ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

শিবির ক্যাডারদের দেয়া আগুনে পুড়ে কাতরাচ্ছেন মুছা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৩
শিবির ক্যাডারদের দেয়া আগুনে পুড়ে কাতরাচ্ছেন মুছা

চট্টগ্রাম: জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও হরতালে দেয়া আগুনে পুড়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ব্যাটারি চালিত অটো-রিক্সা টমটম চালক মো. মুছা। আট ভাই-বোনের মধ্যে তিনিইসবার বড়।

স্বপ্ন ভাই-বোনকে লেখাপড়া শিখিয়ে সংসারের অভাব দূর করা।

এনিয়ে সংসারের শত অভাব অনটনের মধ্যেও ভাইকে কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। বোনকেও স্কুলে দিয়েছেন।

কিন্তু হঠাৎ করেই যেন তার স্বপ্ন পুড়ে গেছে! জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের দেয়া আগুনে পুড়ে তিনি যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন চমেক হাসপাতালের বেডে। প্রহর গুনছেন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার।

সোমবার সকালে জামায়াতের ডাকা হরতালে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ায় মুছার টমটমে ভাংচুর করে শিবিরের ক্যাডাররা। একপর্যায়ে তারা ওই গাড়ি ও চালক মুছার শরীর পেট্রোল দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এতে চালক মুছার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের রেজিস্ট্রার ডা. হাসমত আলী মিয়া বাংলানিউজকে বলেন,‘মুছার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি পুড়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না। ’

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের (৩৬ নম্বর ওয়ার্ড) চার নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন মুছার চাচা আবদুল মাবুদ বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিনের মত পেটের দায়ে সকাল ৯টার দিকে টমটম নিয়ে রাস্তায় বের হন মুছা। তিনি কালামিয়া বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে বহদ্দারহাট যাওয়ার পথে এককিলোমিটার এলাকার নূরন্নবী হাউজিং সোসাইটির সামনে ৬ থেকে ৭ জন যুবক টমটমটি থামাতে বলেই ভাংচুর শুরু করে।

হরতাল সমর্থক বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করছেন স্বজনরা।

এসময় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাত্রীরা হুলস্থুল নেমে গেলেও মুছা নামতে পারেননি। একপর্যায়ে চলতি অবস্থায় চালক মুছা ও গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে পালিয়ে যায় শিবির ক্যাডাররা।

আবদুল মাবুদ বলেন,‘এ ঘটনার পর স্থানীয় ও পরিচিত কয়েকজন অজ্ঞান অবস্থায় মুছাকে ধরাধরি করে বাসায় নিয়ে আসে। সেখান থেকে তাকে মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। ’

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মুছার বাবা আবদুল মোনেফ পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। আবদুল মোনাফ যেদিন কাজ পান সেদিন খাবার জোটে আর কাজ না থাকলে ছেলের রোজগারের উপর তাকিয়ে থাকতে হয়। আট ভাই-বোনের মধ্যে দুইবোনকে বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু একবোন স্বামীর যৌতুকের নির্যাতনে স্বামীর ঘর ছেড়েছেন।

এদিকে কর্মক্ষম ও বড় ছেলের পুরো শরীর পুড়ে যাওয়ায় বারবারই মূর্ছা যাচ্ছেন মুছার বৃদ্ধা মা। স্বজনরা চেষ্টা করেও স্বাভাবিক করতে পারছেন না। ছেলের যন্ত্রণাময় পোড়া ক্ষত দেখে ছেলের কষ্টে তিনি বিলাপ করছেন। ভাই-বোনদের চোখেও ভাইকে বাঁচানোর একটাই আর্তি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪ ৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৩
এমবিএম/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।