ঢাকা: কাউন্সিল শেষে বিএনপির নেতা, কর্মী, সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও বিশ্লেষকদের কাছে একটাই প্রশ্ন, কত বড় হচ্ছে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটি এবং কবে নাগাদ আলোর মুখ দেখবে নতুন এ কমিটি।
দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা ঘরোয়া বৈঠক, চায়ের আড্ডা, দলীয় কার্যালয় ও নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে একত্রিত হলেই কমিটির আকার, ঘোষণার দিনক্ষণ ও নতুন কমিটিতে কারা ঠাঁই পাচ্ছেন-তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্কে মেতে উঠছেন।
কেউ বলছেন, খুব শিগগিরই আসবে নতুন কমিটি, কেউ বলছেন কাজ যেহেতু এক হাতে করছেন খালেদা জিয়া, তাই সময় লাগবে। তবে সবাই একটি ব্যাপারে একমত পোষণ করছেন, বেশি সংখ্যক নেতাকে জায়গা করে দিতে এবার ‘ঢাউস কমিটি’ করবেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
যদিও কমিটির আকার নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো ধারণা কাউন্সিলের আগে-পরে দেওয়া হয়নি। কমিটির আকৃতি নিয়ে সবার ধারণাই আপাতত অনুমান নির্ভর।
সম্প্রতি বিএনপির বেশ কয়েকজন সক্রিয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিটির আকার সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা খালেদা জিয়া দেননি। তবে কাউন্সিলের আগে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠকে কমিটি বড় করার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
বিএনপির বর্তমান জাতীয় নির্বাহী কমিটি ৩৮৩ জন বিশিষ্ট। এদের মধ্যে কর্মকর্তার সংখ্যা ১১৮ জন। বাকি ২৬৫ জন হলেন সদস্য। তবে জাতীয় স্থায়ী কমিটির ১৯ জন ও চেয়ারপারসনের ৩৫ জন উপদেষ্টা মিলে এর আকার দাঁড়ায় ৪৩৭ জনে।
সূত্রমতে, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ ভেঙে দিয়ে বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে এখানে সদস্য সংখ্যা বেড়ে ৪১এ দাঁড়াবে। অর্থাৎ এখানে নতুন ৬টি পদ তৈরি হচ্ছে।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির আকারও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১৯ সদস্য বিশিষ্ট স্থায়ী কমিটি ২১ বা ২৩ সদস্য বিশিষ্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটিতে পদ সংখ্যা বাড়ছে ২ থেকে ৪ জন।
বিএনপির বর্তমান কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান আছেন ১৬ জন। বিশেষ প্রয়োজন হলে বা বেশি সংখ্যক নেতাকে জায়গা করে দেওয়ার ইচ্ছা পূরণ করতে গেলে এখানেও পদ বাড়তে পারে ৯টি। অর্থাৎ ১৬ জনের জায়গায় ২৫ জনকে দেখা যেতে পারে ভাইস চেয়ারম্যান পদে।
সূত্রমতে, উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান’র মত দলের যুগ্ম মহাসচিব পদও বাড়তে পারে। বর্তমান কমিটিতে থাকা ৭ জন যুগ্ম মহাসচিবের জায়গায় এবার ১১ জন করা হতে পারে। অর্থাৎ এখানেও আরো ৪ পদ সৃষ্টি হবে।
নতুন বিভাগ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জন্য একজন করে মোট ৭ জন সাংগঠনিক সম্পাদক নিয়োগ দেবেন খালেদা জিয়া। বর্তমান কমিটি এই ফরমেটেই আছে।
দলে সহ আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদ সৃষ্টি করায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আকার আরো কিছুটা বাড়বে। এ পদে আরো অন্তত ৭জনকে নিয়োগ দিতে হবে। গত কমিটিতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এর পদ থাকলেও সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের পদ ছিল না।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আদলে অর্থ ও পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি, আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, গবেষণা, শিল্প ও বাণিজ্য, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, নারী ও শিশু, যুব উন্নয়ন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ, যোগাযোগ ও গণপরিবহন, এনার্জি ও খনিজ সম্পদ, মানবাধিকার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মুক্তিযুদ্ধ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণ, সুশাসন ও জনপ্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জাতীয় সংহতি ও এথনিক মাইনোরিটি বিষয়ক ২৫টি উপ কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে বিএনপি।
এই ২৫টি উপকিমিটিতে ২৫ জন সম্পাদকসহ প্রতিটা কমিটিতে অনধিক ১২জন করে সহ সম্পাদক থাকতে পারে। অর্থাৎ উপ কমিটিতেই ঠাঁই হতে পারে ৩২৫ জন নেতার।
অর্থাৎ ঢাউস আকার হতে যাচ্ছে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির। বর্তমান ৪৩৭ (৩৮৩+৩৫+১৯) সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ৭৯২ সদস্য বিশিষ্ট হতে পারে। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিএনপিতে মতনৈক্য রয়েছে।
কমিটির আকার সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ৬ বছর পর জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। নেতৃত্ব দেওয়ার মত নেতার সংখ্যা বেড়েছে। তাই সবাইকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কমিটির আকার বড় হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৬
এজেড/আরআই