ঢাকা, শনিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

তালিকা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে মাদক কারবারিরা

মিরাজ মাহবুব ইফতি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৩২, অক্টোবর ১০, ২০২৫
তালিকা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে মাদক কারবারিরা এআইয়ের সহায়তায় তৈরি প্রতীকী ছবি

রাজধানীর পল্লবী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় মাদক কারবারিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে থাকলেও বেশির ভাগই রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। চলতি বছরের শুরুর দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) যে তালিকা তৈরি করেছিল, তাতে মিরপুরের অন্তত ৫০টি স্থানে খোলাখুলিভাবে মাদক বিক্রির তথ্য পাওয়া যায়।

হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা থেকে শুরু করে বাংলা মদসহ সব ধরনের মাদকই চলছে হাতবদল হয়ে। তবে প্রশাসনের অভিযানেও ধরা পড়ছে না মূল কারবারিরা।

তালিকায় রয়েছে শাহাজাদি বেগম, পৃথিবী, লিটন, রুবেল ওরফে ল্যাংড়া রুবেলসহ একাধিক চিহ্নিত মাদক কারবারির নাম। কারও নামে রয়েছে একাধিক মামলা, কেউবা পলাতক। তবু এলাকায় তাদের প্রভাব অটুট রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের নাকের ডগায় এসব মাদক বেচাকেনা চললেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কার্যকরভাবে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ডিএমপির তালিকা অনুযায়ী পল্লবী এলাকায় যে ৫০টি স্থানে বিক্রি মাদক হচ্ছে, সেই তালিকা বাংলানিউজের হাতে এসেছে।  

তালিকার তথ্য অনুযায়ী—
১. হেরোইনের খুচরা বিক্রেতা পৃথিবী (২৮)। স্বামী: কিরন মিয়া। মাদক বিক্রির স্থান: মিরপুর ১১ নম্বরের ‘বি’ ব্লক, লাইন নং-২, মিল্লাত ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকা।

২. মাদক সম্রাজ্ঞী মোছা. শাহাজাদি বেগম (৩৩)। পিতা: মো. সাহাবুদ্দিন, মাতা: মোছা. জরিনা বেগম, স্বামী: মো. রনি। মাদক বিক্রির স্থান মিরপুর ১২ নম্বর, ব্লক-ডি, পূর্ব কুর্মিটোলা ক্যাম্প ও এর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় সব ধরনের মাদক বিক্রি করেন। শাহাজাদির বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় চারটি মামলা রয়েছে।

৩. গাঁজার ডিলার মফিজ (৫৫)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১০ নম্বর ব্লক-এ, লাইন নং-১৮, থার্টিনাস ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়। এ ছাড়াও মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প থেকে নিজে মাদক চালান নিয়ে আসে মফিজ।

৪. বাংলা মদের পাইকারি বিক্রেতা লিটন (৪২)। মদ বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বর, ব্লক-বি, রোড নং-১১, লাইন নং-৮, ৪ নং ওয়াপদা বিল্ডিং এলাকায়। লিটন ঢাকা টঙ্গী এলাকা থেকে মাদকের চালান নিজেই নিয়ে আসেন। তার নামে থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।

৫. ইয়াবা ও ফেনসিডিল কারবারি মো. রিপন ওরফে কাল্লু (৩৮)। মদ বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বর, ব্লক-বি, রোড নং-১১, লাইন নং-৮, ৪ নং ওয়াপদা বিল্ডিং এলাকায়। রিপন কক্সবাজার, টেকনাফ থেকে নিজে অথবা অন্যের মাধ্যমে মাদকের চালান নিয়ে আসেন। তার নামে থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।

৬. হেরোইনের ডিলার মোছা. জামিলা বেগম (৩৮)। বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বর, ব্লক-বি, মিল্লাত ক্যাম্পের পূর্ব পাশের আশপাশের এলাকা। মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প থেকে নিজে মাদক চালান নিয়ে আসেন। তার নামে থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।

৭. হেরোইনের খুচরা বিক্রেতা মোছা. সাইমা বেগম (৩০)। স্বামী: ফয়সাল। হেরোইন বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বর, ব্লক-বি, মিল্লাত ক্যাম্প উত্তর পাশের এলাকায়। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে নিজে অথবা অন্যের মাধ্যমে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

