ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

বিএনপির জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ আর এগোবে না!

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৬
বিএনপির জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ আর এগোবে না!

ঢাকা: বিএনপির জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ আর বেশি দূর এগোবে না বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের এই উদ্যোগ দৃশ্যমান হওয়ার পরিবর্তে ইতোমধ্যে অনকেটাই মুখ থুবরে পড়ার পর্যায়ে চলে গেছে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বারবার জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেও দৃশ্যমান কোনো সাড়া ফেলতে পারেননি। এখন পর্যন্ত একমাত্র আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনাও করতে পারেননি বিএনপি নেত্রী। অন্য দুই একটি দলের সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগ ছাড়া প্রক্রিয়া আর এগোয়নিও।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মতে, বিএনপির এই ঐক্যের প্রধান বাধা হয়ে আছে স্বাধীনতাবিরোধী ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত। এই দলটির সঙ্গে জোট অব্যাহত থাকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ন্যূনতম বিশ্বাসী কোনো দল/সংগঠন/ব্যক্তি বিএনপির ডাকে যেতে পারে না। আর বিএনপি কখনই জামায়াতকে ছাড়বে না। এর পরে আবার রয়েছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংকট।

তবে রাজপথের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির এই জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগের উপর দৃষ্টি রাখছে আওয়ামী লীগ। কারণ তাদের ঐক্যের মধ্যে ভবিষ্যৎ নির্বাচনের জোট গড়ার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকতে পারে বলেও আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন।

গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর জঙ্গি মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের পক্ষ থেকে এই ঐক্যের আহ্বান প্রত্যাখান করে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে খালেদার প্রতি পাল্টা আহ্বান জানানো হয়।

ঘোষণা অনুযায়ী বিএনপি ঐক্যের প্রক্রিয়া শুরু করে। প্রাথমিক তৎপরতা হিসেবে বিএনপির নেতারা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ড. কামালের গণফোরাম,  আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আ স ম আব্দুল রবের জাসদ (জেএসডি), বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা ও ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির (পিডিপি) সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে জানা গেছে। তবে সিপিবি ও বাসদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।

একমাত্র কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হয়। তবে সেখান থেকেও ইতিবাচক সাড়া আসেনি। উল্টো জামায়াত থাকলে এই ঐক্যর প্রক্রিয়ায় থাকবেন না বলে কাদের সিদ্দিকী সুম্পষ্ট জানিয়ে দিয়ে এসেছেন।

এদিকে এই পরিস্থিতিতে বিএনপির ঘরেই নতুন করে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব। সদ্য ঘোষিত নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। দলকে নিয়েই বড় ধরনের সংকটে পড়তে পারে বিএনপি। দলের অনেক প্রভাশালী নেতা নতুন কমিটিতে ভালো পদ বা তাদের মতে সম্মানজনক পদ না পাওয়ায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আবার কেউ কেউ হয়েছেন হতাশ। দলে যাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের একজন ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান স্থায়ী কমিটিতে যেতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি পদত্যাগও করতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এর রকম আরও অনেকেই আছেন বলে জানা যায়।

এই পরিস্থিতিতে দলীয় ঐক্য রক্ষা করে নিজেদের রাজনীতি নিয়ে এগোনোই বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। সেখানে জাতীয় ঐক্যের মতো এতো বড় এজেন্ডা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা বা সফলতার দিকে নিয়ে যাওয়া বিএনপির জন্য কল্পনাই হয়ে থাকবে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৬
এসকে/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।