ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

‘নিদারুণ সংকটে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২২
‘নিদারুণ সংকটে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন’

ঢাকা: করোনা মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অভিঘাতে বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে নাট্যচর্চার পথ ক্রমাগত দুর্গম হয়ে উঠছে। পেশাগত উৎকর্ষতা সাধনের বিপরীতে অর্থের টানাপড়েন শিল্পচর্চার পথে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।

নতুন নাটক নির্মাণ ও শিল্পবোধ তৈরিতেও কখনও সেই প্রতিবন্ধকতা হয়ে যায় পাহাড়সম।

তবুও সেই প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার চর্চা এগিয়ে যাবে, নাট্যযোদ্ধারা শিল্পবোধে প্রাণিত হয়ে নতুন নাটক নির্মাণের পথ নিজেরাই সুগম করে তুলবেন বলে প্রত্যাশা করেছেন বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের অগ্রণী নাট্যকার, অভিনেতারা।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসে তারা এমন মন্তব্য করেন। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন উদ্বোধন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। পরে ‘বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার চর্চা: পেশার তাড়না, পৃষ্ঠপোষকতা ও বিকল্প থিয়েটার বিষয়ক ভাবনা বিনিময়’ শীর্ষক আলোচনায় নাট্যসারথী আতাউর রহমান ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল দেবপ্রসাদ কে দেবনাথ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, নাটকের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, তারা সমাজের আদর্শিক, সাংস্কৃতিক ও দেশপ্রেমিক মানুষ। তারা সমাজ ও সংস্কৃতির শেকড়ের সঙ্গে গভীরভাবে নিয়োজিত রাখেন নিজেকে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তবুদ্ধি ও সংস্কৃতির পক্ষে নিজেকে সবসময় আদর্শনিষ্ঠ রাখেন তারা৷

তিনি বলেন, নাটকের মানুষরা সংগ্রামমুখরতার মধ্যেও ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যান। উত্তরাধুনিকতার সঙ্গে নিজস্ব সংস্কৃতির সংযোগের পথ মসৃণ নয়। কখনও সত্যান্বেষী এসব মানুষকে মিথ্যায় আবদ্ধ করতে চেয়েছে অগণতান্ত্রিক শক্তি। তবুও সেই সত্যের দিশারীরা সব কিছুকে উড়িয়ে দিয়ে নিজস্ব চেতনায় শাণিত হয়ে নাট্যশিল্প বা নাট্যবোধকে আরও সুসংহত করছেন।

‘বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার চর্চা: পেশার তাড়না, পৃষ্ঠপোষকতা ও বিকল্প থিয়েটার বিষয়ক ভাবনা বিনিময়’ শীর্ষক আলোচনায় নাট্যসারথী আতাউর রহমান বলেন, আমাদের দেশের নাটক পেশাদার, আধা পেশাদার নয়; এটি বিনে পয়সার থিয়েটার৷ এখানে অনেক দুর্বলতা হয়তো আছে। তবে সেই দুর্বলতাকে সবলতায় রূপান্তরিত করতে হবে। নবপ্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যে নাটক করেছে, তার মধ্যে গোটা দশ-বিশেককে আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়। অর্থের সংকট থাকবেই।  সংকট না থাকলে শিল্প চর্চা হবে না। নাটক মানুষকে মানুষের কাছে নিয়ে যায়। নাটক একজন অভিনেতাকে প্রতিদিন এক নতুন মানুষে পরিণত করে। কারণ, তাকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চরিত্রে মঞ্চে হাজির হতে হয়।

পরে আলোচনায় যুক্ত হন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক দুই সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান ও ঝুনা চৌধুরী।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন পেশাভিত্তিক নাট্যচর্চায় ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে। সেই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- দেশের সব শতবর্ষী নাট্যমঞ্চ সংস্কার ও মেরামত করে তাতে নিয়মিত নাট্য মঞ্চায়নের সুযোগ প্রদান; দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিল্পচর্চার মহড়া বাড়ানো, ঢাকায় গ্রুপ থিয়েটার কমপ্লেক্সের জন্য জমি বরাদ্দ করা; সব সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য অনুদান বাড়ানো; সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য রেয়াতি হারে বরাদ্দ বাড়ানো ও নাটকের পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি।

৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন নাটকের স্কুল ‘নাটকের পাঠশালা’ চালু করেছে। এতে এক বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্সের সুযোগ থাকছে নাট্যকর্মীদের, যারা আগামী বছর থেকে নতুন পাঠ্যসূচি অনুযায়ী বিভিন্ন স্কুলে নাট্যকলা বিষয়টি পড়াবেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর জাতীয় আশা-আকাঙ্খার পরিপূরক হিসাবে জন্ম নিতে থাকে গ্রুপ থিয়েটার। গ্রুপ থিয়েটার ও মঞ্চ নাট্য শিল্পীদের অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আশা-আকাঙ্খাকার পূর্ণ প্রতিফলনের জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের। আর এই আন্দোলনের প্রয়োজনেই ১৯৮০ সালের ২৯ নভেম্বর গড়ে উঠে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের বর্তমান সদস্য সংগঠন ৪০০টি।

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকা। তিন কমিটি ফেডারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করে: সাধারণ কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং নির্বাহী কমিটি।

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সূচনালগ্ন থেকে জনসাধারণের মধ্যে সাংস্কৃতিক সচেতনতা বিকাশ এবং একটি থিয়েটার সংস্কৃতির বৃদ্ধি উত্সাহিত একটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। সাম্প্রদায়িক অনুভূতি ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জনসাধারণের সচেতনতা জাগানোর জন্যও ফেডারেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২২
এইচএমএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।