৮. ইয়াবা, গাঁজার পাইকারি কারবারি রুবেল ওরফে ল্যাংড়া রুবেল (৩২)। তিনি মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বর নিউ ডিএনসিসি মার্কেটের আশপাশের (মাদ্রাসা ক্যাম্প) এলাকায়। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে অন্যের মাধ্যমে চালান নিয়ে আসেন। রুবেল পলাতক রয়েছেন। তার নামে থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।

৯. ইয়াবার পইকারি বিক্রেতা মাস্টার (৩৮)। মিরপুর ১১ নম্বর, ব্লক-সি, লাইন নং-৬, ফুটবল গ্রাউন্ড ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় ইয়াবা বিক্রি করেন তিনি। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে অন্যের মাধ্যমে চালান নিয়ে আসেন। মাদক কারবারি মাস্টারের নামে পল্লবী থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।

১০. ইয়াবা ও হেরোইনের খুচরা কারবারি লাকি (৩৬)। স্বামী: জাহাঙ্গীর। মিরপুর ১১ নম্বর, ব্লক-বি, মিল্লাত ক্যাম্প ও আশেপাশের এলাকায় ইয়াবা বিক্রি করেন।

১১. গাঁজা, ইয়াবা ও হেরোইনের খুচরা বিক্রেতা বিজলী (২৭)। স্বামী: কাল্লু। মিরপুর ১১ নম্বর, ব্লক-বি, মিল্লাত ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় কারবার করেন।

১২. মাদক কারবারি মোহাম্মদ আলামিন (২০)। ঠিকানা: মিরপুর ১২ নম্বর, কালশী, ব্লক-ই, লাইন-৭, পল্লবী, ঢাকা। এই কারবারির বিক্রির স্থান জানা নেই (ভাসমান)।

১৩. গাঁজা ও ইয়াবার খুচরা বিক্রেতা মুন্না (৩৫)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বর, ব্লক-বি, মিল্লাত ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়। আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী থেকে মুন্না নিজে মাদকের চালান নিয়ে আসেন বলে জানা যায়।

১৪. হেরোইনের খুচরা বিক্রেতা মো. কলিম (৩২)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বর, ব্লক-বি, লাইন-০৩, মিল্লাত ক্যাম্প ও আশেপাশের এলাকা। কলিমের নামে পল্লবী থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।

১৫. পাইকারি ইয়াবা বিক্রেতা দুলারা (৩০)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর-১১ নম্বর, ব্লক-বি, তালাব ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকা। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে অন্যের মাধ্যমে চালান নিয়ে আসেন। তার নামে পল্লবী থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।

১৬. ইয়াবা ডিলার লাইলী (৩২)। স্বামী: নুরে আলম। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর-১২ নম্বর, ব্লক-ই, কুর্মিটোলা ক্যাম্প ও আশেপাশের এলাকায়। লাইলী কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে অন্যের মাধ্যমে চালান নিয়ে আসেন।

১৭. মর্জিনা (৩৮) ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলের পাইকারি বিক্রেতা। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর-১২ নম্বর, ব্লক-ই, কুর্মিটোলা ক্যাম্প ও আশেপাশের এলাকায়। আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী থেকে নিজে মাদক চালান নিয়ে আসেন।

১৮. গাজা ও ইয়াবার খুচরা বিক্রেতা মো. হাসান (২৮)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর-১০ নম্বর, ব্লক-এ, লইন-১৮ এর আশেপাশের এলাকায়। হাসানের নামে পল্লবী থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।

১৯. গাঁজা ও ইয়াবার খুচরা বিক্রেতা মুসা (২১)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর-১১ নম্বর, ব্লক-ডি, বাউনিয়াবাঁধ ও আরবান শিশুপার্কসহ আশেপাশের এলাকায়। আব্দুল্লাহপুর, টংগী, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে নিজে মাদক চালান নিয়ে আসেন। মুসার নামে থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।

