ঢাকা: রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়া বিএনপি ইফতার রাজনীতিতেও খেল প্রচণ্ড এক ধাক্কা। বিগত বছরগুলোতে ব্যাকফুটে থাকা বিএনপি ইফতার কেন্দ্রিক রাজনীতিতে কিছুটা ফ্রন্টফুটে আসার সুযোগ পেলেও এবার তা হয়নি।
প্রতি বছরের মত এবারও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রথম রোজা থেকে শুরু করে ষষ্ঠ রোজা পর্যন্ত ওলামা-মাশায়েখ ও এতিম শিশু, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী নেতা ও বিশিষ্ট নাগরিক এবং ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও মিশন প্রধানদের সম্মানে পৃথক চারটি ইফতার মাহফিল আয়োজন করেন।
সোমবার (১৩ জুন) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও মিশন প্রধানদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিল-ই এ বছর খালেদা জিয়ার শেষ ইফতার মাহফিল।
এর পর ২০ দলীয় জোট, সমমনা রাজনৈতিক দল ও বিএনপিপন্থী কয়েকটি সংগঠন আয়োজিত ইফতার মাহফিলে অংশ নেবেন খালেদা। তবে ওই ইফতার মাহফিলগুলোর আয়োজক তিনি নন, বরং আমন্ত্রিত অতিথি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত শনিবার (১১ জুন) চতুর্থ রোজায় রাজনীতিবিদদের সম্মানে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সময় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ও ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানান খালেদা জিয়া।
কিন্তু তার এই আমন্ত্রণে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক ছাড়া আর কেউ আসেননি।
২০ দলীয় জোটের বাইরে থেকে আসা এক মাত্র রাজনৈতিক দলের এই প্রতিনিধিকেও মঞ্চে তোলেননি খালেদা জিয়া। শরিক দলের নেতাদের নিয়ে ইফতার সেরেছেন তিনি।
বিগত বছরের ইফতার মাহফিলগুলোতে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্টপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জে এস ডি) সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আ স ম আব্দুর রব, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, সিপিবির সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান, বর্তমান সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না অংশ নিতেন খালেদা জিয়ার ইফতার মাহফিলে।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ইফতার মাহফিলে অংশ না নিলেও দলের একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে দিতেন।
গত বছর বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী ব্যক্তিগত কারণে হাজির হতে না পারায় তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কারাগারে থাকায় মাহমুদুর রহমান মান্নার পক্ষ থেকে এসেছিলেন নাগরিক ঐক্য’র একটি প্রতিনিধি দল।
কিন্তু এবার এদের কেউ আসেননি। বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী ছাড়া কেউ প্রতিনিধিও পাঠাননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার ইফতার মাহফিলে না আসায় হতাশ হয়েছেন বিএনপি নেতারা। কেন তারা এলেন না- এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দলের অভ্যন্তরে পরস্পরের প্রতি দায় চাপানোর প্রতিযোগিতাও চলছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইফতার মাহফিল রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি নয়। এটা ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান। সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যারা সময় পেয়েছেন এসেছেন। ব্যক্তিগত কারণে অনেকেই আসতে পারেননি। কেউ কেউ প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তা করার কিছু নেই।
শুধু রাজনীতিবিদদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার নয়, পেশাজীবী নেতা ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলেও প্রচণ্ড এক ধাক্কা খেয়েছে বিএনপি।
রোববার (১২ জুন) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আয়োজিত এ ইফতার মাহফিলে বিএনপি এবং জামায়াতপন্থী পেশাজীবী নেতা ও বিশিষ্ট নাগরিকরাই এসেছেন। এর বাইরে উল্লেখযোগ্য কোনো বিশিষ্ট নাগরিক খালেদা জিয়ার ইফতার মাহফিলে আসেননি।
বিগত বছরগুলোতে জাতীয় দৈনিকগুলোর সম্পাদক, টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী, ব্যাবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সাবেক ফুটবলার, ক্রিকেটার, অভিনেতা-অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র নির্মিতাসহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনদের খালেদা জিয়ার ইফতার মাহফিলে শরিক হতে দেখা গেছে।
এ বছর জামায়াতের পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ, দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক মহিউদ্দিন আলমগীর এবং জামায়াত-বিএনপিপন্থী কয়েকজন সাংবাদিক খালেদা জিয়ার ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
এজেড/জেডএম