ঢাকা: প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করলেও গত দুই মাসে কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে হতাশা ও নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দু’টি ‘ব্যর্থ’ আন্দোলনের পর জাতীয় কাউন্সিল ও নতুন কমিটি ঘিরে তাদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল। তারা মনে করেছিলেন, নতুন দায়িত্ব পাওয়া কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা সফর করে তৃণমূল ও মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে চাঙ্গাভাব ফিরিয়ে আনবেন। দীর্ঘদিন পর কাউন্সিল হওয়ায় দলের নেতৃত্ব তরুণদের হাতে আসবে। নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করবে সবাই। নবীণ-প্রবীণের মেলবন্ধনে জেগে উঠবে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি।
কিন্তু ‘খালেদা-তারেক মার্কা’ কাউন্সিলের পর দুই মাস ছয় দিন পার হয়ে গেলেও কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি বিএনপি। মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মিলে মোট ৪০টির মতো পদ ঘোষণা করলেও দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করতে পারেননি খালেদা জিয়া।
যুবদলের নির্বাহী সদস্য এইচ এম সাইফ আলী খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘দলটাকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। কিন্তু দলের বর্তমান অবস্থা দেখে খুব কষ্ট লাগে। কোথা থেকে কী যে হচ্ছে বুঝতে পারছি না’।
মাঠ পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতাও বিএনপির বর্তমান পরিস্থিতিতে হতাশ। তারা বলছেন, কাউন্সিল নিয়ে যে উৎসাহ -উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখন হতাশায় পর্যবশিত হয়েছে।
সূত্রমতে, সম্পাদক, সহ সম্পাদক ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ প্রত্যাশী তৃণমূল নেতাদের মধ্যে হতাশার মাত্রা একটু বেশি। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে মামলা-মোকদ্দমার শিকার হয়ে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন তারা। দলের একটা পদ তাদের জন্য শান্তনার কারণ হতে পারত। কিন্তু দলীয় চেয়ারপারসন কমিটি ঝুলিয়ে রাখায় শান্তনার জায়গায় হতাশা ভর করেছে তাদের মধ্যে।
এদিকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান প্যানেল ও উপদেষ্টা পরিষদ গঠন না করায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
দলের গুরুত্বপূর্ণ পদপ্রত্যাশী প্রায় একশ’ নেতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন কমিটি ঘোষণার জন্য। বিভিন্ন পদে আসীন নেতারা তো বটেই, যেসব নেতা নতুন করে পদ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন, তাদের মধ্যে অস্থিরতা একটু বেশি। কেউ কেউ প্রচণ্ড ক্ষোভে দলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন না। দলীয় কর্মসূচি এড়িয়ে চলছেন।
কিন্তু বিষয়গুলো মোটেই আমলে নিচ্ছেন না খালেদা জিয়া। তিনি যথারীতি নীরব রয়েছেন। জাতীয় কাউন্সিলের পর অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ ব্যাপারে কেউ কেউ কথা তুললেও বিএনপির চেয়ারপারসন ছিলেন নির্বিকার। যখনই কথা উঠেছে, তখনই তিনি প্রসঙ্গ পাল্টে ভিন্ন প্রসঙ্গ তুলেছেন।
কর্মীদের হতাশা, নেতাদের ক্ষোভ ও খালেদা জিয়ার নীরবতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। তাড়াহুড়ো করে কিছু হবে না। কমিটি গঠনের দায়িত্ব ম্যাডামের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। তিনি যখন মনে করবেন, তখনই কমিটি ঘোষণা দেবেন। আপাতত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে’।
তবে না প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক শীর্ষনেতা বাংলানিউজকে বলেন, এ ক’দিনে হয়তো স্থায়ী কমিটি ঘোষণা হয়ে যেতো। কিন্তু উটকো ঝামেলার (আসলাম চৌধুরী ইস্যু) কারণে দেরি হয়ে গেল। খুব শিগগিরই হয়তো স্থায়ী কমিটির নাম ঘোষণা করবেন খালেদা জিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৬
এজেড/এএসআর