ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

গান্ধীকে ঘিরে চিত্রশিল্পের মিলনমেলা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯
গান্ধীকে ঘিরে চিত্রশিল্পের মিলনমেলা

মৌলভীবাজার: পশ্চিম আকাশে তখন সূর্য ডোবার পালা। কিন্তু এদিকটায় চিত্রশিল্পের মিলনমেলা। নানান রং আর ভাবনা থেকে উৎসারিত সৌন্দর্যই শিল্পকর্ম। যা যুগে-যুগে, কালে-কালে মানুষের অনুভূতিকে নাড়া দিয়েছে বারবার।

এ মিলনমেলার আয়োজক ভারতীয় হাইকমিশন। ভারতের ‘ফাদার অব দ্য নেশন’ মহাত্মা গান্ধী সার্ধশততম বৎসর অর্থাৎ ১৫০তম জন্মতিথিকে চিরস্মরণীয় করে রাখার এ এক অন্যতম পন্থা।

বাংলাদেশের ১৫ জন প্রতিভাবান তরুণ চিত্রশিল্পীদের রং-তুলি আর হাতের জাদুতে অমর হয়ে উঠেছিল সেই প্রেক্ষাপট।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশততম (১৫০) জন্মবার্ষিকী স্মরণে চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত চিত্র প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার বিশ্বদীপ দে।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিলেট হাইকমিশন অব ইন্ডিয়ার সহকারী হাইকমিশনার এল কৃষ্ণমূর্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক এবং ‘গান্ধী@১৫০ আর্ট ক্যাম্প’র মেন্টর (প্রশিক্ষক) বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রোকেয়া সুলতানা এবং ভারতীয় হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (মিডিয়া, ইনফরমেশন অ্যান্ড কালচার) দিপ্তি অলংঘাট।

নানান রঙে গান্ধীর ছবি নির্মাণ করেছেন নুসরাত আলম পৃথা।  ছবি: বাংলানিউজ

গত ১১ ডিসেম্বর ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে ‘গান্ধী@১৫০ আর্ট ক্যাম্প’ উদ্বোধন করেন।

হেমন্তের শেষ গোধূলিতে দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্যময় স্থান শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্ট অ্যান্ড টি মিউজিয়ামে ১৫ জন শিল্পীর ১৫টি সফল শিল্পকর্ম নানা রঙের সৃজনশীল আলো ছড়াচ্ছিল। ঢাবির চারুকলার শিল্পীরা মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ, অহিংসা, ভাস্কর্য, চিত্রকর্ম, বাটিকসহ ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ অর্থাৎ সমগ্র বিশ্ব এক পরিবার প্রভৃতি নানান ভাবধারার প্রকাশ ফুটিয়ে তুলেছেন।

ক্রমান্বয়ে ১৫ জন তরুণ, মেধাবী চিত্রশিল্পী তাদের নিজ নিজ সদ্য নির্মিত শিল্পকর্মের তাৎপর্য সম্পর্কে বললেন প্রধান অতিথিসহ উপস্থিত সুধীজনদের। এই ১৫ শিল্পী হলেন- রাসেল মিয়া, গৌরব নাগ, শারমিন আক্তার সিমু, নয়ন দত্ত, নুসরাত আলম পৃথা, মৃনাল বণিক, শায়লা শারমিন, রাসেল মিয়া, নুসরাত জাহান তিতলী, আশরাফুল আলম, সিপ্রা রাণী বিশ্বাস, ফৌজিয়া ফারিহা, মিজানুর রহমান, জয়ন্ত মন্ডল ও তাহিয়া হোসেন।

চিত্রশিল্পী নুসরাত আলম পৃথা তার শিল্পকর্ম সম্পর্কে বলেন, ‘আমি এখাকে বাটিকের মাধ্যমে মহাত্মা গান্ধীর আত্মপ্রতিকৃতি করেছি। এরা হচ্ছে সত্যাগ্রহ। উনার সত্যের যে সন্ধান ছিল, শিকড়ের যে সন্ধান ছিল এবং এখানে আমি মোম-বাটিকের সাহায্যে ন্যাচারাল কালার ব্যবহার করেছি। মোম দিয়ে রঙগুলো ব্যবহার করা। এখানে বেশিরভাগ মাটির কালার ব্যবহার করা হয়েছে। তার দেশের প্রতি যে ভালোবাসা এবং তিনি যে সবকিছুর সঙ্গে মিশে আছে, এটা বোঝানোর জন্যে। এটা আমার কাজে মূল। ’

গান্ধীর নদী পরিভ্রমণের ওপর ছবি তৈরি করেছেন মৃনাল বণিক।  ছবি: বাংলানিউজ

নিজের শিল্পকর্ম সম্পর্কে মৃনাল বণিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার কাজটা হচ্ছে গান্ধী মার্চ নিয়ে। আমি এখানে আমার কিছু নদীর অংশ দেখাচ্ছি। আমাদের বর্তমানে নদীগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। আমার একটা চিন্তা যে, গান্ধীর মতো করে আমরা এখন আমাদের বিপন্ন নদীগুলো বাঁচানোর জন্য একত্রে হাঁটতে পারি। এরজন্য আমি গান্ধীজির ওয়ার্কিং এবং এর পাশাপাশি নদীগুলোর একটা সিন (দৃশ্য) সেমি-অবস্ট্রাক্ট ফর্মে নিয়ে এসে দেখানোর চেষ্টা করেছি। ’

চিত্রশিল্পী নুসরাত জাহান তিতলী বলেন, আমার ছবির টাইটেল হচ্ছে- ‘মহাত্মা গান্ধী ইন বাংলাদেশ’। তিনি তো বাংলাদেশের নোয়াখালীতে এসেছিলেন। আমি ভাবলাম যে খুব সহজে, জটিল না করে কীভাবে দেখাতে পারি তার জার্নিটা। আগে থেকে তার একটা সম্পর্ক ছিল আমাদের দেশের সঙ্গে। এটারই একটা প্রতিফলন এই শিল্পকর্ম।

রবীন্দ্রনাথ এবং মহাত্মগান্ধীর যৌথ চিত্রপটের নির্মাতা জয়ন্ত মন্ডল। তার এই ছবি তৈরির প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘১৯৫০ সালের ৬ মার্চ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাথে দেখা করার জন্য শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। সেসময় তার যে দেশপ্রেম, তার বিশ্বাস, তার মুভমেন্ট, তার সব কার্যক্রমের জন্য তাকে গ্রেটসোলার হিসেবে ‘মহাত্মা’ উপাধিটা দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। গান্ধীজি নিজেও রবীন্দ্রনাথকে ‘গুরুদেব’ বলে সম্বোধন করতেন। এই দুই মহান ব্যক্তিত্বের বিরল প্রেক্ষাপটকে আমি আমার ছবিতে দেখাতে চেয়েছি। ’

চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক ও বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রোকেয়া সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আজকের তরুণরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত ‘গান্ধী@আর্ট ক্যাম্প’ তাদের পথ দেখাবে। এই প্রজন্ম গান্ধীজির দর্শনকে বুঝবে এবং একটি পরোপকারী পৃথিবী গড়ে তুলবে। তারা এই পৃথিবীর সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে এবং শান্তি বজায় রাখতে নিজেদের নিয়োজিত করবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯
বিবিবি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।