সড়ক অবরোধের কর্মসূচি দিয়ে জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায় করা নিত্যদিনের একটি কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবারও (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ফার্মগেট এলাকায় ট্রাকচাপায় সিফাত নামে এক মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা সিফাত হত্যার বিচার এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ ট্যাগ দেওয়ায় প্রশাসনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে সড়ক অবরোধ করেন।
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রের ভঙ্গুর পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল করতে নানা উদ্যোগ নিতে থাকে অন্তর্বর্তী সরকার। শুরুর দিকে সরকারকে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়, তা হলো— আন্দোলনের মাধ্যমে বিভিন্ন গোষ্ঠীর একের পর এক দাবির হিড়িক। দাবি আদায়ের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে আন্দোলনকারীরা বেছে নেন সড়ক অবরোধ বা ব্লকেড কর্মসূচি।
বর্তমানে সড়কে ব্লকেড কর্মসূচির প্রবণতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে এখনো আন্দোলনকারীরা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে দাবি আদায়ের কৌশলই গ্রহণ করে চলেছেন। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে বিভিন্ন ব্যানারে হাজারেরও বেশি আন্দোলনে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
গত ৩১ আগস্ট সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১২৩টি সংগঠন ১৬০৪ বার অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো দাবি নিয়ে রাস্তায় নামছে মানুষ। রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে শ্রমিক সংগঠন, ছাত্র থেকে শুরু করে শিক্ষক—দাবি আদায়ে সভা-সমাবেশের পাশাপাশি সবারই সাধারণ কর্মসূচি সড়ক অবরোধ। এসব সভা-সমাবেশ ও অবরোধ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক জনবল মোতায়েন করতে হয়েছে পুলিশ বাহিনীকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ ও ভঙ্গুর। সেই ভঙ্গুর পরিস্থিতির মধ্যেই শুরু হয় একের পর এক আন্দোলন। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চলতে থাকে সড়ক অবরোধ ও ব্লকেড কর্মসূচি। ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ পৃথকভাবে তাদের দাবি আদায়ে আন্দোলনে যুক্ত হন। ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরাও নিজেদের নানান দাবি নিয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। বর্তমানে এগুলো একটু কমে এলেও কয়েকদিন আগেও সড়ক অবরোধ করে শিক্ষকরা আন্দোলন করেছেন। আজও প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন ব্যানারে নিজেদের দাবি উপস্থাপন করলেও, সবার দাবি আদায়ের পদ্ধতি এক—জনগণকে জিম্মি করে সড়ক অবরোধ। কারণ, এদেশে জনগণকে জিম্মি না করলে কোনো আন্দোলনই সফল হয় না—ইতিহাস এটাই বলে। কিন্তু এই নীতি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। আন্দোলন হতেই পারে। তবে নির্দিষ্ট জায়গায়, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে। সড়ক অবরোধের ফলে সাধারণ মানুষের যে ভোগান্তি হয়, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ধরুন, স্বামী তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন—পথে সড়ক ব্লকেড। সময় নেই, স্ত্রী লেবার পেইনে ছটফট করছেন, চিৎকার করছেন, কিন্তু তার চিৎকার কেউ শুনতে পাচ্ছে না। কারণ, যে যানবাহনে তিনি রয়েছেন, সেটি সড়কে আটকে আছে। আর সেই জায়গাতেই আন্দোলনরত শত শত মানুষ নিজেদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে স্লোগান দিচ্ছেন। সেই মুহূর্তে এই অন্তঃসত্ত্বা নারীর আর্তনাদে সাড়া দেওয়ার কারো সময় নেই— এগুলো কিন্তু সত্য ঘটনা উদাহরণস্বরূপ বললাম।
তৌহিদুল হক আরও বলেন, এই সমস্যাগুলোর সমাধান সরকারের একার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনসহ সব মহলকে একসাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান বের করতে হবে, সব শর্ত ও স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে। আন্দোলন ও দাবি থাকতেই পারে, তবে তা যেন সড়ক অবরোধের মাধ্যমে না হয়—জনগণকে জিম্মি করে নয়। যদি সকলে সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্তগুলো মেনে চলে, তবে সমস্যার সমাধান অন্তত কিছুটা হলেও সম্ভব। লাঠিপেটা, গরম পানি কিংবা টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এই সমস্যার সাময়িক সমাধান মিললেও, স্থায়ীভাবে জনভোগান্তি দূর করতে হবে। সেজন্য প্রথমেই সরকারের পক্ষ থেকেই মূল উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
