ময়মনসিংহ: নাশকতা বা বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় অনেক দিন ধরেই ময়মনসিংহে রাজপথে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছে না বিরোধীদলের ‘সম্মান’ হারানো বিএনপি।
দলীয় ঐক্য বা আভ্যন্তরীণ সংহতিও সেই কবে থেকেই প্রশ্নের মুখে।
এমন নাজুক সাংগঠনিক পরিস্থিতিতে আবারও নতুন করে এক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে দলটিতে। আর এ বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে ০১ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) দলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে।
নেতা-কর্মীদের ঠিকানা দলীয় কার্যালয়ে উৎসব আমেজে এক পক্ষের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন আর বাড়ির আঙিনায় আরেক পক্ষের ‘ব্যানার’ সর্বস্ব সভা-র্যালি এ বিতর্কের পারদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এ নিয়ে দলটির জেলা শাখার শীর্ষ নেতারা নিজেদের শরীরেই দোষারোপের ‘কলঙ্ক’ তিলক লেপ্টে দিচ্ছেন। নিজেদের কঠিন সময়ে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ নামক নেতারা দল ধ্বংসের নানা থেরাপি প্রয়োগ করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।
ফলে এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলটির ভাগ্যে ‘হরিষে বিষাদ’ ডেকে এনেছে বলেও মনে করছেন তৃণমূলের কর্মীরা।
সূত্র জানায়, প্রায় ৬ বছর আগে কাউন্সিলে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও নব্বইয়ের দশকে মাঠ কাঁপনো ছাত্রনেতা ওয়াহাব আকন্দ।
শুরুতে দু’জনের সম্পর্ক ‘মধুর’ হলেও বিপত্তি ঘটে জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব নির্ধারণের বেলায়। টাকার জোরে বেশিরভাগ কমিটিই নিজের কব্জায় নেন মোশাররফ।
এরপরও বিভিন্ন সময়ে এ দু’নেতা ‘গাঁটছড়া’ বেধে দলীয় কর্মসূচি পালন করলেও হঠাৎ করেই বেঁকে বসেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোশাররফ।
নগরীর হরিকিশোর রায় রোডের দলীয় কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ঘটা করে পালন করতে জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে একত্রেই অবহিতকরণ পত্র নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের জেলা কমিটির নেতারা।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করতেই আমরা দু’জনই ওই পত্রে যৌথ স্বাক্ষর করেছিলাম। দলীয় কার্যালয়ই ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করারও কথা ছিলো সভাপতির।
অথচ ৮৭ সালের পর দলে ভেড়া ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনেই তিনি দলীয় কার্যালয় ছেড়ে বাড়ির দুয়ারে আলাদাভাবে ‘ব্যানার’ সর্বস্ব সভা করেছেন। এমন কর্মকাণ্ড করে তিনি দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন- যোগ করেন ওয়াহাব আকন্দ।
দলীয় সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর মাহমুদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, মোশাররফ সাহেবের কোনো দোষ নেই। সিটি বিএনপির এক নেতা এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের গুটিকয়েক নেতা তাকে ব্যবহার ও গ্রুপিং করছেন। এসব ষড়যন্ত্রকারীদের জন্যই দল সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না।
সূত্র মতে, দলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ওয়াহাব আকন্দের উদ্যোগে আলোকসজ্জা করা হয় বিএনপির কার্যালয়ে। ওইদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত র্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে মেতে থাকেন নেতা-কর্মীরা।
কিন্তু সেদিন বিকেলে মাত্র ২শ’ গজ দূরে বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গায় কয়েকজন নেতাকে নিয়ে সভা করেন দলীয় চেয়ারপারসনের এ উপদেষ্টা।
কেন এ সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা বিএনপি সভাপতি এ কে এম মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, জায়গার অভাবে নেতা-কর্মীরা আমার বাসায় চলে এসেছিল। অফিসে বসার মতো জায়গা ছিলো না। ফলে আমিও সেখানে যাইনি। যথেষ্ট লোক নিয়েই আমার বাসায় দলীয় কর্মসূচি পালন করেছি। আর অবহিতকরণ পত্র দিতেও আমি এসপির কাছে যাইনি।
দলীয় কার্যালয় না বাড়ির দুয়ার কোথায় কর্মসূচি পালন সঠিক এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাসায় প্রোগ্রাম করা যাবে না এমন কোনো বিধি নিষেধ নেই। এটা নিয়ে কোনো বিতর্কও নেই।
সভাপতির এমন বক্তব্যের বিষয়ে ওয়াহাব আকন্দ বলেন, কথা বলে বেমালুম ভুলে যাওয়া এবং মিথ্যা বলার রেকর্ড তার অতীতেও ছিলো, এখনো আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৬
এমএএএম/জিপি/এসএইচ