ঢাকা: স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে বিমানের বিভিন্ন পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের বেসরকারি কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে আঁতাত করে কয়েক কোটি টাকা কমিশন গ্রহণ করার অভিযোগ উঠেছে বিমানের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তসলিমা আখতারের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, অন্য কোনো জায়গা থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আনফিটসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয় বলে একাধিক নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থী অভিযোগ করেছেন।
বিমানের একটি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিমানের বিএফসিসি এবং জিএসই পদে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের সবাইকেই রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেখানের প্রেসক্রিপশনেও রেফারেন্স হিসেবে রয়েছে ডা. তাসলিমা আখতারের নাম।
সেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাগজপত্র এবং বিমানের মেডিসিন স্টক বুকের তালিকা বাংলানিউজের হাতে আছে।
ওই সূত্র আরও জানায়, কমফোর্টে পরীক্ষা করানো সবাই সম্পূর্ণ মেডিকেল ফিটনেস পেয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, অন্তত ১৫০ জন নিয়োগপ্রাপ্তর মধ্যে ১৪০ জনকে সে দফায় কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিএসই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই পাঠানো হয়েছে। মানে বলা হয়েছিল সেখান থেকেই টেস্ট করাতে হবে।
জানা গেছে, আগে জিএসই অপারেটরদের শুধু চোখ ও কানের প্রাথমিক পরীক্ষা দেওয়া হতো। সন্দেহজনক মনে না হলে এর বাইরে কোনো টেস্ট লাগত না। সেখানে এখন প্রত্যেককে গড়ে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫ শ’ টাকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হচ্ছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু টেস্টও। বাড়তি এ টাকার একটি অংশই মূলত কমিশন হিসেবে পান তাসলিমা।
তবে তার নির্দেশে আরও একাধিক কর্মকর্তাও এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়, প্রক্রিয়াধীন থাকা বিমানের ট্রাফিক অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগপ্রাপ্তদেরও কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তাসলিমা আখতার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কথা বলা নিষেধ। এছাড়া, যেকোনো অভিযোগের বিষয়ে বিমানের মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি। অভিযোগ এক জনের বিরুদ্ধে হলে সেখানে আরেকজন কিভাবে কথা বলবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এটাই নির্দেশনা আছে। কার নির্দেশ সেটি জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
কথা বলার চেষ্টা করা হয় বিমানের মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকারের সঙ্গেও। তবে, তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম বাংলানিউজকে বলেন, আমি বিষয়টি জানতাম না, এখন জানলাম। সেই করোনার সময় থেকেই তো তারা আমাদের টেস্টগুলো করায়। এমনও হতে পারে বিমানের সঙ্গে তাদের কোনো চুক্তি আছে। তাছাড়া অনেক নিয়োগই তো হয়, এত ছোটোখাটো বিষয়ে আসলে কিভাবে বলবো।
তবে, বিমানের মেডিকেল শাখার কর্মকর্তারা বলেছেন কোনো প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে বিমানের এ ধরণের চুক্তি নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৩
এমকে/জেডএ