ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

মাকে চিনতে পারবো... কিন্তু কবে যাবো?

জামাল হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১১
মাকে চিনতে পারবো... কিন্তু কবে যাবো?

বেনাপোল (যশোর): মায়ের মুখচ্ছবি আবছা মনে আছে আইনুদ্দিনের। কামালের কাছে সবটাই ধোঁয়াটে।

আইনুদ্দিন ও কামাল সহোদর। তারা কী খুঁজে পাবে তাদের মাকে? জন্মভূমির টানে ফিরে যেতে চায় দুই ভাই। কিন্তু কোন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য?  

নয় বছর আগে কোনো এক দুপুরে হারিয়ে যায় দুই ভাই। তখন আইনুদ্দিন ছয় বছরের ও কামাল পাঁচ বছরে। এরপর পেরিয়ে গেছে নয়টি বছর। শৈশব পেরিয়ে এখন তারা কিশোর। নিবাস যশোরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র। সেখানে অনিশ্চয়তার প্রহর যেন গুনতে গুনতে যেন আর শেষ হয়না তাদের।

কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে, আইনের জটিলতাই মায়ের মমতা থেকে বঞ্চিত করেছে দুই সহোদরকে।

তাদের কাছেই ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট থানার ধন্যকুড়িয়া গ্রামের সাবিনা খাতুনের তিন সন্তানের দু’জন আইনুদ্দিন ও কামাল। তাদের বাবা মঈনুদ্দিন গাজী ওরফে মন্টা দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে।
 
২০০২ সালের ২০ আগস্ট দুই সহোদর অজানার উদ্দেশ্যে বের হয়ে এক সময় নোম্যান্সল্যান্ড পেরিয়ে বাংলাদেশের বেনাপোলে পৌঁছে যায়।

বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদস্যরা শিশু দুটিকে উদ্ধার করে পোর্ট থানায় হস্তান্তর করে ঐ দিন সন্ধ্যায়। পরদিন ২১ আগস্ট আদালতের মাধ্যমে নেওয়া হয় যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে।

তিনদিনের মাথায় বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি শিশু দু’টিকে তাদের জিম্মায় নেয়। এরপর পাঁচ বছর ধরে সমিতির শেল্টার হোমে ছিল পথ হারানো এ শিশু দুটি। ২০০৭ সালের ২৬ জুন পুনরায় তাদের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে হস্তান্তর করে মহিলা আইনজীবী সমিতি। আর সেই থেকেই বাড়ি ফেরার অনিশ্চয়তায় বেড়ে উঠেছে তারা।
 
এ ব্যাপারে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক রবিউল করিম বলেন, ‘আইনি কিছু জটিলতা আছে। তবে ওদের ঠিকানা পাওয়া গেছে এবং বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির মাধ্যমে তাদেরকে ভারতে পাঠানোর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। ’

আইনুদ্দিন জানায়, তার দেশের ধন্যকুড়িয়া গ্রামে পৌঁছে দিলে পথ চিনে মায়ের কাছে যেতে পারবে। এখনও মায়ের চেহারা তার মনে আছে।

উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোরদ্বয় পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ করেছে। এছাড়া ইলেকট্রিক ও ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শিখেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

যশোর জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রোগ্রাম কর্মকর্তা এবিএম মোহিত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এ ব্যাপারে ঢাকায় তাদের কেন্দীয় অফিস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ভারতীয় হাইকমিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে । পরে ভারতীয় একটি বেসরকারি সংস্থা কিশোরদের গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় তাদের মাকে খুঁজে পায় না।

তিনি জানান, এ সংস্থা জানায় যে, ওদের মা আবার বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে কিশোরদের হস্তান্তর করতে বিলম্ব হচ্ছে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।