২০. গাঁজা ও ইয়াবার খুচরা বিক্রেতা হারুন (২৩)। মাদক বিক্রি করেন সেকশন-১১, ব্লক-ডি, বাউনিয়াবাঁধ ও আরবান শিশুপার্কসহ আশেপাশের এলাকায়। আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী, তেজগাঁও ও কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে নিজে মাদকের চালান নিয়ে আসেন। তার নামে থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।

২১. গাঁজা ও ইয়াবা খুচরা বিক্রেতা আমির ওরফ চোরা আমির (৩৬)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর-১১ নম্বরের ব্লক-ডি, বাউনিয়াবাঁধ ও এর আশপাশের এলাকায়। আব্দুল্লাহপুর, টংগী এলাকা থেকে আমির নিজে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

২২. ইয়াবার ডিলার ডলার (৩২)। মিল্লাত ক্যাম্প ও আশেপাশের এলাকায় বিক্রি করেন। টেকনাফ, কক্সবাজার, উখিয়া থেকে মাদকের চালান নিয়ে আসেন বলে জানা যায়।

২৩. ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা কালু ওরফে চোর কালু (২৮)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর-১০ নম্বর, ব্লক-এ, লাইন-১৭, মাদ্রাসা ক্যাম্প ও তার আশপাশের এলাকায়। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে নিজে মাদক নিয়ে আসেন বলে জানা যায়।

২৪. ইয়াবা ও গাঁজা খুচরা বিক্রেতা ফজর আলী মাতব্বর (৪৮)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১২ নম্বরের কুর্মিটোলা ক্যাম্প ও তার আশেপাশের এলাকায়। আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী থেকে মাদক নিয়ে আসেন।

২৫. লাভলী বেগম (৪৯) গাঁজা ও ইয়াবার খুচরা বিক্রেতা। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-ই, আদর্শনগর, লালমাটিয়া ও এর আশপাশের এলাকায়। লাভলীর নামে থানায় মামলা রয়েছে ১০টি।

২৬. ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা রাজ্জাক (৩৬)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১২ নম্বরের কুর্মিটোলা ক্যাম্প ও এর আশপাশের এলাকায়। আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী থেকে মাদক নিয়ে আসেন। রাজ্জাকের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

২৭. ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা বান্টু (৩৬)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১২ নম্বর কুর্মিটোলা ক্যাম্প ও এর আশপাশের এলাকায়। আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী থেকে মাদক নিয়ে আসেন। বান্টুর নামে পল্লবী থানায় চারটি মামলা রয়েছে।  

২৮. গাঁজা ও ইয়াবার খুচরা বিক্রেতা পাখি (৩৬)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-ই, বউনিয়াবাঁধ, কলাবাগান বস্তি ও এর আশপাশের এলাকায়। পাখি আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী থেকে মাদক নিয়ে আসেন।

২৯. ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা ফর্মা ফরহাদ (৩২)। জানা যায় আগে ফরহাদ পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-বি, লাইন-১ ও এর আশপাশের এলাকায়। আব্দুল্লাহপুর টঙ্গী থেকে মাদক নিয়ে আসেন।

৩০. ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা টেনি (২৮)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-এ, এভি-১, এডিসি ক্যাম্প ও এর আশপাশ এলাকায়। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে নিজে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

৩১. ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা আজহার (২৭)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-এ, লাইন-১৭, মাদ্রাসা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে আজাহার নিজে মাদক চালান নিয়ে আসেন।

৩২. ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা মো. আনোয়ার (৩৫)। মাদক বিক্রি করে মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-বি, লাইন-৭. মিল্লাত ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়।
মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে আনোয়ার নিজে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

৩৩. ইয়াবা ও গাঁজা খুচরা বিক্রেতা বিকি (২৫)। বিক্রি করে মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-এ,এভি-১, এডিসি ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে নিজে মাদক চালান নিয়ে আসেন।

৩৪. ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা নওশাদ (৩৫)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-বি, লাইন-১৪, ইরানি ক্যাম্প ও এর আশপাশের এলাকা। নওশাদ টেকনাফ, কক্সবাজার, উখিয়া থেকে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

৩৫. ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা লিটন (৩৬)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-এ, এভি-১, এডিসি ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে লিটন নিজে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

৩৬. হেরোইন ও ইয়াবার খুচরা বিক্রেতা জুম্মন (৩০)। মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-বি, লাইন-২২, মিল্লাত ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় মাদক বিক্রি করেন। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে নিজে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