চলতি অক্টোবর মাসে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করেছেন। এক পর্যায়ে শিক্ষকরাও শাহবাগে আড়াই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন তারা। এতে সারা দেশ থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী অংশ নেন। কিন্তু সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তারা। লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান থেকে পানি ছুড়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পরে কয়েক দিনের ধারাবাহিক আন্দোলনের কারণে সরকার পক্ষ থেকে শিক্ষকদের দাবি মেনে নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করায় আন্দোলন কর্মসূচি উঠিয়ে নেওয়া হয়।
সেই আন্দোলন শেষ হতে না হতেই বুধবার (২২ অক্টোবর) ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বসে ব্লকেড তৈরি করেছিলেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আবারো ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।
এর আগে গত জানুয়ারিতে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকরা রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৮ জানুয়ারি ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়। ওই ঘোষণার পর এখনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হয়নি। এ কারণে জাতীয়করণ ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবিতে আবারও সড়কে নামেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা। এক পর্যায়ে তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে সড়ক ছেড়ে দেন।
ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কে কখন কোন দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বসবে—এমন একটা আশঙ্কা নিয়ে ঢাকার মানুষকে এখন চলাচল করতে হয়। প্রায় দিনই কোনো না কোনো ব্যানারে ব্যস্ত সড়কে হাজির হচ্ছেন কেউ না কেউ। তবে আগের তুলনায় ব্লকেডের আন্দোলন কিছুটা কমে গেলেও গত সাতদিন শাহবাগ ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে ব্লকেডের বড় দুটি ঘটনা ঘটেছে। কেউ কেউ ব্যানার ছাড়াই হঠাৎ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ঢাকায় আন্দোলনের মূল স্থান হয়ে ওঠে শাহবাগ চত্বর, শহীদ মিনার, হাইকোর্ট মোড় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এলাকা। এসব এলাকার পাশাপাশি প্রতিদিনই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাবি নিয়ে আন্দোলন চলমান থাকে। শুধু দিনে নয় রাতেও আন্দোলন হচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, সামনে নির্বাচন। এখন ব্যাপক প্রস্তুতির পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে পুলিশ দিনরাত কাজ করছে। এরই মধ্যে আবারো যদি শুরু হয়ে যায় অবরোধের পর অবরোধ তাহলে পুলিশকে হিমশিম খেতে হবে। কোনো সড়কে ব্লকেড যদি দুই-তিন ঘণ্টা থাকে তাহলে পুরো ঢাকা শহরেই আস্তে আস্তে যানজট ছড়িয়ে পড়ে, দুর্ভোগ চরম অবস্থায় পৌঁছে যায়। এমনিতেই যানবাহনের জট লেগেই থাকে।
সরকার ও পুলিশকে ভাবিয়ে তোলা কিছু আন্দোলন
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রথম এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ‘অটো পাসের’ দাবি তোলে। ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট সচিবালয় ঘেরাও করে রাখার পর মিছিল নিয়ে শত শত পরীক্ষার্থী সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে। দাবি মেনে নিলে সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সচিবালয় ছাড়ে শিক্ষার্থীরা।
২৩ অক্টোবর আবারও একদল শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল পুনরায় প্রকাশ এবং এ সংক্রান্ত ত্রুটি সংশোধনের দাবিতে সচিবালয়ে প্রবেশ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় সেখান থেকে ৫৩ জনকে আটক করা হয়।
বাংলাদেশ আনসার বাহিনীর কিছু সদস্য চাকরির সংস্কারের জন্য কার্যত বিদ্রোহ শুরু করেন। তারা সচিবালয় অবরুদ্ধ করে রাখেন। ২৫ আগস্ট রাতে সেখানে সেনাবাহিনী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। এতে বহু মানুষ আহতও হন। পরে সেখানে থেকে চার শতাধিক আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর শুরু হয় চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের আন্দোলন। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিভিন্ন কারণে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ৩০ জানিুয়ারি প্রেসক্লাব, সচিবালয়, হাইকোর্ট এলাকা ৫ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর বিকেল ৪টায় তারা সরে যান।
পর পর নিজেদের দাবির পক্ষে আন্দোলন, বিক্ষোভ, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বিশেষ করে শাহবাগ অবরোধে রাখেন রিকশা-অটোরিকশা চালক, রেলশ্রমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বনাম সাত কলেজ, সাবেক বিডিআর সদস্য থেকে শুরু করে ছাত্র-শিক্ষক, চিকিৎসকরাও। অনেক সময় এসব আন্দোলনের যৌক্তিকতা থাকলেও তা সংগঠিতভাবে অনুমতির মাধ্যমে হয়নি, বরং শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দখল করে দাবি আদায়ের চেষ্টা চলেছে।
