ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

না ফেরার দেশে চলে গেলেন কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২০
না ফেরার দেশে চলে গেলেন কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত

কলকাতা: ‘ভগবানের গুপ্তচর মৃত্যু এসে বাঁধুক ঘর/ ছন্দে, আমি কবিতা ছাড়ব না!’ এমনই লেখনি উস্কে দিয়েছিল বাঙালির আবেগকে। ৮৭ বছর বয়সে থেমে গেলো এই কলম।

না ফেরার দেশে চলে গেলেন কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত।

বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর, অলোকরঞ্জনের মৃত্যুতে ফের নিঃস্ব হলো বাঙালির আরেক অধ্যায়। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে জার্মানিতে নিজ বাসভবনেই মৃত্যু হয় কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তর।

বেশ কয়েক বছর ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। তার মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করেছেন বন্ধু এলিজাবেথ।

১৯৩৩ সালের ৬ অক্টোবর কলকাতায় জন্ম অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের। শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা শেষ করে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে সাহিত্য নিয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ভারতীয় কবিতার শব্দমালা নিয়ে পিএইচডি করেছিলেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত।

কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যবিভাগ থেকে শুরু কবির কর্মজীবন। বহু জার্মান কবিতা তিনি বাংলায় অনুবাদ করেছেন, বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতির ভাঁড়ারকে আরও সমৃদ্ধ করে শেষে হিটলারের দেশে তিনি পৌঁছে দিয়েছিলেন বাংলা কবিতার একের পর এক অনুবাদ।

এরপর জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতে গিয়েছিলেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। বাংলা-জার্মান সাহিত্যের মেলবন্ধনে তার অবদান অনস্বীকার্য, এই কর্মকাণ্ডের জন্য জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে ‘গ্যেঁটে’ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন তিনি।

এরপর তিনি পাকাপাকিভাবে গত কয়েকদশক ধরে জার্মানির বাসিন্দা হলেও বাংলার এবং বাঙালির সঙ্গে নাড়ির টান ছিন্ন হয়নি।

১৯৯২ সালে ‘মরমী কারাত’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তাকে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। জীবদ্দশায় প্রায় ২০টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের। পঞ্চাশের দশকে বাংলাকাব্য স্বকীয়তা এনেছিলেন যে হাতেগোনা কয়েকজন, তার মধ্যে অন্যতম অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত।

তার কাব্যচেতনা তরুণদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে, নবীন প্রজন্মকে বরাবর বাংলা সাহিত্য নিয়ে কাজ করতে উত্সাহ দিয়েছেন কবি।

‘আমি তো এক শখের নিছক শব্দ ব্যবসায়ী/ আনন্দের ক্লান্তি আনে আমার চোখে ঘুম’ কবির কথা টেনেই তাই তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে হচ্ছে, আনন্দের ক্লান্তি নিয়ে চিরঘুমে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন তিনি।

তবে বাঙালির মননে তার স্থান চিরস্থায়ী। সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে বাংলা সাহিত্যে নিজের স্থান পাকা করে গেলেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। তার মৃত্যুতে শোকাহত বাঙালি কবি সাহিত্যিকসহ কলকাতার সাহিত্যপ্রেমীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২০
ভিএস/এসকে/এসআরএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।