঞেস করেন। “আপনি না সে?”
প্রশ্নটি অস্বাভাবিক মনে হয়। “মিস্টার সোনিয়া করে ছিলেন”, তাদের সুড়ঙ্গে প্রবেশের সময় ল্যাংডন জবাব দেন। “তার সেক্রেটারি কয়েক সপ্তাহ আগে ইমেইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি জানায়, কিউরেটর শুনেছেন এ মাসে আমি প্যারিসে বক্তৃতা করব এবং এখানে অবস্থানের সময় আমার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে আলোচনা করতে চান। ”
“কোন বিষয়ে আলোচনা?”
“আমি জানি না। শিল্প, আমি মনে করেছিলাম। আমাদের একই ধরনের আগ্রহ। ”
ফ্যাশকে সন্দিগ্ধ দেখায়। “আপনার কোনো ধারণাই ছিল না কোন বিষয়ে আপনারা কথা বলতে যাচ্ছেন?”
ল্যাংডন জানতেন না। তখন আগ্রহী হলেও সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানতে তিনি স্বস্তি বোধ করেননি। শ্রদ্ধেয় জ্যাক সোনিয়া গোপনীয়তা বজায় রাখতে পছন্দ করতেন এবং কারও সঙ্গে দেখা করতে খুব কমই সম্মত হতেন। তার সঙ্গে দেখা করবার সুযোগ হচ্ছে তাতেই ল্যাংডন খুশি ছিলেন।
“মিস্টার ল্যাংডন, আপনি কি অন্তত ধারণা করতে পারেন আমাদের খুন হওয়া ভিকটিমকে যে রাতে হত্যা করা হয় সে রাতে তিনি আপনার সঙ্গে কী কথা বলতে চেয়ে ছিলেন? এটা অবশ্যই কাজে লাগবে। ”
প্রশ্নের তীক্ষ্ণতা ল্যাংডনকে অস্বস্তিতে ফেলে। “আমি সত্যিই ভাবিনি। আমি জানতে চাইনি। মুখোমুখি হতে পারব ভেবেই সম্মানিত বোধ করেছি। আমি সোনিয়ার কাজের একজন ভক্ত। তার লেখা প্রায়ই আমি ক্লাসে পড়াই। ”
কথাগুলো ফ্যাশ তার খাতায় টুকে রাখেন।
এই দুজন লোক এবার দেনো উইং-এ প্রবেশ টানেলের অর্ধেক পথ চলে এসেছেন এবং ল্যাংডন একেবারে শেষ প্রান্তে উপরে ওঠার এসকালেটর জোড়া দেখতে পান, দুটিই স্থির।
“তাহলে আপনি তাকে আগ্রহের কথা জানাতেন? ফ্যাশ জানতে চান।
“হ্যাঁ। আসলে, গেলো বছরের বেশিরভাগ সময় আমি মিস্টার সোনিয়ার দক্ষতার প্রাথমিক বিষয়গুলো নিয়ে একটি বইয়ের খসড়া প্রস্তুত করেছি। তার জ্ঞানের বিস্তারিত সংগ্রহের জন্য আমি পথ চেয়ে ছিলাম। ”
ফ্যাশ তাকান। “মাফ করবেন?”
আপাতদৃষ্টিতে এই শব্দগুচ্ছের অনুবাদ হয় না। “এ বিষয়ে আমি তার মতামত জানতে অপেক্ষা করছিলাম। ”
“বুঝতে পেরেছি। বিষয়টি তাহলে কী?”
ল্যাংডন অস্বস্তি বোধ করেন, কীভাবে বলবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। “মূলত, পাণ্ডুলিপিটি দেবী উপাসনার প্রতিমাবিদ্যা তথা আইকোনোগ্রাফি সম্পর্কিত- নারী সাধুতার ধারণা এবং এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শিল্প এবং প্রতীক। ”
ফ্যাশ তার মাংসল একটি হাত চুলের ওপর চালায়। “আর সোনিয়া এ বিষয়ে পণ্ডিত ছিলেন?”