অনেকের মতে, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ‘অটো পাস’ দাবি মেনে নেওয়াই মূলত বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রধান কারণ। এটি প্রমাণ করেছে, আন্দোলন করলেই কিছু দাবি পূরণ হচ্ছে। এমন একটি ধারণা সবার মাঝে তৈরি হয়েছে। এর ফলে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গ্রুপ সড়কে নেমেছে।
এরপর ঢাকায় ঘটে কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা। বিশেষ করে ঢাকা কলেজ বনাম সিটি কলেজের সংঘর্ষ। নিউমার্কেট ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় বারবার শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজের সঙ্গে আইডিয়াল কলেজেরও পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়েছে। এসব কারণে যানজট সৃষ্টি হয়, যা ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে।
জাতীয় প্রেসক্লাব, সচিবালয়, শাহবাগ, তেজগাঁও—প্রতিটি জায়গায় আন্দোলনকারীদের উপস্থিতিতে প্রায় প্রতিদিনই মুখর থাকছে। কোনোদিন শিক্ষার্থীরা, কোনোদিন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য, কখনো ইন্টার্ন চিকিৎসক, আবার কখনো পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা রাস্তায় বসে পড়ছেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে তেজগাঁও পলিটেকনিকের ছয় দফা দাবি, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আন্দোলন, সর্বশেষ পিএসসির সংস্কারের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ— প্রতিটি ক্ষেত্রেই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাগুলোর বিচার ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের’ মাধ্যমে করার দাবিতে গত বছরের ১২ আগস্ট শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ এবং সনাতন ছাত্র ও নাগরিক সমাজের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর আবারও সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধসহ আট দাবিতে শাহবাগ অবরোধ করা হয়। ধর্মীয় উপাসনালয়, ঘরবাড়িতে হামলার অভিযোগ এনে তা বন্ধ ও নিরাপত্তা দেওয়াসহ ৮ দফা দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ। এতে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ২২ ডিসেম্বর শাহবাগে বেসরকারি ট্রেইনি চিকিৎসকরা বিক্ষোভ করেন।
৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসের পর ২৩ এপ্রিল তারা আন্দোলন স্থগিত করেন।
ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিতে জানুয়ারির শেষ দিকে টানা আন্দোলন করেন শিক্ষকরা। অষ্টম দিনে রোববার দুপুরে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
৯ জানুয়ারি রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন সাবেক বিডিআর সদস্য এবং নিহত পরিবারের স্বজনেরা। শাহবাগ থানার সামনে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ ছাড়া চলিত বছরের আগস্টে বুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবির আন্দোলন একপর্যায়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তারা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দিকে যেতে থাকেন। তিন দাবিতে আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের শাহবাগ অবরোধ থেকে যমুনা অভিমুখে যাত্রা ঘিরে তাদের ওপর পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার এবং লাঠিপেটার ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন।
একের পর এক আন্দোলন প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম বলেন, রমনা বিভাগে যোগদানের পর এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে দাবি আদায়ের আন্দোলন, অবরোধসহ ছোট-বড় শত শত কর্মসূচি মোকাবিলা করেছি, এখনো করে চলছি। সাধারণত আন্দোলনকারীদের সবারই লক্ষ্য থাকে তাদের দাবি আদায়। কিন্তু সড়ক অবরোধ, জনভোগান্তি ও সড়ক ব্লকেড এবং পুলিশের পেরেশানি ছাড়া তারা মনে করেন তাদের দাবি কখনোই পূরণ হবে না।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রমনা ডিভিশন এলাকা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। সচিবালয় ও তার আশপাশের সড়ক, জাতীয় প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট মাজার এলাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ মোড়, শহীদ মিনার—ঢাকা শহরের জনভোগান্তির প্রায় সব বড় আন্দোলনই এইসব এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ডিসি মাসুদ আলম বলেন, রমনা ডিভিশনের অভিজ্ঞতা এখন বিশাল। আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি কার্যকর করতে আন্দোলনের অন্যতম চাপ সৃষ্টিকারী হাতিয়ার হিসেবে সড়ক ‘ব্লকেড’ কর্মসূচির মাধ্যমে জনভোগান্তিকেই মূল কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে।
এজেডএস/এমজেএফ