ফুলগন্ধ অন্ধকার
কল্পনার আল্পনায় সাজিয়েছি তোমাকে যে আমি তোমার আদরের অন্তর্জন্তু। প্রতিশ্রুত সমুদ্র দেখাতে দ্বিধা যাকে, নভো-কুৎসিতে সে তো ছিল তোমার মাটিমধুর অববাহিকা।
অস্ত জানুয়ারির কবিতা
জীবনের জানু থেকে চলে যায় জানুয়ারি। নক্ষত্র নশ্বর, সব স্মৃতি উজিয়ে এলবামে অন্ধকারই অবিনশ্বর। গোলাপের কাছে বয়েত নিয়ে ছুটি শেয়ালের স্বরগ্রামের দিকে। আমি খুন করি তোমার আত্মা, তুমি আমার; তারপর উভয়ে নিজেদের হিপোক্রেসির অক্ষরে লিখি লিরিকের আত্মা, গরিবের গীতিকবিতা। শীতের দিনে মেঘের মেয়েরা ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে স্বপ্নে নিরীক্ষা করে দেখে— কেমন আছে পৃথিবীর সব মল্লিকা-মৃত্তিকা। সাপের বিষাক্ত পেখমে বন্ধক রেখেছি অন্তর্গত ময়ূরসকল। তাই এই সানন্দসজ্জা; নিরঞ্জন আমাদের গলায় চিত্রল গুলির গহনা। জলেও জট ভীষণ, একমাত্র আগুন নির্জন। বিল্লিমারান গলির গালিব হয়ে দাউ দাউ সময়সুতোয় গেঁথে যাই ছাই— রতির রাত্রি, দাঙ্গা-দখল-দোয়েল ও ধ্বংসের দস্তাবেজ। আর তুমি আমার কান্নার কবরস্থান পেরিয়ে চলে যাচ্ছ দূর রাজস্থানে। এইমতো মরণের মাতৃভাষা জানুয়ারিতে বিষাদঘন হয়ে কী মধুর ছাপা হয়ে চলে ফেব্রুয়ারির বইমেলার পাতাতে পাতাতে!
ফাল্গুনের অভিজ্ঞান
শীত গেল, আগুনের অভিসার যাওয়ার নয় কখনও। যেমন তারারা তৎপর থেকেও মুছতে পারে না আকাশের অশ্রু তেমনি দাবানলের দাউ দাউ-বাস্তবে সত্যি গাছেদের সবুজ সাঁতার। এলিজাবেথ না পৃথিবীতে সর্বমান্য কান্নার কুইন, যে বহন-সক্ষম তুমি নামের মহুয়ার বিষভার। মরণের মন্ত্র কতটুকু প্রগাঢ় হলে তুমি পাবে ফিকে এই বেঁচে থাকার স্বাদ সেই ফয়সালা হয়ে যাক আজ; ফাল্গুনের ফুলে, পাতা ঝরা ওমে।
রাক্ষসের রোমান্স
তোমাদের চাঁদে পায় আমাকে তারায়। তমসা-তারার ভেতরেই তারানার ঠাঁই। অসুর আবহাওয়া ভরে উঠে রূপটান গানের জোয়ারে, সব কারুজ্ঞান ভুলে গেলে ঠিক থাকে কান্নার ক্রাফ্ট। আজকের উমবার্তো ইকো কালকের কাফকা শেষ হলে আছে বাকি স্বর্গীয় নরকের নিরূপম নান্দী। ফুলেরা কোরাস ছাড়া ফুটে না সুবাসিত, আমরা সরে সরে ক্রমশ সম্পন্ন। সময় আঁকা হতে থাকে এমন ক্ষুধিত গদ্যকবিতায় কিংবা কোনো লোভী লিরিকে।
অবশেষ
খুন হয়ে যাওয়ার কালেও নীল নূপুরে ছেয়ে আছে পা; সব কর্দমের ভেতরেও পৃথিবী এমনই নন্দনের মেয়ে। শীতে কুঁকড়ে গিয়েও কথা কয় কুয়াশার ভাষায়। লোভের লাভা জ্বলমান; তার আঁচ গায়ে লাগে- অঙ্গার আর ছাইয়ের ডাঁইয়ে পড়ে থাকে মেয়েটার কম্পিত ক্রন্দন। জীবন থেকে নিয়ে মরণের দিকে যাওয়া- এই-ই তো ছিল সোজাসাপ্টা রাস্তা। তবু ভুল করে যে মধুপথ বেছে নিল সে; লোকে সেই সন্দেহজনক সন্দর্ভকে ‘কবিতা’ বলে ডাকে।
পিয়াস মজিদ
জন্ম ২১ ডিসেম্বর ১৯৮৪
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর
বাংলা একাডেমিতে কর্মরত।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ:
নাচপ্রতিমার লাশ, মারবেল ফলের মওসুম, গোধূলিগুচ্ছ, কুয়াশা ক্যাফে, নিঝুম মল্লার, প্রেমপিয়ানো, গোলাপের নহবত, ক্ষুধা ও রেস্তোরাঁর প্রতিবেশী, নির্ঘুম নক্ষত্রের নিশ্বাস, বসন্ত, কোকিলের কর্তব্য, দুপুরের মতো দীর্ঘ কবিতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
টিএ