ঢাকা: ঋতুচক্রের পালাবদলে এলো মাঠের ফসল ঘরে তুলে গান গাওয়ার সেই দিন। বিদায় নিলো শরৎ।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত আঙিনায় অনুষ্ঠিত হলো নবান্ন উৎসব-১৪২৭।
‘এসো মিলি সবে নবান্নের উৎসবে’- স্লোগানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ।
যন্ত্রসঙ্গীতের সুরের মূর্ছনায় অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। মন্দিরা, বাঁশি, ঢোল আর একতারার সম্মিলনে ভেসে বেড়ায় ‘প্রাণ সখীরে, ওই শোন কদম্বতলা বংশী বজায় কে’ গানের সুর। এরপর মঞ্চে আসে দনিয়া সবুজকুড়ি কচি কাঁচার মেলা। শিশু শিল্পীরা কণ্ঠে তুলে নেয় ‘আবার জমবে মেলা বটতলা হাটখোলা’ শীর্ষক সঙ্গীত। গানের সুরটি থামতেই নৃত্যের ছন্দে আলোড়িত হয় উৎসব। সুরের আশ্রয়ে নেপথ্যে ভেসে বেড়ায় কল্যাণের বার্তাবহ বাণী- আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য-সুন্দর/মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে। এই নাচের তালে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদের সহ-সভাপতি বুলবুল মহলানবীশ ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম হাসান সুজা। সভাপতিত্ব করেন পর্ষদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন পর্ষদের সহ-সভাপতি মানজার চৌধুরী সুইট।
কে এম খালিদ বলেন, সময়ের বিবর্তনে গ্রাম থেকে শহুরে জীবনেও হাজির হয়েছে নবান্ন উৎসব। নগরবাসীকে শেকড়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এই উৎসব। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে আপন সংস্কৃতির ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে এ ধরনের আয়োজন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে পুনরায় শুরু হয় পরিবেশনা পর্ব। তামান্না সারোয়ার নীপার গ্রন্থনায় মৈত্রী শিশুদলের বাচিকশিল্পীরা উপস্থাপন করে ‘এই নবান্নে’ শীর্ষক আবৃত্তি প্রযোজনা। বহ্নিশিখার শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করে ‘কালো জলে কুচলা’ ও ‘অঘ্রানেরই সকালে ভাঙে সবার ঘুম’ শিরোনামের গান। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘কাটি ধান কাটি ধান’৷ আবৃত্তিশিল্পী রেজিনা ওয়ালী লিনা কণ্ঠে পঠিত হয় জীবনানন্দের কবিতা ‘পেঁচা’।
এছাড়া বর্ণিল এ উৎসবে শিশুদল হিসেবে সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করে মন্দিরা সাংস্কৃতিক পাঠশালা ও স্বপ্নবীণা শিল্পকলা বিদ্যালয়। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন বুলবুল মহলানবীশ, সমর বড়ুয়া, সুরাইয়া পারভীন, আরিফ রহমান, আঁখি বৈদ্য, অনিকেত আচার্য্য, আবিদা রহমান সেতু, মাহজাবিন রহমান শাওলী, এস.এম মেজবাহ, অবিনাশ বাউল, আনান বাউল, হালিমা পারভীন, শ্রাবণী গুহ রায়, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা, দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়, বিপ্লব রায়হান, মারুফ হোসেন ও আসিফ ইকবাল সৌরভ।
দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজন, স্পন্দন, ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যম, নুপুরের চন্দ, স্বপ্নবিকাশকলা কেন্দ্র ও নান্দনিক নৃত্য সংগঠন। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন সাজ্জাদ হোসাইন, বেলায়েত হোসেন, রফিকুল ইসলাম, শাহাদত হোসেন নিপু, মাশকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, ফয়জুল আলম পাপ্পু, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি, তামান্না তিথি ও সৈয়দ ফয়সাল আহমেদ। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, স্ব-ভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, সুরসাগর ললিতকলা একাডেমি ও উত্তরা কালচারাল সোসাইটি। উৎসব রাঙাতে ছিল পিঠা-পুলির আয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২০
ডিএন/এইচএডি