চট্টগ্রাম: গ্রামীণব্যাংকের ঋণ পেতে হলে ঋণগ্রহীতাদের বাধ্যতামূলকভাবে ৩শ টাকার একটি এককালীন বীমা করতে হয়। সেই সঙ্গে খুলতে হয় নির্দিষ্ট অংকের ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম)।
গ্রামীণব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার জোবরা গ্রাম থেকে। এই গ্রামের বাসিন্দা, গ্রামীণব্যাংকের ঋণগ্রহীতা, গ্রামীণব্যাংক কর্মকর্তা ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এতথ্য জানা গেছে।
জোবরা গ্রামকে দুটি ভাগে ভাগ করে কার্যক্রম চালাচ্ছে গ্রামীণব্যাংক। এর একটি হচ্ছে পশ্চিম জোবরা, অন্যটি পূর্ব জোবরা। পশ্চিম জোবরায় গ্রামীণব্যাংকের কেন্দ্র রয়েছে পাঁচটি। পূর্ব জোবরায় রয়েছে দু’টি। প্রতিটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৫০ জন ঋণগ্রহীতা থাকে। সেই হিসেবে বর্তমানে জোবরা গ্রামে গ্রামীণব্যাংকের ঋণের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তিন’শ ৫০ জন।
পশ্চিম জোবরা গ্রামের বাসিন্দা এবং গ্রামীণব্যাংকের ঋণগ্রহীতা মোহাম্মদ হাশেম, উম্মে কুলসুম, মোহাম্মদ শোয়েব, সাবের আহমেদসহ বেশ কয়েকজন বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, কেউ গ্রামীণব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাইলে তাকে প্রথমে বাধ্যতামূলক একটি ডিপিএস অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। পাশাপাশি গ্রামীণব্যাংকের ঋণ যাতে কোনো ঝুঁকিতে না পড়ে, এ জন্য ঋণগ্রহীতাকে আগেই একটি সঞ্চয়ী হিসাবও খুলতে হয়।
অর্থাৎ কোনো গ্রাহক পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিতে চাইলে তাকে প্রথমে তিনশ’ টাকার একটি বাধ্যতামূলক বীমা খুলতে হয়। এই বীমার টাকা এককালীন দিতে হয়। ঋণের টাকার কিস্তি শেষ হয়ে গেলেও বীমার এই তিনশ টাকা আর ঋণগ্রহীতা আর ফেরত পান না। গ্রামীণব্যাংক থেকে যে কোনো ধরনের ঋণ নিলেই এই বীমা খুলতে হয়।
এছাড়া ঋণের টাকা নির্দিষ্ট সময়ে ফেরত পেতে ঋণ গ্রহণের আগেই এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাধ্যতামূলকভাবে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে হয়। তবে সঞ্চয়ী হিসেবের টাকা ১০ সপ্তাহ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত গ্রাহক তা ওঠাতে পারেন না। এই হিসেবের টাকা জমা দিতে হয় সপ্তাহান্তে।
গ্রাহকরা আরও জানান, গ্রামীণব্যাংক প্রথমে ঋণের টাকা ৫২ সপ্তাহের কিস্তিতে পরিশোধের সুবিধা দিলেও ধীরে ধীরে তা কমিয়ে আনে। বর্তমানে ৪৪ সপ্তাহের কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে হয়।
ঋণগ্রহীতা সাবের আহমেদ, প্রতাপ বড়–য়াসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, গ্রামীণব্যাংক যে পরিমাণ ঋণ দেয় তা দিয়ে কারোরই ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
সাবের আহমেদ পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন বছর দুয়েক আগে। ঋণ নেওয়ার পরের সপ্তাহ থেকে কিস্তি দিতে হয়েছে তাকে। ঋণ নিয়ে তিনি তখনও কোনো কাজ শুরু করেননি। এর আগেই কিস্তির টাকা নিতে গ্রামীণব্যাংকের কর্মকর্তারা সাবেরের বাড়িতে উপস্থিত। ঋণের টাকায় কোনো কাজ না করে তিনি তিন হাজার টাকা পরিশোধ করেন। পরে আরও দুই হাজার টাকা এবং সুদ দিয়ে ঋণের কিস্তি থেকে মুক্তি পান তিনি।
সাবের বলেন, ‘গ্রামীণব্যাংকের টাকা নেওয়া মানেই হলো মানসিক যন্ত্রণায় থাকা। ’
জোবরা গ্রামের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আনোয়ার মিয়া গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ বিষয়ে কথা বলতে প্রথমে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ নিয়ে অনেকেই লাভবান হয়েছে আবার অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ’
গ্রামীণব্যাংকের হাটহাজারী থানা শাখার ম্যানেজার (জোবরা গ্রাম এই থানার অর্ন্তগত) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, বর্তমানে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হলো সহজ ঋণ, ব্যবসায় ঋণ, সংগ্রামী ঋণ, উচ্চশিক্ষা ঋণ ও গৃহঋণ।
ঋণ নেওয়ার সময় যে বীমা করা হয়, সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না এই টাকা ফেরত দেওয়া হয় না। তবে ঋণের কিস্তি চলার সময়ে যদি কোনো গ্রাহক মারা যান তাহলে এই বীমার বিপরীতে ওই গ্রাহকের ঋণ মওকুফ করে দেওয়া হয়। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২২০, ডিসেম্বর ১০, ২০১০