৩৭. হেরোইন ও ইয়াবার খুচরা বিক্রেতা কাহানা (২৫)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-বি, লাইন-২২, মিল্লাত ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে নিজে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

৩৮. ইয়াবা ও গাঁজার পাইকারি বিক্রেতা রহমত (৩৬)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বর, ব্লক-বি, এভি-০৩, মিল্লাত ক্যাম্প পূর্ব পাশ ও আশপাশের এলাকায়।

৩৯. হেরোইনের পাইকারি বিক্রেতা সাব্বো (৩২)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-বি, লাইন নং-২২, মিল্লাত ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে নিজে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

৪০. ইয়াবা ও হেরোইনের খুচরা বিক্রেতা সনি (২৬)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-বি, মিল্লাত ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়।

৪১. গাঁজা ও ইয়াবার পাইকারি বিক্রেতা জামির (৩৮)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরে ব্লক-ডি, বাউনিয়াবাঁধ, আইডিয়াল স্কুলের আশেপাশের এলাকায়। কক্সবাজার, টেকনাফ থেকে নিজে অথবা অন্যের মাধ্যমে চালান নিয়ে আসেন।

৪২. গাঁজা ও ইয়াবার পাইকারি বিক্রেতা হুমায়ুন (২৪)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-ডি, বাউনিয়াবাঁধ ও আশেপাশের এলাকায়। আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী এলাকা থেকে নিজে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

৪৩. গাঁজা ও ইয়াবার পাইকারি বিক্রেতা রহমান (৩৮)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-ডি, বেড়িবাঁধ, বাউনিয়াবাঁধ ও আশাপাশের এলাকায়। আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী এলাকা থেকে নিজে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

৪৪. ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা দেলোয়ার (৪৫)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-বি, লাইন-১৪, ইরানি ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়। টেকনাফ, কক্সবাজার, উখিয়া থেকে মাদেকের চালান নিয়ে আসেন।

৪৫. ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা হিজড়া নাবর (৩৫)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-এ, এভিনিউ-০১, এডিসি ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে নিজে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

৪৬. ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা রনি (২৪)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১২ নম্বরের ব্লক-ই, কুর্মিটোলা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়। আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী থেকে মাদক নিয়ে আসেন।

৪৭. পাইকারি হেরোইন বিক্রেতা ভবন (৩০)। বিক্রি করেন মিরপুর-১১ নম্বরের ব্লক-বি, মিল্লাত ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে নিজে অথবা অন্যের মাধ্যমে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

৪৮. ইয়াবার পাইকারি বিক্রেতা স্বপন (৪২)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-ডি, বাউনিয়াবাঁধ স্কুলের আশপাশের এলাকায়। কক্সবাজার, টেকনাফ থেকে নিজে অথবা অন্যের মাধ্যমে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

৪৯. ইয়াবার পাইকারি বিক্রেতা লিটন (৪৫)। বিক্রি করেন মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক-ডি, বাউনিয়াবাঁধ স্কুলের আশপাশের এলাকায়। কক্সবাজার, টেকনাফ থেকে লিটন নিজে অথবা অন্যের মাধ্যমে মাদকের চালান নিয়ে আসেন।

৫০. ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা শাহানাজ (৩৮)। মাদক বিক্রি করেন মিরপুর ১২ নম্বরের কুর্মিটোলা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়। আব্দুল্লাহপুর টঙ্গী থেকে মাদক নিয়ে আসেন।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৪ মে হেরোইনের খুচরা বিক্রেতা পৃথিবীর স্পট মিল্লাত ক্যাম্পে অভিযান চালাতে যায় একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এ সময় পল্লবী থানার এসআই জাহাঙ্গীর অভিযানে বাধা দেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে গোয়েন্দা সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। তদন্ত শেষে এসআই জাহাঙ্গীরকে পল্লবী থানার মাদক অভিযান দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

৬ জুলাই একই এলাকায় পৃথিবীর স্পটে র‍্যাবের সোর্স ললিতা বাবু নামে এক ব্যক্তি স্থানীয়দের কাছে সাপ্তাহিক ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও স্থানীয়রা তাকে আটক করে মারধর করেন।

