রাজশাহী: অপেক্ষার পালা শেষ। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শেষভাগে রাজশাহীর বাজারে আসতে শুরু করেছে সুস্বাদু রসালো আম।
প্রায় আড়ইশ’ জাতের আম এখানে উৎপন্ন হয়। তবে বৈরি আবহাওয়ার কারণে আমের রাজধানী বলে খ্যাত রাজশাহীতে এবার আশানুরূপ ফলন হয়নি। টানা তাপপ্রবাহ এবং গত মে মাসে মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখীতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমের। আকারও ছোট হয়ে এসেছে।
এ বছর বাজারে প্রথম আমের দেখা মেলে গত মাসের শেষভাগে। আটি আর লখনা জাতের আম দিয়েই গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় জামাই ষষ্টি। আর জুনের প্রথম সপ্তাহে বাজারে উঠতে শুরু করেছে আমের রাজা বলে খ্যাত গোপালভোগ, ল্যাংড়া ও খিরসাপাত (হিমসাগর)। আমের আড়াইশ’ জাতের মধ্যে গোপালভোগ, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, বোম্বাই, ফজলি, আম্রপালি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লকনা ও মোহনভোগ জাতের আমের বেশি চাষ হয়েছে এবার।
মহানগরীর সাহেববাজার এলাকার আম ব্যবসায়ী শাহীন হোসেন বাংলানিউজকে জানান, গতবার জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহে বাজারে আম এলেও এ বছর তা হয়নি। চলমান তাপদাহে আমের ফলন যেমন কম হয়েছে, তেমনি আকারেও ছোট হয়েছে। তাই আমের দামও বেশ চড়া।
তিনি জানান, বর্তমানে বাজারে মানভেদে গোপালভোগ খুচরা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে। অথচ গত বছর শুরুর দিকে খুচরা বাজারে আম বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।
এবার আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় রাজশাহীর বাজারে দামের এ তারতম্য বলে উল্লেখ করেন আম ব্যবসায়ী শাহীন। চলতি সপ্তাহে গোপালভোগ, ল্যাংড়া ও খিরসাপাত আম অল্পবিস্তর উঠলেও খুচরা বাজারে চড়া দামে তা বিক্রি হচ্ছে। আর রাণীপছন্দ বিক্রি হচ্ছে গোপালভোগের দামেই।
সাহেববাজার স্বর্ণপট্টি এলাকার আম ব্যবসায়ী আবুল কালাম বাংলানিউজকে জানান, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমের আমদানি দ্বিগুণ হবে। সে সময় গোপালভোগ ও খিরসাপাত না থাকলেও অনেক জাতের আম আসবে। তবে এর চেয়ে আর বেশি দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কার্যালয়ের কৃষি কর্মকর্তা মুনতাজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, জেলায় ৯ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে রয়েছে ২৩ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে। এবার প্রায় ২৫ লাখ গাছে আম এসেছে।
তবে বৈরি আবহাওয়ার কারণে আমের আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। টানা তাপদাহে আমের ফলন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক গাছে আম পরিপক্ক না হতেই ঝরে যাচ্ছে অথবা ফেটে যাচ্ছে। আবার যেভাবে বড় হওয়ার দরকার সেভাবে তা না হওয়ায় আকারেও ছোট হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমের শুরুতে রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর জেলার আমগাছগুলোর ৯০ শতাংশেই মুকুল ধরেছিল। কিন্তু ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকেও আবহাওয়া ছিল বিরূপ। ঘন কুয়াশা ও কয়েক দফা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়।
যে কারণে আম গাছে মুকুলের কিছুটা ক্ষতি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত আমচাষিরা গাছের নিয়মিত পরিচর্যার নেওয়ায় ফলনে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটেনি। এ অবস্থায় তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকলে এবং বৃষ্টি হলে চলতি বছরও রাজশাহী অঞ্চলে আমের বাম্পার ফলন হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জুন মাসের শুরুতেই রাজশাহী অঞ্চলের গাছ থেকে আম সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে। প্রথমেই বাজারে এসেছে জাত আম গোপালভোগ, ল্যাংড়া ও খিরসাপাত। পর্যায়ক্রমে বাজারে আসবে আম্রপালি, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, ফজলি প্রভৃতি আম। সর্বশেষ বাজারে আসবে আশ্বিনা আম।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৪