ঢাকা: সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ভারত নিজের দেশে যা করতে পারেনি, কেবলমাত্র ব্যবসার স্বার্থে বাংলাদেশে তা করছে।
বুধবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, ভারতের ‘ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন’ নামের যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যৌথভাবে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে, সেই একই প্রতিষ্ঠান ভারতের মধ্য প্রদেশের নরসিংহপুর জেলায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল। ভারত সরকার তা বাতিল করে দিয়েছে। নরসিংহপুর প্রকল্পটি ১০০০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব ছিল। অথচ রামপালে এই একই আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য দেওয়া হয়েছে ১৮৩৪ একর জমি।
তিনি বলেন, নরসিংহপুরের প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে প্রধানত: ৩টি কারণে: ক) জনবসতিপূর্ণ এলাকায় তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, খ) কৃষিজমিতে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যাবে না এবং গ) নর্মদা নদী থেকে ঘণ্টায় ৩২ কিউসেক পানি নেওয়া যাবে না।
নরসিংহপুরের সঙ্গে রামপালের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক) নরসিংহপুর জেলার আয়তন ৫১২৫.৫৫ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৮৭ জন। অন্যদিকে বাগেরহাট জেলার আয়তন ৩৯৫৯.১১ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব ৩৮২ জন। খ) নরসিংহপুরের জমি দ্বি-ফসলি, কিন্তু রামপালের জমি তিন ফসলি। গ) নর্মদা নদী থেকে ঘণ্টায় ৩২ কিউসেক পানি নেওয়া যাবে না বলে মধ্যপ্রদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অথচ নর্মদার চেয়েও ছোট পশুর নদী থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি ঘণ্টায় ১৪৪ কিউসেক পানি নেওয়া হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, ভারতে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আইনি বাধা আছে। অথচ সে দেশেরই একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তাদের নিজের দেশে যা করতে পারে না শুধুমাত্র ব্যবসার স্বার্থে বাংলাদেশে তা করছে। আর জনগণের প্রতি দ্বায়িত্বহীন এবং দেশের স্বার্থের প্রতি উদাসীন বাংলাদেশ সরকার তার অনুমতি দিয়েছে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ভারতের কর্নাটক রাজ্যের রাজীব গান্ধী ন্যাশনাল পার্কের ২০ কিলোমিটার দূরে ১ হাজার মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা জনগণের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ভারত সরকার বাতিল করতে বাধ্য হয়। বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে হওয়ায় ভারত সরকার তামিলনাড়ু রাজ্যের একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব বাতিল করেছে ২০১২ সালে। অন্যদিকে ভারতের সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের এক গবেষণায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্বপ্রাপ্ত ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনকে ভারতের সবচেয়ে দূষণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।
জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহম্মদ ইবরাহিম, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেম ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মণি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের একাংশের সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাঈদ আহমেদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৬
এজেড/এএসআর
** ‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশ ও গণবিরোধী’