“তার চেয়ে বড় কেউই নেই। ”
“বুঝতে পারছি। ” ল্যাংডন টের পান, ফ্যাশে কিছুই বুঝতে পারেনি। জ্যাক সোনিয়াকে বিশ্বের সেরা আইকোনোগ্রফার হিসেবে গণ্য করা হয়। উর্বরতা, দেবী মার্গ, উইকা ও পবিত্র নারী সম্পর্কিত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহের প্রতিই কেবল জ্যাক সোনিয়ার ব্যক্তিগত অনুরাগ সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং কিউরেটর হিসেবে টানা বিশ বছর দায়িত্ব পালনকালে ল্যুভরকে তিনি বিশ্বের সর্ব বৃহৎ দেবী শিল্প সংগ্রহে সহায়তা করে এসেছেন- দেলফি মন্দিরের সমাধি হতে শুরু করে প্রাচীন গ্রীক নারী পুরোহিতের লেবরিস এক্স তথা দুমুখো কুঠার, স্বর্ণের কাদ্যুসিয়াস জাদুদণ্ড, আইসিসের কাঁচুলির গিট হিসেবে পরিচিত, দাঁড়িয়ে থাকা ছোট ছোট দেবদূতের মতো দেখতে শত শত জেট অ্যাঙখ্, অশুভ আত্মা দূর করতে প্রাচীন মিশরে ব্যবহৃত সিসট্রাম র‌্যাটল বা ঝুমঝুমি, এবং হোরাসকে দেবী আইসিসের স্তন্যদানের দৃশ্য তুলে ধরা বিস্ময়কর সব মুর্তিতে সাজিয়ে তুলেছেন। ”
“সম্ভবত জ্যাক সোনিয়া আপনার পাণ্ডুলিপির কথা জানতেন?” ফ্যাশ প্রস্তাবের স্বরে বলেন।
ল্যাংডন মাথা ঝাঁকান। “আসলে, এখন পর্যন্ত আমার পাণ্ডুলিপির কথা কেউই জানে না। এটি এখনও খসড়া পর্যায়ে রয়েছে, আর আমার সম্পাদককে ছাড়া অন্য কাউকে আমি এটি দেখাইনি। ”
ফ্যাশ একেবারে চুপ হয়ে যান।
কেনো পাণ্ডুলিপিটি কাউকে দেখাননি তার কারণ ল্যাংডন খুলে বলেন না। তিনশো পাতার খসড়ায়- আপাতত শিরোনাম সিম্বল অব দ্য লস্ট সেইক্রিড ফেমিনিন: হারানো পবিত্র নারী প্রতীক- ধর্মীয় প্রতিমাবিদ্যার খুব প্রথাবিরোধী কিছু ভাষ্য প্রতিষ্ঠা করবার চেষ্টা করা হয়েছে যা নিঃসন্দেহে বিতর্কিত।
এবার, ল্যাংডন নিশ্চল এসকালেটরগুলোর কাছাকাছি এসে, থেমে, বুঝতে পারেন ফ্যাশ আর তার পাশে নেই। পাশ ফিরে, ল্যাংডন দেখতে পান ফ্যাশ একটি সার্ভিস এলিভেটরের কয়েক গজ দূরে দাঁড়িয়ে আছেন।  
“আমরা এই এলিভেটরে উঠব। ” লিফ্টের দরজা খুলে গেলে ফ্যাশ বলেন। “আমি নিশ্চিত আপনি জানেন, পায়ে হেঁটে এখান থেকে গ্যালারি অনেক দূর। ”
এলিভেটর দোতলা বেয়ে দোনো উইং-এ ওঠার দূরত্বটুকু এগিয়ে দিবে জানার পরও, ল্যাংডন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন।
“কোন ভুল হলো?” ফ্যাশ দরজা ধরে, অস্থিরভাবে তাকিয়ে থাকে।
ল্যাংডন নিঃশ্বাস ছেড়ে, উন্মুক্ত এসকেলেটরের দিকে আকুলভাবে ফিরে তাকান।
