সিরাজগঞ্জ: দ্বিতীয় ধাপে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাইয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।
বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনায় ১৫ গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।
বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বিকেল ৪টা পর্যন্ত সদর উপজেলার চরাঞ্চল মেছড়া, কাওয়াকোলা, বহুলী ও খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে এসব ঘটনা ঘটে।
বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনলেও তা অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা।
মেছড়া ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজিপুর, ভুয়াপুর ও সরিষাবাড়ী চরাঞ্চল থেকে ক্যাডার ভাড়া করে এনেছে। নির্বাচনের আগের দিন বুধবার রাত ১২টার দিকে অন্তত ২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে ওই সন্ত্রাসীরা। পরে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে দু’টি মোটরসাইকেলসহ বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় হামলাকারীদের মারপিট ও গুলিতে আমার অন্তত ১০জন কর্মী আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, গটিয়া, তেঘুরি ও আকনা দিঘি ভোটকেন্দ্র সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের দখলে ছিল। তারা ভোটারদের কাছ থেকে বল প্রয়োগ করে ভোট আদায় করেছে।
এ ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (ওসি) আব্দুল বারিক বাংলানিউজকে জানান, দু’প্রার্থীর বাড়ি পাশাপাশি। রাতের অন্ধকারে কে বা কারা হঠাৎ করেই গুলিবর্ষণ করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
মেছড়া ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, দু’একটি কেন্দ্রে সামান্য উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছেল। তবে ভোটকেন্দ্র দখল বা ব্যালট ছিনতাইয়ের বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি।
অপরদিকে কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বড়কয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এ সময় তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
এ কেন্দ্রের কর্তব্যরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) চাঁদ আলী বাংলানিউজকে জানান, পৌনে ১১টার দিকে একদল লোক কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ৯ রাউন্ড শর্টগানের গুলি নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পরে কেন্দ্রটি স্থগিত করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ৩জনকে আটক করা হয়েছে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বহুলীর ধীতপুর কেন্দ্রে ২টি ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ৬ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীম আহম্মেদ বাংলানিউজকে জানান, হঠাৎ করে একদল দুর্বৃত্ত ধীতপুর কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে চেয়ারম্যান ও মহিলা মেম্বর প্রার্থীর ১০০ ব্যালট পেপারের ২টি বই ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৬ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়নি।
বিকেল ৩টার দিকে খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের নিস্তারিনী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ২ মেম্বর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে ৫ গুলিবিদ্ধসহ ৯ জন আহত হয়।
খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও এগুলো ভোটকেন্দ্রে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।
জেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুর রহিম জানান, দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি বুঝে প্রিজাইডিং অফিসাররা কোনো কোনো কেন্দ্র সাময়িক বন্ধ রাখার পর স্বাভাবিক হলে আবার চালু করেছে। সার্বিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে এ কর্মকর্তা জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৬
এসএইচ