ফেনী থেকে ফিরে: অফিস নেই, জোড়াতালি দিয়ে চলছে ফেনী জেলা বিএনপি। বর্তমানে এভাবেই ফেনী জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে বলে জানান বিএনপিকর্মী মোহাম্মদ উল্লাহ।
তিনি বলেন, ২০১৪-১৫ সালে আন্দোলন করার সময় মানুষ হত্যা ও অগ্নিসংযোগের কারণে সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মীরা
সরকারের রোশানলে পড়েন। বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে পুলিশী হয়রানির শিকার হন তারা। একই অবস্থা ফেনীতেও। এ কারণেই জেলা বিএনপি এখন চুপচাপ।
জেলার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সর্ম্পকে জানতে চাইলে ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান কমিটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ভিপি জয়নাল বলেন, সরকার নানাভাবে বিএনপিকে ধ্বংস করছে। মামলা-হামলা করে নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে রেখেছে সরকার। সভা-সমাবেশ করতে অনুমতি পাওয়া যায় না বলেই মাঠের রাজনীতিতে বিএনপি’র উপস্থিতি কম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপি’র এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, পলাতক ও জামিন নেওয়া নেতাদের মধ্যে সবাই এখন ঢাকা থাকছেন। জেলায় আসেন না। কর্মীদের খোজঁওখবরও নেন না তারা। এ কারণেও কর্মীরা এখন বিএনপি’র কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকছেন। আবার কেউ কেউ গ্রেফতার ও পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বিভিন্ন শহরে গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাকরি করছেন।
বিএনপি নেতারা জেলা শহরে এলেও কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। দু’-এক দিন থেকে আবার চলে যান। দলের ভুল সিদ্ধান্ত ও নেতাদের আত্মগোপনের কারণে জেলা বিএনপি’র কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বলে জানান জেলা বিএনপি’র কর্মী নাজমুল হোসেন।
তিনি বলেন, ৩০টি থেকে ১০০টি পর্যন্ত মামলা রয়েছে একেকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। তাদের সহযোগিতা করছে না কেন্দ্র। এ কারণে পুলিশ হয়রানি ও মামলা সমালাতে বিএনপি’র জেলার নেতা-কর্মীরা আর্থিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছেন।
অনেকে পিঠ বাঁচাতে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন বলে জানান ফুলগাজীর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এ কে এম মহিউদ্দিন। তিনি নিজেও বিএনপি করেছেন দীর্ঘদিন। চেয়ারম্যান ছিলেন ২০ বছর ধরে। অনেক ক্ষেভে-কষ্টে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন মাস দুয়েক আগে।
বিএনপি’র জেলার সিনিয়র নেতারা খোঁজ তো দূরের কথা, ভালো ব্যবহারটুকুও করেন না, বলেন এই জনপ্রতিনিধি।
রাজনৈতিকভাবে বিপদে থাকার পরেও নিজেদের আভ্যন্তরীণ কোন্দল কমেনি বলে জানান জেলা বিএনপি’র আর এক নেতা। তিনি তার নাম লিখতে বারণ করে বলেন, বর্তমানে ফেনীতে একাধিক গ্রুপ রয়েছে। এদের মধ্যে এক গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণ করেন বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য রেহেনা আক্তার রানু, একটি ভিপি জয়নাল, দাগনভূঞা নিয়ন্ত্রণ করেন শিল্পপতি আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছোট ভাই আকবর হোসেন, পরশুরাম ও ফুলগাজী নিয়ন্ত্রণ করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তালেব, সোনাগাজী নিয়ন্ত্রণ করেন জয়নাল আবেদীন বাবলু। নেতাদের মধ্যে জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো আলাচেনা হয় না বলে জানান এই নেতা।
রেহেনা আক্তার রানু বলেন, বিএনপিতে কোনো গ্রুপিং নেই। সরকারই বিএনপি ধংস করতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
জেলা বিএনপি’র একটি সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান বকুলের বিরুদ্ধে ৪৭টি, পৌর বিএনপি নেতা আলাল উদ্দিন আলালের বিরুদ্ধে ১৫টি, জেলা যুবদল নেতা হাবিবুল্লাহ মানিকের বিরুদ্ধে ৩৫টি, আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে ২৭টি, ছাত্রদল নেতা এস এম সালাউদ্দিন মামুনের বিরুদ্ধে ৩০টি, নইমউল্লাহ চৌধুরী বরাতের বিরুদ্ধে ৩৫টিসহ জেলা বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
জেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু তাহের বাংলানিউজকে বলেন, ফেনীতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনো গ্রুপিং নেই। এটা অপপ্রচার। দেশে কোনো গণতান্ত্রিক চর্চা নেই। একনায়কতন্ত্রের মাধ্যমে দেশ চলছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা রয়েছে। অনেকে এখনও জেল খাটছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৬
এমএস/এসএনএস