ঢাকা, শনিবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ জুন ২০২৪, ১৪ জিলহজ ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

থার্ড টার্মিনালের ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ: মন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৪
থার্ড টার্মিনালের ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ: মন্ত্রী

ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজের ৯৭ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।

মন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত পরিদর্শনে যা দেখলাম সব মিলিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট। এখন পর্যন্ত টার্মিনাল ভবনের ৯৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, ৩ শতাংশের মতো কাজ বাকি আছে। তবে এ ৩ শতাংশের মধ্যে কো-অর্ডিনেশন ও টেস্টিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, টার্মিনাল ভবনের কাজ খুব সুন্দর হয়েছে। ভবনটি অনেক দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। তবে এর সফলতা নির্ভর করে এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের উপর। এটি সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, মেইনটেনেন্স ভালোভাবে করতে হবে। বাংলাদেশের আবহাওয়া বিবেচনা করলে এখানে ধুলাবালি রয়েছে, মাকড়সা-পাখি বাসা বাঁধার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা যেন এখানে বাসা বাঁধতে না পারে, সেজন্য নিয়মিত মেইনটেনেন্স করতে হবে। জাপানি প্রতিষ্ঠানকে আমি এসব কথা বলেছি। আমি খুবই আশাবাদী, সিভিল অ্যাভিয়েশন এ টার্মিনালকে ভালোভাবে পরিচালনার জন্য কর্মীদের প্রস্তুত করছে।

এ টার্মিনাল কবে নাগাদ চালু হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে কোথাও এভাবে সুনির্দিষ্ট করে তারিখ বলা যায় না। কারণ এটি হাইলি টেকনিক্যাল কাজ। কোনোভাবেই পরিকল্পনা করে একেবারে সময়মতো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। তবে আমি আশা করি, কর্তৃপক্ষ যথাসময়েই এটি চালু করতে পারবে।

নতুন টার্মিনালের সুযোগ সুবিধা নিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য বিমানবন্দর থেকে এখানে চেক-ইন কাউন্টার, ইমিগ্রেশন কাউন্টার অনেক বড় করা হয়েছে। আমি কিছুদিন আগে জার্মানিতে গিয়েছিলাম। সেখানকার একটি বিমানবন্দরে দেখলাম মাত্র ছয়টি ইমিগ্রেশন কাউন্টার। আমার ইমিগ্রেশন করতে তিন ঘণ্টা সময় লেগে গিয়েছিল। আমাদের এখানে ৫৪টি ইমিগ্রেশন করা হয়েছে। আশা করছি সব বয়সী ও শ্রেণি-পেশার লোকজন ভালো সার্ভিস পাবেন।

টার্মিনালের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী দ্বিতীয় রানওয়ে তৈরি হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান রানওয়েতে আইএলএস (ইন্সট্রুমেন্ট অব ল্যান্ডিং সিস্টেম) সিস্টেম উন্নত করা হচ্ছে। রাডারগুলো উন্নত করা হচ্ছে। তবে, দ্বিতীয় রানওয়ে নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। যেহেতু আশেপাশে অনেক বিল্ডিং হয়ে গেছে, আমরা দেখছি, কীভাবে দ্বিতীয় রানওয়ে চালু করা যায়।

থার্ড টার্মিনাল সম্পন্ন হলে লাগেজ হ্যান্ডলিং দ্রুত হবে কি না, দায়িত্ব কার কাছে যাবে- এসব প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, পৃথিবীর যেকোনো দেশে এটি বড় চ্যালেঞ্জ। যাত্রীরা মনে করেন, প্লেন থেকে নেমে যেতে যেতে লাগেজ হাতে আসবে, এটি কখনো সম্ভব হয় না। আমরা উন্নতি করার চেষ্টা করছি। আমাদের এখানে বর্তমানে প্রথম লাগেজ পেতে ১৫ মিনিট লাগে, শেষেরটি পেতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগে। এর উন্নতির জন্য আমরা ইক্যুইপমেন্ট কিনেছি। চেষ্টা করছি আরও দ্রুত দিতে।

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, জাপানের সঙ্গে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আমরা জয়েন্ট ভেঞ্চারের কথা বলেছি। কিন্তু, এখন পর্যন্ত তারা নির্দিষ্টভাবে জানায়নি, তাদের কোন প্রতিষ্ঠান যুক্ত হবে। আশা করছি তারা দ্রুতই জানাবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিমানবন্দরে পার্কিং চার্জ বেশি, তা ঠিক। সব জায়গায় সরকার টাকা দিতে পারে না। আপনারা জানেন সিভিল অ্যাভিয়েশন নিজেদের টাকা দিয়েই তাদের পরিচালন ব্যয় ও উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করে থাকে। বাংলাদেশের মতো দেশে সাতটি বিমানবন্দর চালু আছে। এর মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক। এটি মনে রাখতে হবে। এমন না যে অন্যান্য দেশের তুলনায় পার্কিং চার্জ অনেক বেশি। তবুও, কমানো যায় কি না, আমরা চেষ্টা করব।

মালয়েশিয়া যাত্রীদের বিমানভাড়া নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ফারুক খান বলেন, বিমানভাড়ার বিষয়টি সাপ্লাই ও ডিমান্ডের বিষয়। যারা মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সঙ্গে জড়িত, তারা এক মাস আগেই জানতেন যে, ৩১ মে শ্রমিক পাঠানোর শেষ তারিখ। কিন্তু, রিক্রুটিং এজেন্সি বা অন্য সাপ্লাইয়াররা ব্যবস্থা নেয়নি। এখন বিমান প্রতিদিন মালয়েশিয়ায় তিন থেকে চারটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। গতকাল মালয়েশিয়ার কিছু লোক ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ায় এয়ার কম্বোডিয়ার একটি এয়ারক্রাফট দিয়ে একটি চার্টাড ফ্লাইট পরিচালনার পারমিশন চেয়েছে, গতকালকেই আমরা তাদের পারমিশন দিয়ে দিয়েছি। বিমান যদি আরও আগে জানত, তাহলে ব্যবস্থা নিতে পারত। বর্তমানে বিমানের হজ ফ্লাইট চলছে, তবুও আমরা চেষ্টা করেছি সুযোগ দিতে।

ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট কবে চালু হতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইটের ব্যাপারে তারা (এফএএ) আমাদের কিছু অবজারভেশন দিয়েছে। যখনই তারা এসেছে, আমাদের তিন-চারটি অবজারভেশন দিয়েছে, আমরা একটি একটি করে পূরণ করেছি। কখনো সিকিউরিটি নিয়ে, কখনো অন্য বিষয়ে। কিন্তু, এফএএ কী চায়, সেটি এখনো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। এটি দুঃখজনক যে, তারা একটি করে অবজারভেশন দেয়, পরে আর কিছুই হয় না।

তিনি আরও বলেন, এটি আজকের কথা নয়, আমি আগেও মন্ত্রী থাকাকালীন যখন বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ কিনেছিলাম, তখনও আমরা বলেছিলাম, নিউইয়র্কে আমাদের স্লট দিতে হবে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা চেষ্টা অব্যাহত রাখছি।

মন্ত্রী নতুন টার্মিনালের ভবন ঘুরে দেখেন। এ সময় তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৪
এমআইএইচ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।