ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সাহিত্য আড্ডা-আলোচনায় ‘শব্দঘর’র সপ্তম বর্ষে পদার্পণ

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২০
সাহিত্য আড্ডা-আলোচনায় ‘শব্দঘর’র সপ্তম বর্ষে পদার্পণ

ঢাকা: সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘শব্দঘর’ সপ্তম বছরে পা রেখেছে। দেশবরেণ্য শিল্পী-সাহিত্যিকদের উপস্থিতিতে সাহিত্য আড্ডা-পাঠ আলোচনায় সপ্তম বর্ষে পদার্পণ উদযাপন করেছে পত্রিকাটি। 

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর বাংলামটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বাতিঘরে অনুষ্ঠিত হয় শব্দঘরের প্রীতি আড্ডা। এদিন শব্দঘরের সপ্তম বর্ষে পদার্পণ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন ও উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।

এ সংখ্যাটি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনকে উৎসর্গ করা হয়েছে। বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।  

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- শব্দঘরের সম্পাদক মোহিত কামাল, প্রকাশক মাহফুজা আখতার, কবি কামাল চৌধুরী, ফোকলোর বিশেষজ্ঞ শামসুজ্জামান খান, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রমুখ। সবার উপস্থিতিতে শব্দঘরের ৭ম জন্মদিনের কেক কাটা হয়।  

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, আমাদের সময় সাহিত্য পত্রিকাগুলো বের হতো খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে বিজ্ঞাপনের জন্য অনেক সময় অনিয়মিত হয়ে পড়তো পত্রিকাগুলো। এখনও যে সেই জায়গাটা পাল্টেছে, তা নয়, তবে এর মধ্য দিয়েও যে শব্দঘর নিয়মিত প্রকাশ ধরে রেখেছে এটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার। এর জন্য শব্দঘর পরিবারকে আমি সাধুবাদ জানাই।

‘সাহিত্য পত্রিকাগুলো আছে বলেই সাহিত্য আছে। বিশেষ করে তরুণদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সাহিত্য পত্রিকা বা লিটল ম্যাগাজিনগুলো। দৈনিক পত্রিকাগুলোতে সাহিত্যের গুরুত্ব খুব কম। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে বাঁচানোর দায়ভার অনেকটাই সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকাগুলোর হাতে। এর ভেতর দিয়েই আমাদের আগামী দিনের লেখকরা বড় হয়। ’

সেলিনা হোসেন কতোটা গুরুত্বপূর্ণ নতুন করে তা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য শব্দঘরকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, সেলিনা হোসেন তার সমস্ত সাহিত্যকীর্তি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আমাদের চারপাশে বাতাস-সমুদ্রের মতোই বিরাজ করছেন। আমাদের শুধু তার সাহিত্যবোধের ভেতরে নিমগ্ন থাকলেই হবে না, সেখান থেকে বের হয়েও তাকে নিরিক্ষণ করতে হবে, পর্যালোচনা করতে হবে। আমাদের কর্তব্য হবে তাকে ভালোভাবে পাঠ করা।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, অনেক সমস্যার মধ্য দিয়েও প্রতিমাসে নিয়মিতভাবে শব্দঘর নামে একটি বড় আকারের নির্ভুল পত্রিকা আমরা হাতে পাই।  


নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, সত্তরের দিকে আমি ও আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ ভাই মিলে একটা সংগঠন করেছিলাম। যারা শিল্প-সাহিত্যের পত্রিকা করতেন সেটি ছিল তাদের সংগঠন। এখন অবশ্য সেটি বিলুপ্ত। সাহিত্যের উন্নয়নে সবার একযোগে কাজ করাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

কবি কামাল চৌধুরী বলেন, নতুন লেখকদের পরিচিত করার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে ছোটপত্রিকা বা ঈদসংখ্যার মতো মলাটবদ্ধ কাগজগুলো।  

অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বর্তমানে তরুণ লেখকরা অনেক ভালো করছেন। একটি জায়গা থেকে গল্পকে বের করে আনা, তার আঙ্গিক রচনা, ভাষাশৈলী, উপাদানের ব্যবহার, ক্লেশ-বিদ্রুপ, গঠন সবদিক দিয়েই তরুণদের গল্প দারুণ অবস্থানে পৌঁছেছে।

সেলিনা হোসেন সম্পর্কে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, এক সন্ধ্যায় শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে আলাপকালে তিনি সেলিনা আপাকে বললেন, সেলিনা, আমি তোমার লেখা পড়েছি। তুমি তোমার জায়গাটি বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী করে নিয়েছো। যখন শঙ্খ ঘোষের মতো মানুষ এরকম কথা বলেন, তখন আমাদের বুঝতে হবে সেলিনা হোসেন আসলে আমাদের জন্য কী! তিনি আমাদের কাছাকাছি থাকেন, চাইলেই তাকে আমরা পাই, তার সঙ্গে দেখা হয়, কিন্তু তিনি যে বড় মাপের লেখক তা বলার অপেক্ষা রাখে না।  

এরপর কথা বলেন শব্দঘরের সম্পাদক মোহিত কামাল। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, শব্দঘর পত্রিকাটি প্রকাশ করতে গিয়ে অনেক মানুষ আমাকে অনেকভাবে সাহায্য করেছেন। প্রচ্ছদ, নামলিপি, লেখা, অলংকরণ সব জায়গাতেই আছে সবার ভালোবাসা। অনেকে বিজ্ঞাপন দিয়ে সাহায্য করেন, অনেকে বিজ্ঞাপন না দিয়ে সাহায্য করেন। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।  

সবশেষে সেলিনা হোসেন বলেন, লেখালখির একদম প্রথম দিকে একবার মুস্তাফা নূরউল ইসলাম স্যারকে আমার একটি লেখা প্রকাশের অনুরোধ করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আগে লেখক হিসেবে তৈরি হও, তারপর আমাদের কাছে এসো, আমরা নিশ্চয়ই প্রকাশ করবো। কিন্তু কখনো কাউকে অনুরোধ করে বা বলে লেখা ছাপিও না। সেটি ছিল আমার জীবনের অনন্য একটি শিক্ষা। আমি আজ পর্যন্ত সেটি মনে করে চলি। সেদিন স্যার আমার লেখা প্রকাশ করে দিলে আমি হয়তো আজ কিছুই হতাম না। কিন্তু তার শিক্ষা থেকে আমার যে পরিশ্রম, চেষ্টা আজ তার জন্যই আমি এতটুকু হতে পেরেছি। তাই এখনকার তরুণদের বলবো, আগে নিজেকে তৈরি করো, পরিশ্রম করো, ফল নিশ্চয়ই আসবে।

আয়োজনে এর আগে প্রকাশিত শব্দঘর পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা ‘বাংলাদেশের তরুণদের ৩০ গল্প: বড়দের তরুণবেলার ৩০ গল্প’ ও ‘বাংলাদেশের এ সময়ের তরুণদের ৩৫ গল্প: প্রতিষ্ঠিত ৩৫ কথাসাহিত্যিকের প্রথমগল্প’ নিয়ে আলোচনা করেন ড. সরকার আব্দুল মান্নান, ড. মিলটন বিশ্বাস, মনি হায়দার ও ইশরাত তানিয়া।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কবি তপন বাগচী, গল্পকার মোজাফফর হোসেন, অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মুনিরুল হক, অনুপম প্রকাশনীর কর্ণধার মিলন কান্তি নাথ, কবি স্নিগ্ধা বাউল, গল্পকার হামিম কামরুল হক, মহিদুল আলম, মাহমুদুল ইসলাম মামুন, জিয়াউর রহমান, সঞ্জয় গাইনসহ বাংলাদেশের প্রতিথযশা তরুণ কবি-কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, প্রকাশক ও সুধীজন। আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন কবি ও কথাসাহিত্যিক নাহিদা আশরাফী।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২০
এইচএমএস/এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।