আরেকটি সূত্র জানায়, পল্লবীর মাদক সম্রাজ্ঞী শাহাজাদির কুর্মিটোলা ক্যাম্প স্পট থেকে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করতেন পল্লবী থানার কনস্টেবল নজরুল। বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির গোয়েন্দা তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয় জুলাই মাসে এবং পরে আগস্টে কনস্টেবল নজরুলকে বদলি করা হয়।

এসব বিষয়ে জানতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমানকে একাধিকবার কল করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

মাদক কারবারিদের তালিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তালিকাটা আগে দেখে তারপর কথা বলব। না দেখে এখনই কিছু বলতে পারছি না।

মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো পুলিশ কর্মকর্তা যদি মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশে জড়িত থাকেন তাদের চাকরি থাকবে না। আমি আমার সহকর্মীদের এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মাদক কারবারিদের তালিকার বিষয়ে আমি ওয়াকিবহাল নই। আমাদের প্রতিনিয়ত মাদকবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কেবল মৌখিক ঘোষণায় সীমাবদ্ধ। বাস্তবে যখন রাষ্ট্র জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে, তখন কি আসলেই মাদক উৎপাদন বন্ধ করে? দেশে মাদকের প্রবেশ রোধ করে? যারা মাদক উৎপাদন, আনা-নেওয়া বা বাণিজ্যে জড়িত, তাদের কি এসব ঘোষণায় কোনো ভয়ের সৃষ্টি হয়? আমার ধারণা হয় না। তারা মনে করে, রাষ্ট্র যা বলার বলবে, তারা তাদের ব্যবসা করে যাবে। কারণ মাদক বাণিজ্য থেকে আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে অনেকে। মাদকের কারবারে যে মুনাফা হয়, তার একটি বড় অংশ সুযোগ-সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের দেওয়া হয়। অর্থাৎ কেউ বিনিয়োগ না করেও মাদক কারবারের সুযোগ সৃষ্টি করে দিলে তারও বড় অংকের আর্থিক সুবিধা থাকে। সে কেন এই সুবিধাটা হারাবে?

এই আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। ফলে বাস্তবে মাদক নিয়ন্ত্রণে সদিচ্ছার অভাব দেখা যায়। আমাদের রাষ্ট্র মৌখিকভাবে সদিচ্ছা প্রকাশ করছে। কিছু লোক নানাভাবে দেখানো কাজ করছে এবং বিভিন্ন সময়ে মাদক ধরা পড়লে মামলা হচ্ছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপ খুবই অপর্যাপ্ত। মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কর্মসূচিও করা হয়। পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিভিন্ন সময়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালায়। তারা বারবার বলে, সবাইকে মাদকের বিষয়ে সচেতন হতে হবে”। কিন্তু বাংলাদেশি বাস্তবতা বলছে— শুধু সচেতনতা দিয়ে আমরা সমস্যার মূলোৎপাটন করতে পারব না। যদি দেশে মাদকের উৎপাদন ও প্রবেশ বন্ধ করা হয়, তবেই মানুষের মাদকাসক্ত হওয়া থামবে। মাদকের উপস্থিতি থাকলে সচেতনতা একা যথেষ্ট নয়।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক আরও বলেন, মাদকের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে। মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং তাদের সংযোগে সমাজে নানা অপরাধ, বিশৃঙ্খলা ও পারিবারিক অশান্তি বাড়ছে। চুরি, ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধের প্রবণতা বেড়ে যায়। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিজে যে পরিবেশে আছে, সেই পরিবেশই ধীরে ধীরে অশান্ত ও ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। ফলে মাদকের ক্ষতিও ব্যক্তিগত সীমা ছাড়িয়ে সমাজব্যাপী, দীর্ঘমেয়াদি ও সুদূরপ্রসারী হয়ে দাঁড়ায়।

মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু ভাষণ নয়, কার্যকর ও সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ করা, সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শক্ত করা, অংশগ্রহণকারী, পৃষ্ঠপোষকদের ও মাদক গডফাদারদের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অপরদিকে আসল নেতাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার প্রয়োগ করতে হবে।

এমএমআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।