ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

প্রাণঘাতী বজ্র-বিদ্যুতের কালবৈশাখী, মওসুমের আগেই ভারীবর্ষণ

মাহমুদ মেনন, আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১১
প্রাণঘাতী বজ্র-বিদ্যুতের কালবৈশাখী, মওসুমের আগেই ভারীবর্ষণ

ঢাকা: দেশে এবছর স্বাভাবিক গড়ের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি কালবৈশাখী ঝড় হানা দিয়েছে। এর সঙ্গে বজ্র-বিদ্যুতের আঘাতে বেড়েছে হতাহতের সংখ্যা।

মওসুমের আগেই শুরু হয়েছে ভারী ও মাঝারি বর্ষণ। তাতে শঙ্কিত কৃষকরা।

সারা এপ্রিল মাসে ১১টি কালবৈশাখী রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। যা এই সময়ের স্বাভাবিক গড় হিসেবের চেয়ে অন্তত ৪টি বেশি। মে মাসে সারা দেশে যতগুলো কাল বৈশাখী ঝড় রেকর্ড করা হচ্ছে তাতে এমাসের চিত্রটিও একই রকম হতে পারে বলে জানান আওহাওয়া দফতরে কর্মরত আবহাওয়াবিদ সাদেকুল আলম।

২০১০ সালের সঙ্গে ২০১১ সালের এই সময়টিতে আবহাওয়ায় সুনির্দিষ্ট পার্থক্য রয়েছে বলেই জানান তিনি। সাদেকুল জানান, ২০১০ সালের ১০ জুন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়নি বলেই চলে। অথচ এবছর প্রায় প্রতিদিনই দেশের অধিকাংশ স্থানেই কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে।

তবে এ কারণে প্রকৃতিতে বৈরী কোনো প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করেন এই আবহাওয়াবিদ। তিনি বলেন, কোনো কোনো বছর এর চেয়েও বেশি সংখ্যায় কালবৈশাখী ঝড় হয় এবং কখনো কখনো এর চেয়ে কম হয়। একে প্রকৃতির বৈরী আচরণ বলা চলে না।

আবহাওয়া অফিসের হিসেবে প্রতিদিনই গড়ে সারা দেশে ৭/৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ৩০ থেকে ৩৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হচ্ছে।

রাজধানী ঢাকায় ও আশে-পাশের এলাকাতেও এবার যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে তা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি বলে জানায় আবহাওয়া বিভাগ।

তবে কালবৈশাখী হানা দেওয়ার পাশাপাশি এবছর বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেশি বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। বজ্রপাতে নিহতের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আবহাওয়া দপ্তরে না থাকলেও সেখানকার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এর গড় সংখ্যা প্রতিবছর ২০০ জনের বেশি হবে না। কিন্তু এবছর বর্ষা মওসুম শুরুর আগেই কেবল কালবৈশাখীর প্রভাবে সৃষ্ট মেঘ ও তাতে ঘর্ষণে সৃষ্ট বিদ্যুতের আঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা এরই মধ্যে ১০০ জন ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলানিউজের হাতে আসা খবর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু করে ২৩ মে পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৩ জন মানুষ বজ্রাহত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। এর মধ্যে গত ২৩ মে একদিনেই সারা দেশে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে ৩৩ জন। এর দুই দিন আগে ২১ মে মারা গেছেন ১১ জন। এছাড়াও কয়েক দিনই সারা দেশ থেকে ৬/৭ জন করে নিহত হওয়ার খবর এসেছে।  

বজ্রাঘাতে প্রাণহানি কমাতে সচেতনতার ওপরই জোর দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, প্রকৃতির এই ঘটনাটি প্রতিহত করার কোনো পদ্ধতিই মানুষের হাতে নেই। তবে সচেতন হলে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব।

বৃষ্টি বা মেঘ দেখলে কৃষকসহ সংশ্লিষ্টদেও ঘরের নিচে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এদিকে দিনে সূর্যালোকের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকছে গড়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা করে এবং আর এ কারণে জলীয় বাষ্প উৎপাদনের পরিমাণ কম যাচ্ছে।

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে বছরের এই সময়ের হিসেবে সপ্তাহে সূর্যকিরণের গড় মান ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ধরা হলেও গত এক সপ্তাহে তা ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার বেশি ছিলো না। দিনের অধিকাংশ সময়ই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকছে। আর এটা ঘটছে কাল বৈশাখী ঝড়ের প্রভাবেই।

জলীয় বাষ্প তৈরির হার কমায় বৃষ্টি কম হওয়ার সম্ভাবনা কিংবা মৌসুমী বৃষ্টিতে এর কোনো প্রভাব পড়বে কী না এমনটা জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ সাদেকুল আলম জানান, এর তেমন কোনো প্রভাব বৃষ্টিতে পড়বে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে জলভাগ তা থেকে সৃষ্ট জলীয় বাষ্প এ ভুভাগে বৃষ্টিপাতে খুব সামান্য ভুমিকাই রাখে।

প্রতিদিনই বৃষ্টি দেখে মৌসুমী বৃষ্টি আগেভাগেই এসে গেলো কিনা অনেকের মধ্যে এমন আশঙ্কা কাজ করলেও আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি এখনো শুরু হয়নি। আবহাওয়া দপ্তর মনে করছে জুনের প্রথম ভাগেই মৌসুমী বৃষ্টি শুরু হবে।

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ বিহার ও তৎসংগ্ন এলাকায় একটি লঘু চাপ অবস্থান করছে যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর বলছে এই লঘুচাপটি ঘণীভ’ত হয়েই মৌসুমী বৃষ্টি শুরু হবে।

তবে আবহাওয়া বৈরি না হলেও একদিকে টানা বৃষ্টির উৎপাত আর অন্যদিকে সূর্যকিরণ কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বিশেষ করে এখন চলছে বোর ধানের ফসল কাটার মওসুম। এ অবস্থায় বৃষ্টির কারণে মাঠ থেকে ধান কাটা এবং তা শুকানোর ক্ষেত্রে দারুন বেগ পাচ্ছেন কৃষকরা।

এদিকে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে নিম্ণাঞ্চলে উৎপাদিত এসব বোরোধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময় ১৩৩৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।