ছেলে বেলায় একবার, ল্যাংডন পরিত্যক্ত একটি কূপের গর্তে পড়ে যান এবং উদ্ধারের আগ পর্যন্ত ঘণ্টা খানেক সেই সংকীর্ণ জায়গার অথৈ জলে ভেসে থাকতে গিয়ে প্রায় মরতে বসেছিলেন। তখন থেকে, তিনি- এলিভেটর, সাবওয়ে, স্কোয়্শ কোর্টের মতো- আবদ্ধ জায়গাতে অবস্থানের ভীতিতে আক্রান্ত। এই এলিভেটর পুরোপুরি নিরাপদ একটি যন্ত্র, ল্যাংডন বার বার নিজেকে বলতে থাকেন, যদিও কথাটি তিনি মোটেই বিশ্বাস করছেন না। এটি আবদ্ধ শ্যাফটের ভেতর ক্ষুদে একটি ধাতব বাক্স! দম বন্ধ করে তিনি লিফটের ভেতর পা ফেলেন, পিছলে দরজা বন্ধ হওয়ার সময় তিনি এড্রেনালিনের পরিচিত শির শির উদ্দীপনা টের পান। মাত্র তো দু-তলা। দশ সেকেন্ড।
“আপনি এবং মিস্টার সোনিয়া”, লিফ্ট চলতে শুরু করলে ফ্যাশ বলেন, “আপনারা আদৌ কথা বলেননি? কখনও যোগাযোগ হয়নি, কখনই মেইলে একে অপরকে কিছু পাঠাননি?”
 
চলবে…
 

সোহরাব সুমন সমকালীন একজন কবি। জন্ম বেড়ে ওঠা এবং পড়ালেখা ঢাকায়। তার মননশীলতা তার সৃষ্টিকর্মেই ভাস্বর। কবির নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্য প্রচেষ্টা এবং সৃজনশীলতা তার আশপাশের পরিচিত বিশ্ব তার কাব্যিক রূপ-রস-গন্ধ সমেত পাঠকের চেতনায় জীবন্ত হয়ে উঠতে বাধ্য। একনিষ্ঠ এই কবি দীর্ঘদিন যাবৎ কবিতা, ছোটগল্প, সৃষ্টিশীল ফিচার লেখার পাশাপাশি অনুবাদ করে চলেছেন। ‘শুধু তুমি কবিতা’, ‘কবিতার বিস্বাদ প্রহর’ এবং ‘ভালোবাসি তোমার ছোঁয়া’ তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, ‘আরববিশ্বের গল্প,’ ‘মিশরের শ্রেষ্ঠ গল্প,’ ‘ইরাকের শ্রেষ্ঠ গল্প,’ ‘ইতালির শ্রেষ্ঠ গল্প’ এবং ‘যুদ্ধের মেয়ে’ তার এযাবৎ প্রকাশিত অনুবাদ গল্পসংকলন। ‘স্পেনের শ্রেষ্ঠ গল্প’ তার সম্পাদিত গল্পসংঙ্কলন। ‘দ্য ট্রাভেলস অব মার্কো পলো’ তার অনূদিত অভিযাত্রিক ভ্রমণকাহিনী। বিখ্যাত মার্কিন লেখক এবং ইতিহাসবিদ হ্যরল্ড ল্যাম্ব রচিত সুলেমান দ্য মেগনেফিসেন্ট সুলতান অব দ্য ইস্ট তার অনূদিত ইতিহাস গ্রন্থ। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে বিখ্যাত লেখক এনিড ব্লাইটন এর ‘শ্যাডো দ্য শিপ ডগ’। তাছাড়া তার অনূদিত একই লেখকের ‘রহস্য দ্বীপ’ কিশোর উপন্যাসটিসহ বিশ্বসাহিত্যের বেশকিছু বিখ্যাত বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। সঙ্গত কারণেই তার কবিতা, অন্যান্য লেখা এবং অনুবাদকর্ম পাঠকমহলে বহুল সমাদৃত।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৮
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।