ঢাকা: দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির নতুন কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে তার নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনানোর আগেই বিএনপির সিদ্ধান্তে পেরেক ঠুকে দেন মোসাদ্দেক আলী ফালু।
আগের কমিটির উপদেষ্টা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ফালু কেনো এভাবে উল্টোরথে চাপলেন- এ নিয়ে দলীয় পরিমণ্ডলে চলছে নানা আলোচনা-বিতর্ক চলছে।
দলের নেতাকর্মীদেরই কেউ কেউ বলছেন, ফালু বরাবরই ব্যবসায়ী। ব্যবসা সূত্রেই বিএনপির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা এবং খালেদা জিয়ার সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক। সেই ব্যবসা-ই টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বিএনপিবিমুখ আচরণ দেখা গেছে তার। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপির রাজনীতি আরও দুর্দশায় পড়লে ফালুর বিএনপিবিমুখ অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়ে পড়ে। সেই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পেয়েও সটকে পড়েছেন তিনি।
মূলত এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন ফালু। সেসময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে মাঠে থেকে ‘একনিষ্ঠতা’র পরিচয় দিয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন বিএনপির।
কিন্তু এর বাইরে তিনি আলাদা করে গোছাতে থাকেন ব্যবসা। বিএনপি চেয়ারপারসনের আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে ঊর্ধ্বমুখী গতিতে বিস্তৃত হতে থাকে ফালুর ব্যবসায়িক জগত।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত মিলে ৪ দলীয় জোট সরকার গঠনের পর ঢাকা-১০ আসন (তেজগাঁও) থেকে উপ-নির্বাচনে (মান্নানের ছেড়ে দেওয়া আসনে) জিতে সংসদ সদস্য হন ফালু। এরপর তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম যেন আশীর্বাদ লাভ করে।
পুঁজিবাজার, ভূমি, সিরামিকস, আবাসন, নির্মাণ প্রভৃতি খাতে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা ফালু ২০০৩ সালে নাম লেখান সম্প্রচার খাতের ব্যবসায়ও। তিনি সেসময় প্রতিষ্ঠা করেন স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি। এরপর নিয়ে আসেন আরেকটি স্যাটেলাইট চ্যানেল আরটিভি। ২০০৪ সালে নিয়ে আসেন দৈনিক আমার দেশ।
বিএনপি জোটের সরকার এবং তিনটি সংবাদমাধ্যমের কর্ণধার হিসেবে ফালু তার রাজনৈতিক কর্মসূচির চেয়ে মনোযোগ বেশি দেন ব্যবসায়েই। তিনি গড়ে তোলেন নানা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে তিনি ঢাকা-সাংহাই সিরামিকস, এমএএইচ সিকিউরিটিজ, রোজা প্রপার্টিজ, রোজা ইন্ডাস্ট্রিয়াল, রোজা অ্যাগ্রো, কক্সবাজারের দ্য কক্স টুডে লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। নিযুক্ত হন দেশের বেসরকারি খাতের অন্যতম বড় আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানও।
গড়ে তোলেন ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, বেল কন্সট্রাকশন, রাকিন ডেভেলপমেন্ট, স্টার পোরসেলিন প্রাইভেট লিমিটেড, এসএম আবাসন লিমিটেড এবং আশালয় হাউজিং লিমিটেড, ব্রাদারহুড এন্টারপ্রাইজ, ব্রাদারহুড সিকিউরিটিজ, ব্রিলট্রেড ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্রিলট্রেড, ব্রিলট্রেড কালার কোট লিমিটেডসহ অনেক প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু এক/এগারোর সময়ে দেশজুড়ে দুদকের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হলে কারাগারে ঢুকতে হয় তাকে। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি পরিবর্তন হলে কারাগার থেকে বের হন ফালু। কিন্তু তারপর থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে শুরু করেন তিনি। কেবল যোগাযোগ রাখেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রথম বার্ষিকীতে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বিএনপির অবরোধ চলাকালে ১ ফেব্রুয়ারি খালেদার বাসার সামনে থেকে আটক হন তিনি। আটক হওয়ার পর বেশ ক’মাস কারাভোগ করেন ফালু। ওই বছরের জুনে কারামুক্ত হওয়ার পর বিএনপির আর কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি তাকে।
দলীয় সূত্রের খবর, গত মার্চে অনুষ্ঠিত বিএনপির কাউন্সিলের আগে ফালুকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়। বিষয়টি শুনেই তিনি নাকচ করে দেন। এমনকি কমিটিতেও তাকে না রাখতে অনুরোধ করেন।
সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে শনিবার ভাইস চেয়ারম্যান পদে তার নাম ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই তা ‘ছেড়ে’ দিলেন ফালু।
মোসাদ্দেক আলী ফালু অনেক জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। অবশ্য এ নিয়ে পুরোপুরিই প্রচারবিমুখ তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৭ , ২০১৬
এইচএ/জেডএম