গত ২১ অক্টোবর নগরের হাফিজ কমপ্লেক্সে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছিলেন স্মরণোৎসব কমিটির আহ্বায়ক সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ।
ওই প্রেস ব্রিফিং উপস্থাপনার সময় আহ্বায়ক কমিটির ৭ম সদস্য সাংস্কৃতিক কর্মী আমিনুল ইসলাম লিটন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্থলে ‘দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন’ উচ্চারণের পর তাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার দাবি ওঠে।
এরপর বিএনপির লোক হিসেবে কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে থাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকেও বাদ দেওয়ার দাবি তোলেন আওয়ামী লীগের কয়েক নেতাকর্মী।
এর আগেও এক প্রস্তুতি সভায় স্মরণোৎসব কমিটির সদস্য সচিব থেকে সিসিক মেয়রকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব তোলা হয়।
আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কাছে অবশ্য সেই প্রস্তাব টেকেনি। ওইদিন প্রেসব্রিফিংয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোনো ব্যক্তি বা দলের নন। কেবল জামায়াত ছাড়া সব দলের, শ্রেণী-পেশার লোক কমিটিতে থাকতে পারেন। তাই এখানে নগর পিতা হিসেবে আরিফুল হক চৌধুরী কমিটির সদস্য সচিব থাকবেন।
আবুল মাল আব্দুল মুহিত আরও বলেন, আমি অর্থমন্ত্রী থাকাকালে সিলেটে যত অনুষ্ঠান করেছি, সেখানে নগর পিতা হিসেবে আরিফুল হক চৌধুরীকে রেখেছি। তার রাজনৈতিক পরিচয় ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু তিনি নগর পিতা।
সাবেক অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর আরিফকে বাদ দেওয়ার দাবিতে কেউ মুখ খুলেননি।
কিন্তু এ ইস্যুতে সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে ‘সংক্ষুব্ধ সচেতন সিলেটবাসী’ ব্যানারে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আওয়ামী ঘরানার কিছু সাংস্কৃতিক কর্মী। জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলুকেও দেখা যায় ওই মিছিলে। যা নিয়ে নগরে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক শুরু হয়।
সচেতন শ্রেণীর মানুষের মতে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোনো ব্যক্তি বিশেষের বা রাজনৈতিক দলের নন। আর রবীন্দ্র স্মরণোৎসবও শুধু সিলেটের নয়, সারা দেশের। এখানে রাজনীতি টেনে এনে সুন্দর এ আয়োজনকে যারা ঘোলাটে করতে চাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কেবল ‘রাজনৈতিক’ ফায়দা হাসিলের জন্য এমনটি করা উচিত নয়। তাদের রাজনৈতিক তকমা দেওয়ার এ তৎপরতা সাবেক অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যাচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সনাক) সিলেটের সমন্বয়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির গৌরব। তার স্মরণোৎসব সম্মিলিতভাবে পালন করা উচিত। এখানে শুধু একটি পক্ষ অনুষ্ঠান পালন করতে পারে না। এ চেয়ারে (নগর পিতা) যিনি বসবেন, তিনি কোনো দলের নন। তাকে কমিটিতে রাখার বিষয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত যৌক্তিক। মেয়রকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে বিভাজন তৈরির চেষ্টা আদৌ কাম্য নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক এক সভাপতি বলেন, রবীন্দ্র উৎসব সবার। এখানে রাজনীতি টেনে আনা ঠিক না। আর নগর পিতা হিসেবে মেয়রকে বাদ দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতাই দেখি না। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত যৌক্তিক।
এ বিষয়ে জানতে ডা. আরমান আহমদ শিপলুর মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তা রিসিভ হয়নি।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মরণ উৎসব কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এছাড়া কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য মিলিয়ে ৩১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
উৎসব উদযাপনে এরইমধ্যে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দফায় দফায় চলছে উৎসব উদযাপন কমিটির বৈঠক। উৎসবকে বর্ণিল করতে সাংস্কৃতিক কর্মীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মহড়ায়।
আগামী ৫ নভেম্বর ক্বিন ব্রিজ চত্বরে এবং ৭ ও ৮ নভেম্বর সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে হবে অনুষ্ঠানের মূলপর্ব।
এছাড়া ১ নভেম্বর থেকে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে হবে নানা ধরনের অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) পক্ষ থেকে থাকবে অ্যাম্বুলেন্স ও মেডিকেল টিম, রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে থাকবে স্বেচ্ছাসেবক, প্রাথমিক চিকিৎসা ও ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প।
অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির জন্য স্টেডিয়ামে কক্ষের ব্যবস্থা করবে জেলা ক্রীড়া সংস্থা আর স্টল বরাদ্দ পেলে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনে সহযোগিতা করবে সিলেট উইমেন চেম্বার।
উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকার কথা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৯
এনইউ/এবি